১২ বছরের আরলো টেইলর যেভাবে ম্যাথ জিনিয়াস হয়ে উঠল
আরলো টেইলরের বয়স মাত্র ১২ বছর। এ বয়সেই সে পড়ছে অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অব নিউ ইংল্যান্ডের গণিত বিভাগে। অনলাইনে ভর্তি হয়ে দূর থেকে করছে বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা। কীভাবে সে এ পর্যন্ত এল, তা নিয়েই এই লেখা।
আরলোর মতে, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া তার জন্য মজার অভিজ্ঞতা। সেমিস্টারের শেষে পড়ার চাপ কিছুটা বাড়ে। কিন্তু তার কাছে তেমন কঠিন লাগে না। যেহেতু সে ক্যাম্পাসে যায় না, তাই স্কুলের ক্লাসে বসেই নিজের ইউনিভার্সিটির কাজগুলো করে। তার কাছে এটা স্কুলের অন্যান্য কাজের মতোই। স্কুলের পড়াশোনার চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া আরও মজার, আরও চ্যালেঞ্জিং।
গণিতে আরলোর প্রিয় মাল্টিভ্যারিয়েবল ক্যালকুলাস, ডাবল ইন্টেগ্রাল, পার্শিয়াল ডেরিভেটিভস, ডিরেকশনাল ডেরিভেটিভস থেকে শুরু করে স্টোকস থিওরেম।
আরলোকে ফিউচারাম ম্যাগাজিন থেকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, গণিত কী কাজে লাগে? আরলো মজা করে বলেছে, ‘গণিত সম্পূর্ণ অকাজের…’ তারপর অবশ্য বলেছে, গণিতের মাধ্যমে গভীর চিন্তা করার দক্ষতা জীবনের অনেক ক্ষেত্রে সাহায্য করে। গণিতের ইতিহাস জেনে মানুষের জ্ঞানের বিবর্তন হয়েছে। সংস্কৃতি নিয়েও মানুষ অনেক কিছু শিখেছে।
আরলোকে জিজ্ঞেস করা হয়েছে, বড় হয়ে সে কী হবে? আরলোর লক্ষ্য স্থির। সে একজন গণিতবিদ হতে চায়। ছোট থেকে সে নামকরা গণিতবিদদের বই পড়ে বড় হয়েছে। তাঁরাই আরলোর নায়ক।
গণিত সবার জন্য সহজ নয়, কথাটা আরলো জানে। তাই গণিত নিয়ে তার পরামর্শ হলো, ‘চিন্তা করবে না। সবাই সবকিছুতে ভালো হতে পারে না। গণিতে দক্ষতা না থাকলেও নিজের স্বপ্ন তোমাকে থামাতে পারবে না। আর গণিতে পারদর্শী হতে হলে চর্চাই সবচেয়ে বড় শক্তি।’
অবসরে আরলো ইলেকট্রিক গিটার বাজায়। তার পছন্দ গ্রাঞ্জ আর অল্টারনেটিভ রক। অফস্প্রিং, মেটালিকা, হেলমেট, সামথিং ফর কেট তার প্রিয় ব্যান্ড।
আরলোর মা জুলিয়া টেইলর মনে করেন, পেছন ফিরে তাকালে তিনি এখন বুঝতে পারেন, ছোটবেলা থেকেই আরলোর বুদ্ধিমত্তা অন্যদের থেকে আলাদা। কিন্তু তখন তিনি ভাবতে পারেননি যে তাঁর শিশুর বিকাশ অন্যদের মতো নয়।
বাড়িতে আরলো ছাড়া আর কেউ গণিত ভালোবাসে না। তাই আরলোর আগ্রহ ধরে রাখতে পরিবারকে আলাদা করে উদ্যোগ নিতে হয়েছে। নানা গণিতের বই, দাদুর সঙ্গে নিয়মিত স্কাইপে ব্যবহার করে গণিত নিয়ে আলোচনা, ইউটিউবের গণিত চ্যানেল, সবকিছু আরলোর শেখার পথ খুলে দেয়।
সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল স্কুলে আরলোর জন্য যথেষ্ট চ্যালেঞ্জিং কাজ দেওয়া। গণিত-বিজ্ঞান ক্লাসে আগ্রহ না পেলে আরলো অন্যান্য বিষয়েও আগ্রহ হারিয়ে ফেলত। তাই স্কুল আর পরিবার মিলে আরলোর জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করেছিল। আরলো গণিত ও বিজ্ঞান শিখত অনলাইনে। অন্যান্য বিষয় সহপাঠীদের সঙ্গে।
বেন ম্যাককালক আরলোর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। তিনি বলেন, আরলো ছোটবেলা থেকেই গভীর কৌতূহলী। বিজ্ঞান আর গণিত তার কাছে খেলার মতো।
স্কুলে শিক্ষক ও অভিভাবকদের যোগাযোগ, বিভিন্ন মূল্যায়ন ও বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মিলিয়ে সবাই বুঝতে পারেন যে আরলোকে আলাদা করে সমর্থন করা জরুরি। না হলে সে আগ্রহ হারাতে পারে।
চতুর্থ শ্রেণিতে অন্য শিশুরা যখন ঘড়ির কাঁটা দেখে সময় বুঝতে শিখছে, তখন আরলো শিখেছে গতিবেগ হিসাব করা। পঞ্চম শ্রেণিতে সে দশম শ্রেণির গণিত শিখেছে। ষষ্ঠ শ্রেণি পাস করতে করতে দ্বাদশ শ্রেণির গণিত আর বিজ্ঞান শিখে ফেলেছে।
রোবোটিকস, কোডিং, বিজ্ঞান প্রতিযোগিতা, সব জায়গাতেই আরলো ভালো করেছে। আলো, প্রতিসরণ, তরঙ্গদৈর্ঘ্য—এসব নিয়ে গবেষণা করে সে পেয়েছে অস্ট্রেলিয়ান ইনস্টিটিউট অব ফিজিকসের পুরস্কার।
আরলো এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিতের প্রথম বর্ষ শেষ করেছে। ‘সবচেয়ে দক্ষ ফলাফল’ করার জন্য পুরস্কারও পেয়েছে। মা, শিক্ষক ও অন্যদের সাহায্য পেয়ে আরলো স্বপ্ন পূরণের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
সূত্র: ফিউচারাম ম্যাগাজিন