ক্যালিফোর্নিয়ায় কাঠবিড়ালি কেন মাংসাশী হয়ে উঠেছে
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার সবুজ বনভূমি আর শহরের পার্কগুলো বেশ সাজানো। এখানে সাধারণত কাঠবিড়ালিদের বাদাম কুড়োতে বা গাছ থেকে ফল খেতে দেখা যেত। কাঠবিড়ালিকে সবাই নিরীহ ও তৃণভোজী প্রাণী হিসেবেই জানে। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরে কিছু পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা বিজ্ঞানীদের নতুন করে ভাবাচ্ছে এই প্রাণীদের নিয়ে। সেখানকার কাঠবিড়ালিগুলো হয়ে উঠেছে মাংসাশী শিকারি।
কাঠবিড়ালিদের আমরা সাধারণত নানা রকম বীজ আর বাদাম খেতে দেখি। কিন্তু ক্যালিফোর্নিয়ার এক পার্কে এই ধারণা একেবারেই পাল্টে গেছে। সেখানে দেখা গেছে, কাঠবিড়ালি রীতিমতো মাংসাশী শিকারিতে পরিণত হয়েছে। ক্যালিফোর্নিয়ার কন্ট্রা কোস্টা কাউন্টির শহরের ব্রায়োনেস রিজিওনাল পার্কে একদল গবেষক ক্যামেরায় এই অদ্ভুত ঘটনা দেখতে পেয়েছেন। জার্নাল অব ইথোলজি-তে প্রকাশিত এক নতুন গবেষণায় তাঁরা এই মাংসাশী কাঠবিড়ালির কথা জানিয়েছেন।
উইসকনসিন-ইউ ক্লেয়ার বিশ্ববিদ্যালয় ও ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা একটি দীর্ঘমেয়াদি গবেষণার অংশ হিসেবে ১২ বছর ধরে ব্রায়োনেস রিজিওনাল পার্কে কাঠবিড়ালিদের ওপর নজর রেখেছেন। গবেষণায় অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা জানান, এত লম্বা সময় ধরে পর্যবেক্ষণের পর ২০২৪ সালের গ্রীষ্মে তাঁরা যা দেখেছেন, এর মতো কিছু আগে কখনো দেখেননি।
এই গবেষণার প্রধান লেখক হলেন জেনিফার স্মিথ। তিনি উইসকনসিন-ইউ ক্লেয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞানের অধ্যাপক। তিনি ‘টিম স্কুইরেল’ নামের এই পার্কের গবেষণা দলের সহনেতৃত্ব দিচ্ছেন। যখন তাঁর দুই ছাত্র প্রথম তাঁকে এই ইঁদুর হত্যাকারী কাঠবিড়ালির ভিডিও দেখান, তখন তিনি কী বলবেন বুঝতে পারছিলেন না।
স্মিথ এ বিষয়ে জানান, ‘আমি হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম। অবিশ্বাস্য লেগেছিল। সত্যি বলতে, কী ঘটছে সে সম্পর্কে আরও জানতে খুব আগ্রহী হয়ে উঠেছিলাম।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রথমেই আমি জানতে চেয়েছিলাম যে কাঠবিড়ালিরা কি সত্যিই এই এলাকায় ইঁদুর শিকার করছে? তাই টিম স্কুইরেলের কাজ হয়ে দাঁড়ায় ডিজিটাল ছবি ব্যবহার করে মাংসাশী কাঠবিড়ালিগুলোর শিকার ধরা ও খাওয়ার পুরো ঘটনা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত রেকর্ড করা।’
কাঠবিড়ালিরা সাধারণত খাবার বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে বেশ সহজে পরিবর্তনশীল। যে খাবার পাওয়া যাচ্ছে, তারা সেটাই খায়। মূলত ক্যালিফোর্নিয়ার কাঠবিড়ালিরা হলো ‘গ্রাউন্ড স্কুইরেল’ বা মাটিতে চড়া কাঠবিড়ালি। এদের বৈজ্ঞানিক নাম Otospermophilus beecheyi। এরা বেশির ভাগই গাছপালার পাতা খায়। তবে গবেষণায় দেখা গেছে যে এরা পোকামাকড়, ডিম, পাখির বাচ্চা এমনকি নিজেদের প্রজাতির ছোট বাচ্চাও খায়। কিন্তু, প্রাপ্তবয়স্ক স্তন্যপায়ী প্রাণী শিকার করে খাওয়াটা কাঠবিড়ালির আচরণে একটা বড় ও লক্ষণীয় পরিবর্তন।
গবেষক দলটি ২০২৪ সালের ১০ জুন থেকে ৩০ জুলাইয়ের মধ্যে প্রায় প্রতিদিনই কাঠবিড়ালিদের ক্যালিফোর্নিয়া ভোলস নামের একধরনের ছোট ইঁদুর শিকার করতে দেখেছে। এতে বোঝা যায় যে এ ধরনের আচরণ বেশ স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে। স্মিথ বলেন, সাধারণত একটি কাঠবিড়ালি ভোলসকে তাড়া করে ঘাড়ে বা মাথায় কামড় দেয়।
স্মিথ আরও বলেন, সব শিকার সফল না হলেও একবার ধরতে পারলে কাঠবিড়ালিরা সাধারণত ভোলসগুলোর মাথা, হাড়সহ খেতে শুরু করে। এরপর তাদের শরীর থেকে মাংস টেনে বের করে খায়।
কিছু ক্ষেত্রে দেখা গেছে, একটি কাঠবিড়ালি যখন একটি ভোলস ধরত, তখন আরেকটি কাঠবিড়ালি এসে সেই শিকার ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করত। গবেষণার লেখকেরা বলছেন, মাংস নিয়ে কাড়াকাড়ি কাঠবিড়ালিদের মধ্যে আক্রমণাত্মক আচরণ বাড়িয়ে দেয়।
গবেষকেরা জানিয়েছেন, কাঠবিড়ালিদের এ ধরনের শিকারের কারণ মূলত স্থানীয় ভোলস নামের ছোট ইঁদুরের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া। ভোলসের সংখ্যা সব সময় এক রকম থাকে না। এরা তিন থেকে পাঁচ বছর পরপর বাড়ে ও কমে। ২০২৪ সালে ক্যালিফোর্নিয়ায় ভোলসের সংখ্যা সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায় যা গত কয়েক বছরের তুলনায় অনেক বেশি। এমনকি গত দশ বছরের গড় সংখ্যার চেয়ে প্রায় সাত গুণ বেশি।
গবেষকেরা কাঠবিড়ালিদের এই নতুন শিকারের আচরণকে ভোলসের এই হঠাৎ বেড়ে যাওয়া সংখ্যার সঙ্গেই যুক্ত করেছেন। গবেষক স্মিথ বলেছেন, পরের বছর হয়তো ভোলসের সংখ্যা এত বেশি থাকবে না। কাজেই কাঠবিড়ালিরা আবার এদের পুরোনো খাবার অর্থাৎ বীজ–ডালপালার দিকে ফিরবে।
এই শিকারের আচরণের প্রভাব আরও ভালোভাবে বোঝার জন্য, ‘টিম স্কুইরেল’ এ বছরও কাঠবিড়ালিদের ওপর পর্যবেক্ষণ চালিয়ে যাবে।
সূত্র: লাইভ সায়েন্স, সিএনএন এবং ডিসকভার ওয়াইল্ডলাইফ