শহরে কেন রংধনু কম দেখা যায়?

শহরে রংধনুছবি: ইয়াকূব আলী

শহরের সঙ্গে প্রকৃতির যোগাযোগটা একটু কমই। তবে শহরেও রোদ ওঠে, বৃষ্টিতে ডুবে যায় পিচঢালা পথ। বর্ষার প্রকৃতিকে তুমি শহরে বসেও অনেকটা অনুভব করতে পারবে। কিন্তু শহরে ভেজা ভেজা আবহাওয়ায় চমৎকার একখানা রংধনুর দেখা পাওয়া মুশকিল। তুমি যদি শহরের বাসিন্দা হয়ে থাকো, এমনটা হতে পারে যে এই বর্ষায় তুমি একবারও রংধনুর দেখা পাওনি। আজ শ্রাবণ মাসের শেষদিন। মানে আজই শেষ হয়ে যাচ্ছে বর্ষাকাল। শরতেও অবশ্য বৃষ্টি হয়। তবে সামনের বৃষ্টিদিনগুলোতেও তুমি রংধনুর দেখা না-ও পেতে পারো তোমার শহরের আকাশে। এই যে শহরে রংধনু খুব একটা দেখা যায় না, এর কারণ কী? কখনো ভেবে দেখেছো?

এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হলে প্রথমে জানতে হবে রংধনু আমরা কেন দেখি। তোমরা অনেকেই হয়তো কারণটা জানো। তবু একবার মনে করিয়ে দিই। রংধনু কোনো জিনিস বা বস্তু নয়। এটি কেবলই আলোর খেলা। বিজ্ঞানের ভাষায় যাকে বলা হয় অপটিক্যাল ইলিউশন। সাধারণত বৃষ্টির পর রংধনু দেখি আমরা। বৃষ্টির পর বাতাসে ভেসে থাকে পানির কণা। এই পানির কণার ভেতর দিয়ে যখন সূর্যের আলো যায়, তখন দুটি বিশেষ ঘটনা ঘটার কারণে রংধনু দেখতে পাই আমরা। এই দুই ঘটনার একটি হলো আলোর প্রতিফলন, আরেকটি হলো আলোর প্রতিসরণ।

আরও পড়ুন

আলোর খেলায় যা হয়

বাতাসের মধ্যে আলো যেভাবে চলে, পানির কণার ভেতর তো আর সেভাবে চলতে পারে না। পানির কণার ভেতর ঢোকার পর আলোর গতিপথ বদলে খানিকটা বেঁকে যায়। এই বেঁকে যাওয়ার ঘটনাটির নামই প্রতিসরণ। প্রতিসরণের পরে আবার আলো অনেকটা উল্টো দিকে ছিটকে আসার মতো একটা ব্যাপার ঘটে। এই ছিটকে আসাই হলো আলোর প্রতিফলন। তোমরা তো জানো, আলো একধরনের তরঙ্গ। আলোর নানান রং। একেক রঙের আলোর তরঙ্গের দৈর্ঘ্য একেক রকম হয়। বহু রঙের রশ্মি থাকে বলেই সূর্যের আলোটাকে সাদা দেখায়। কিন্তু পানির কণায় আলোর যখন প্রতিফলন হয়, তখন একেক তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলো একেক কোণ সৃষ্টি করে প্রতিফলিত হয়। এভাবেই সাতটি রঙের রশ্মি আলাদা হয়ে যায়। আলোর রশ্মি পানির কণা থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময় আবার বেঁকে যেতে থাকে, অর্থাৎ ঘটতে থাকে আলোর প্রতিসরণ। সেটিও বিভিন্ন কোণে। এভাবেই দেখা যায় আলাদা আলাদা রঙের রশ্মি, সৃষ্টি হয় রংধনু।

আরও পড়ুন

তবে আরও শর্ত আছে

আলোর এই খেলায় তুমি কেবল তখনই রংধনু দেখতে পাবে, যদি রংধনু সৃষ্টির সব শর্ত পূরণ হয়। এর মধ্যে একটা গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হলো সূর্যের অবস্থান। রংধনু দেখতে হলে সূর্যের অবস্থান এমন হতে হবে, যাতে সূর্যের আলো পানির কণার ওপর ৪২ ডিগ্রি কোণে পড়ে। ভেবে দেখো, শহরের উঁচু উঁচু অট্টালিকার মাঝে সূর্যের আলো বেশির ভাগ সময় বাতাসে ভেসে থাকা পানির কণার ওপর ঠিক এই কোণে পড়ে না। তাই রংধনুও দেখা যায় না। একপশলা বৃষ্টির পরেও অনেক সময় শহরের বাতাস পরিচ্ছন্ন হয় না। আর দূষিত বাতাসে আলোর রশ্মি নির্দিষ্ট পথে যেতে যেতে খানিকটা ছড়িয়েও পড়তে পারে। এ কারণেও রংধনুর দেখা সেভাবে না-ও মিলতে পারে শহরে। উঁচু ভবনের কারণে শহরের বাসিন্দাদের দৃষ্টিসীমাও প্রসারিত আর উন্মুক্ত থাকে না। সব মিলিয়ে তাই রংধনু দেখার ভাগ্য কমই হয় তাঁদের।

রংধনুর আরও রূপ

কখনো কখনো ঝরনা, সমুদ্র আর কুয়াশার মধ্যে থাকা জলের কণাতেও ছোট্ট রংধনু দেখা যেতে পারে। তবে শহরের প্রাণকেন্দ্রে না থাকে ঝরনা, না থাকে সমুদ্র। আর কুয়াশামাখা সময়ে সূর্যের রশ্মি শহরের উঁচু উঁচু অট্টালিকার দেয়াল অতিক্রম করে ঠিকঠাক কোণে পৌঁছতেও পারে না খুব একটা। তাই বর্ষা পেরিয়ে বছরের অন্য মৌসুমেও নিষ্প্রাণ কোনো শহরে রংধনুর দেখা মেলে না বললেই চলে।

সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক

আরও পড়ুন