বিশ্বের সবচেয়ে বড় বজ্রপাত কত কিলোমিটার লম্বা
শুরুতে একটা মজার ঘটনা বলি। কিশোর আলোর জুন ২০২১ সংখ্যায় ‘বুদ্ধির ঝিলিক’ বিভাগে প্রকাশিত ছয়টি মজার প্রশ্নের একটি ছিল, ‘সবচেয়ে বেশি বজ্রপাত কোথায় হয়?’ উত্তর হিসেবে ছিল চারটি বিকল্প। ক. ভারতীয় সিরিয়ালে, খ. গুলিস্তানে, গ. রাজশাহীতে এবং ঘ. ওপরের কোনোটিই নয়। মজার এই প্রশ্নের সঠিক জবাব কী হবে, তা নিয়ে ফেসবুক থেকে শুরু করে নানা গণমাধ্যমে বিভিন্ন কথা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের শীর্ষস্থানীয় দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা এ নিয়ে একটি প্রতিবেদনও ছেপেছিল। প্রশ্নের বিকল্পগুলো মজার হলেও প্রশ্নটা কিন্তু কৌতূহলোদ্দীপক।
২০১৭ সালে নাসা ও মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণা থেকে জানা যায়, সারা বিশ্বে মার্চ থেকে মে মাসের সময়টায় সবচেয়ে বেশি বজ্রপাত হয় বাংলাদেশের সুনামগঞ্জে। সংখ্যা অবশ্য কম, প্রতি বর্গকিলোমিটারে ২৫টির মতো। ফিনল্যান্ডের গবেষণা সংস্থা ভাইসালার তথ্যমতে, ২০১৫-১৮ সালের মধ্যে প্রতিবছর বাংলাদেশে প্রায় ৪০ লাখ করে বজ্রপাত হয়েছে। ২০১৯ সালে সংখ্যাটা কমে হয়েছে ১০ লাখ। ২০২০-এ সেটা আবার ২৫ লাখে চলে এসেছে। আর দেশে বেশির ভাগ বজ্রপাত হয় হাওর এলাকায়।
তবে আজ আমাদের সামনে আছে আরেকটি কৌতূহলোদ্দীপক প্রশ্ন। বিশ্বের সবচেয়ে বড় বজ্রপাত কত কিলোমিটার লম্বা?
এ প্রশ্নের উত্তরে যাওয়ার আগে একটু বলে রাখা প্রয়োজন, বজ্রপাত কী এবং কেন বজ্রপাত হয়। সহজ করে বললে, মেঘের ভেতর জমা বিদ্যুতের অতিরিক্ত শক্তি এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাওয়ার সময় তৈরি হয় বজ্রপাত। এতে প্রচণ্ড আলো ও শব্দ উৎপন্ন হয়। এই আলোই হলো বজ্রপাত।
এবার মূল প্রশ্নে আসা যাক। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বজ্রপাত। এটি ছিল প্রায় ৮২৯ কিলোমিটার লম্বা। গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের তথ্যানুযায়ী, এটিই সবচেয়ে বড় বজ্রপাতের ঘটনা। এর আগে, ২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ৭৬৭ কিলোমিটার লম্বা বজ্রপাত হয়েছিল। আমাদের দেশের টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়ার দূরত্বের চেয়েও বেশি লম্বা ছিল এই বজ্রপাত!
সাধারণত আমরা যে বজ্রপাত দেখি, সেগুলো একঝলক দিয়েই মিলিয়ে যায়। কিন্তু এই বিশাল বিদ্যুৎগুলোকে বিজ্ঞানীরা বলেন ‘মেগাফ্ল্যাশ’। এগুলো তৈরি হয় অনেকগুলো ছোট ছোট ঝড় একসঙ্গে মিলে। যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস ও এর আশপাশের এলাকায় এ ধরনের মেগাফ্ল্যাশ বেশি দেখা যায়।
বিশাল এই বজ্রপাত আকাশে পাক্কা ৭ সেকেন্ড ধরে ছিল! সাধারণ বজ্রপাত আধা সেকেন্ডেরও কম সময় থাকে। তবে সবচেয়ে লম্বা বজ্রপাত এটি হলেও সবচেয়ে বেশি সময় ধরে থাকা বজ্রপাতের রেকর্ড কিন্তু আরেকটি। সেটি ১৭ সেকেন্ডের বেশি সময় ধরে ছিল!
এখন প্রশ্ন হলো, বিজ্ঞানীরা কীভাবে এই বজ্রপাত মাপলেন? কীভাবে এত নিখুঁতভাবে আমরা বলছি, ওই বজ্রপাত ৮২৯ কিলোমিটার লম্বা ছিল? এর জন্য বিজ্ঞানীরা স্যাটেলাইটের সাহায্য নিয়েছেন। সঙ্গে মাটিতে বসানো বিশেষ সেন্সরও ব্যবহার করেছেন। এই সেন্সরগুলো বিদ্যুৎ চমকানোর সময় তৈরি হওয়া রেডিও সিগন্যাল ধরতে পারে। আর সেখান থেকেই বিজ্ঞানীরা এই নিখুঁত হিসাব করতে পারেন।
বিজ্ঞানীরা এখনো এই মেগাফ্ল্যাশগুলো নিয়ে গবেষণা করছেন। তাঁরা জানতে চাইছেন, কেন এগুলো এত শক্তিশালী হয় আর এত লম্বা সময় ধরে টিকে থাকে। এ ধরনের গবেষণা আমাদের ভয়ংকর ঝড় সম্পর্কে জানতে এবং ভবিষ্যতে তা থেকে বাঁচার নতুন উপায় খুঁজে বের করতে সাহায্য করবে।
সূত্র: নিউ সায়েন্টিস্ট