যুক্তরাষ্ট্রে হঠাৎ ভূমিকম্পের ভুল সতর্কবার্তা

ভূমিকম্পের সময় পাঠানো সতর্কবার্তাগুগল

৪ ডিসেম্বর ২০২৫-এর বিকেল। যুক্তরাষ্ট্রের নেভাদা আর ক্যালিফোর্নিয়ার বাসিন্দারা হঠাৎ আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। সাধারণ দিনের মতোই ছিল দিনটা। তবে হুট করে সবার ফোনে একটা বার্তা আসে। যেখানে লেখা, ‘ড্রপ, কভার, হোল্ড অন’। মানে এখনই নিচু হয়ে মাথা রক্ষা করুন, বড় ভূমিকম্প আসছে।

বার্তায় লেখা, নেভাদার ডেটন শহরের কাছে ৫ দশমিক ৯ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। কেউ কেউ ভয় পেয়ে টেবিলের নিচে ঢুকে পড়েন। সান ফ্রান্সিসকোর মতো দূরের শহরেও মানুষ এ সতর্কবার্তা পেয়ে হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে পড়েন। কিন্তু কিছুক্ষণ পর সত্যটা জানা গেল, কোনো ভূমিকম্প হয়নি।

ডেটন শহরের পুলিশ, শেরিফ দপ্তর, জরুরি ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ, সবার কাছে ফোন আসা শুরু করল। শহরের আতঙ্কিত মানুষ ফোন করে বলতে থাকলেন, ‘আমরা কোনো কম্পন অনুভব করিনি। কোনো ভবনে ক্ষতি হয়নি। কোনো কিছু ভাঙেনি, কাঁপুনি বা শব্দ কিছুই টের পাওয়া যায়নি।’

আরও পড়ুন

৫ দশমিক ৯ মাত্রার ভূমিকম্প হলে সাধারণত জানালা দুলে ওঠে। বাসার জিনিসপত্র নড়ে যায়। মানুষ স্পষ্ট কাঁপুনি টের পায়। অথচ এখানে সবকিছু ছিল স্বাভাবিক। তখনই নিশ্চিত হওয়া গেল, এটি একটি সম্পূর্ণ ভুল সতর্কবার্তা।

ন্যাশনাল আর্থকোয়েক ইনফরমেশন সেন্টারের বিশেষজ্ঞ ইয়ারিব আলতাওয়িল বলেছেন, ‘আমার মনে পড়ে না কখনো এভাবে পুরোপুরি ভুল ভূমিকম্প সতর্কতা পাঠানো হয়েছে। এটা নতুন। বিরল ঘটনা।’

বার্কলি সাইসমোলজিক্যাল ল্যাবের অ্যাঞ্জি লাক্স আরও নির্দিষ্ট করে বলেন, এই ভুলের পেছনে থাকতে পারে ‘নয়েজ’ বা এমন কিছু শক্তিশালী কম্পন, যা ভূমিকম্প না হওয়ার পরও সেন্সরগুলোকে ভুল বার্তা দিয়েছে। এটি হতে পারে বড় কোনো বিস্ফোরণের শব্দ, সড়ক নির্মাণের ভারী যন্ত্রপাতির কম্পন, খুব ভারী ট্রাক বা মেশিনারিজের চলাচল। এ ছাড়া প্রাকৃতিক উৎস থেকেও সংকেত আসতে পারে। ঝোড়ো বাতাস বা সমুদ্রের প্রচণ্ড ঢেউয়ের চাপ থেকে সেন্সর ভুল তথ্য সংগ্রহ করতে পারে।

আরও পড়ুন

এগুলোর সব মিলে কখনো কখনো স্বয়ংক্রিয় ভূমিকম্প শনাক্তকরণ ব্যবস্থাকে বিভ্রান্ত করতে পারে। কিন্তু এভাবে বিস্তৃত জায়গাজুড়ে ভুল সতর্কবার্তা যাওয়ার ঘটনা এবারই প্রথম।

ভুল সতর্কবার্তার উৎস ছিল ‘মাইশেক’ নামে একটি অ্যাপ, যা সাধারণত সঠিক তথ্য দ্রুত পাঠানোর জন্য পরিচিত। অ্যাপটিই জানিয়েছিল, ভূমিকম্পের মাত্রা ৫ দশমিক ৯। যথেষ্ট বড়সড় ভূমিকম্প। খবর ছড়িয়ে পড়তেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আতঙ্ক ছড়াতে দেখা গেছে। মানুষ প্রশ্ন করেছে, প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।

স্বয়ংক্রিয় সতর্কতা ব্যবস্থাগুলো তৈরি হয়েছে মানুষের জীবন রক্ষার জন্য। তাই সতর্কবার্তা এলে আমাদের সঙ্গে সঙ্গে সতর্ক হওয়া উচিত।

আরও পড়ুন