সাদা, কালো, ধূসর ও সিলভার—চারটি রঙের গাড়ি কেন এত জনপ্রিয়
রাস্তার ট্রাফিক সিগন্যালে দাঁড়িয়ে যখন একের পর এক গাড়ি চলে যেতে দেখি, তখন নানা রঙের গাড়ি চোখে পড়ে। কিন্তু একটু খেয়াল করলেই দেখা যায়, সাদা, কালো, ধূসর ও সিলভার রঙের গাড়ির সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি। বিশ্বজুড়ে কীভাবে গাড়ির জন্য এই চারটি রং এত জনপ্রিয় হয়ে উঠল?
গাড়ি ভালোবাসেন—এমন মানুষেরা প্রায়ই অভিযোগ করেন, আজকাল সব গাড়ি দেখতে প্রায় একই রকম মনে হয়। এর কারণ হিসেবে তাঁরা কয়েকটি বিষয়কে দায়ী করেন। যেমন ক্রসওভার গাড়ির জনপ্রিয়তা, জ্বালানি সাশ্রয়ের জন্য গাড়িকে যথাসম্ভব অ্যারোডায়নামিক বানানোর প্রয়োজনীয়তা এবং নিরাপত্তার নানা ফিচার ও প্রযুক্তির চাহিদা। এ সব কারণে শুধু গাড়ির নকশাই নয়, গাড়ির রঙের ক্ষেত্রেও একধরনের একঘেয়েমি চলে এসেছে।
বিশ্বজুড়ে রাস্তায় চলাচলকারী বেশির ভাগ গাড়িই সাদা, কালো, ধূসর ও সিলভার—এই কয়েকটি অ্যাক্রোমেটিক রং দেখা যায়। অ্যাক্রোমেটিক শব্দের আক্ষরিক অর্থ হলো ‘রং ছাড়া’। যখন অ্যাক্রোমেটিক রঙের কথা বলা হয়, তখন এটি মূলত সেসব রংকে বোঝায়, যেখানে কোনো উজ্জ্বল বা গাঢ় রঙের আভা থাকে না। এর মধ্যে রয়েছে কালো, ধূসর ও সিলভারের বিভিন্ন শেড। এই রংগুলোকে যেকোনো কিছুর সঙ্গে সহজে মিশে যেতে পারে।
কোটিং সংস্থা বিএএসএফের ২০১৯ সালের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের ২৯ শতাংশ গাড়ি সাদা রঙের। কালো, ধূসর এবং সিলভার রঙের মিলে মোট গাড়ির আরও ৩৯ শতাংশ। এর অর্থ হলো, প্রায় ৮০ শতাংশ গাড়িই অ্যাক্রোমেটিক রঙের করা হয়। জনপ্রিয়তার দিক থেকে এর পরেই আছে নীল; যা প্রায় ৯ শতাংশ এবং লাল ৭ শতাংশ গাড়িতে করা হয়। ১ শতাংশ গাড়ি হলুদ রঙের।
তবে প্রশ্ন হলো, কেন এই সাদা, কালো, ধূসর ও সিলভার—এই চারটি রঙের গাড়িই এত জনপ্রিয়? এর পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে। গাড়ির ডিলাররা সাধারণত এই রংগুলোর গাড়ি বেশি করে রাখেন। কারণ, এগুলো খুব সহজে বিক্রি হয়ে যায়। তাই অন্য রঙের গাড়ির জোগান কম থাকে। ক্রেতারাও অনেক সময় ভাবেন যে যদি তাঁরা খুব উজ্জ্বল বা অন্য রকম রঙের গাড়ি কেনেন, তাহলে পরে বিক্রি করার সময় হয়তো দাম কমে যেতে পারে। তাই এই সাধারণ রং বেছে নিয়ে তাঁরা ক্ষতির ঝুঁকি কমাতে চান।
কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, সাদা ও হালকা রঙের গাড়ি দিনের আলোতে বা রাতেও অপেক্ষাকৃত বেশি দৃশ্যমান থাকে। এর ফলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি কিছুটা কমতে পারে। কালো বা গাঢ় রঙের গাড়ি কম দৃশ্যমান হওয়ায় দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। সাদা রঙের গাড়িতে ছোটখাটো ময়লা বা ধুলা তেমন চোখে পড়ে না। কালো রঙের গাড়িতে খুব দ্রুত ময়লা বা স্ক্র্যাচ দেখা যায়, যা নিয়মিত পরিষ্কারের প্রয়োজন হয়। ধূসর এবং সিলভার রঙের গাড়িও ময়লা বা হালকা স্ক্র্যাচ লুকানোর ক্ষেত্রে বেশ কাজে আসে।
সাদা ও হালকা রঙের গাড়ি সূর্যের তাপ কম শোষণ করে, ফলে গরমের দিনে গাড়ির ভেতর তুলনামূলকভাবে ঠান্ডা থাকে। কালো বা গাঢ় রঙের গাড়ি সূর্যের তাপ বেশি শোষণ করে, যা গাড়ির ভেতরের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দেয় এবং এসি ব্যবহারের প্রয়োজনও বাড়িয়ে তোলে।
যদিও পরিসংখ্যান বলে যে এই চারটি রং প্রধান, তবে রং প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলো দাবি করে যে আজকের অ্যাক্রোমেটিক রং আগের চেয়ে অনেক বেশি সূক্ষ্ম ও বৈচিত্র্যময়। সাদা মানে শুধু সাদা নয়, একইভাবে কালো, ধূসর বা রুপালিও একরকম নয়। রঙের মিশ্রণে বিভিন্ন উপাদান, যেমন ধাতব ফ্লেক, কাচের টুকরা যোগ করে রঙে ভিন্নতা আনা হয়। রঙের শেড পরিবর্তন করে গাড়িকে আধুনিক ও বিলাসবহুল দেখানোর চেষ্টা করা হয়। এই সূক্ষ্ম পরিবর্তনগুলো ক্রেতাদের ধারণার ওপর বড় প্রভাব ফেলে।
গাড়ি নির্মাতারা প্রায়ই তাদের গাড়ির জন্য ঠিক কেমন রং খুঁজছেন, সে বিষয়ে খুব নির্দিষ্ট থাকেন। কারণ, ক্রেতারা গাড়ি কেনার সময় প্রথমে যে জিনিসটি লক্ষ করেন, তা হলো গাড়ির রং। তাই জনপ্রিয়তা, ব্যবহারিক সুবিধা এবং আধুনিক ডিজাইনের চাহিদা—এই সবকিছুই গাড়ির রঙের পছন্দের ওপর প্রভাব ফেলে।
সূত্র: সিএনবিসি, ফোবস