ফ্র্যাঙ্ক ক্যাপ্রিওকে কেন সবাই হৃদয়বান বিচারক বলছেন
মারা গেছেন আমেরিকান সেলিব্রিটি বিচারক ও সোশ্যাল মিডিয়া তারকা ফ্রাঙ্ক ক্যাপ্রিও। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর। গত ২০ আগস্ট বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের রোড আইল্যান্ডে তিনি মারা যান। তাঁর ছেলে ডেভিড ক্যাপ্রিও বুধবার একটি সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে খবরটি নিশ্চিত করেছেন। প্যানক্রিয়েটিক ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার পর বিচারক ফ্রাঙ্ক ক্যাপ্রিওর মৃত্যুর খবরটি তাঁর অফিশিয়াল ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে জানানো হয়েছে।
বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে তাঁর আদালত কক্ষের বিচার কাজের ভিডিওগুলো প্রকাশ হওয়ার পর তিনি বিশ্বজুড়ে পরিচিতি পান। তাঁর দয়া, সহমর্মিতা ও হাস্যরস দেখে মুগ্ধ হয়ে সবাই তাঁর নাম দেন ‘বিশ্বের সবচেয়ে হৃদয়বান বিচারক’। বিচারক ফ্র্যাঙ্ক ক্যাপ্রিও বিচারাধীন ব্যক্তিদের ব্যক্তিগত পরিস্থিতি বিবেচনা করে রায় দেওয়ার জন্য কঠোর শাস্তির পরিবর্তে তিনি প্রায়শই আর্থিক জরিমানা মওকুফ করে দিতেন। সেজন্য তিনি জনগণের কাছে এত প্রিয় হয়ে উঠেন।
ফ্র্যাঙ্ক ক্যাপ্রিওর বিচার কাজ নিয়ে তৈরি জনপ্রিয় টিভি অনুষ্ঠান ‘কট ইন প্রভিডেন্স’। এই অনুষ্ঠানে তাঁর মানবিক ও হাস্যরসে ভরপুর বিচার কার্যক্রমের ভিডিওগুলো দেখানো হতো। সেই ভিডিওগুলো সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে কোটি কোটি ভিউ পেয়েছে। তাঁর এই ব্যতিক্রমী বিচার পদ্ধতির কারণেই তিনি আদালতের বাইরে বিশ্বজুড়ে এক জনপ্রিয় ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়েছিলেন। তাঁর মানবিক বিচার কাজ দেখে কোটি কোটি মানুষ মুগ্ধ হয়েছেন।
ফ্র্যাঙ্ক ক্যাপ্রিওর বিচারিক পদ্ধতি ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। তিনি প্রায়শই আদালতে শিশুদের বেঞ্চের পেছনে তাঁর সঙ্গে বসার জন্য ডাকতেন। মজা করে তাদের ‘মিনি-জজ’ বলতেন। অনেক সময় তিনি শিশুদের হাতে বিচারকের হাতুড়ি তুলেও দিতেন। তাঁর এই ধরনের মজার ও সহানুভূতিশীল আচরণগুলোই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়। ২০১৯ সালের একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, তাঁর আদালতের কার্যক্রমগুলো রোড আইল্যান্ডের জীবনের সবচেয়ে আকর্ষণীয় অংশ হয়ে থাকবে সবসময়।
কট ইন প্রভিডেন্স টিভি অনুষ্ঠানটি তিনটি ডেটাইম এমি পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছিল। গতবছর বিচারক ক্যাপ্রিও নিজেও দুটি পুরস্কারের জন্য মনোনীত হন। বিখ্যাত টাইম ম্যাগাজিন তাকে নিয়ে ফিচার করেছে। ১৯৩৬ সালে রোড আইল্যান্ডের প্রভিডেন্সে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। বিচারক ফ্র্যাঙ্ক ক্যাপ্রিও তাঁর স্ত্রী জয়েস ক্যাপ্রিও সঙ্গে প্রায় ৬০ বছর সংসার করেছেন। তাঁর পাঁচ সন্তান, সাত নাতি-নাতনি এবং দুই প্রপৌত্র।
ফ্র্যাঙ্ক ক্যাপ্রিওর মৃত্যুতে তাঁর পরিবারসহ সারা বিশ্বের লাখ লাখ মানুষ শোক প্রকাশ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের রোড আইল্যান্ডের প্রভিডেন্সের স্থানীয় আদালতের বিচারক ছিলেন তিনি। রোড আইল্যান্ড আদালতে ৪০ বছরের কর্মজীবন তাঁর। সেখানেও তিনি তাঁর মানবিক বিচারকার্যের জন্য বিখ্যাত ছিলেন।
সূত্র: বিবিসি, সিবিএস নিউজ, ওয়াশিংটন পোস্ট