বর্ষার ফুল, ফল আর পাখি
বর্ষার ফুল
বর্ষায় ফুলের অভাব নেই। কদম-কেয়া এ সময় ফোটে। পথের দুই পাশে ঝোপঝাড়ে বা বেড়ার ফাঁকে ফাঁকে কাঠমল্লিকা ফুল ফোটে। গাছ-পাতা বেলির মতোই, গন্ধও বেশ মিষ্টি। তেলাকচুর সাদা ফুলগুলোও এ সময় ঝোপঝাড়ের আড়াল থেকে মাথা উঁচু করে দাঁড়ায়। বর্ষার সবচেয়ে সুন্দর বুনো ফুল হলো ঝুমকোলতা। পথের পাশে মাটির ওপর কিংবা ফসলের খেতের বেড়ায় ঝুমকোলতা ঝুলে থাকে এ সময়।
বর্ষার সঙ্গে সবচেয়ে ভালো সম্পর্ক রেইন লিলির। বৃষ্টি না হলে রেইন লিলির দেখা কখনো পাবে না। কাঁঠালিচাঁপা ফুলও এ সময় ফোটে। দেখতে আহামরি নয়। কিন্তু পাকা কাঁঠালের মতো মিষ্টি গন্ধ আছে এর। কামিনী ফুলের গাছগুলো বর্ষায় ফুলে ফুলে সাদা হয়ে ওঠে। কাঠগোলাপ, স্বর্ণচাঁপা ও দোলনচাঁপাও এ সময় ফোটে। তবে গন্ধে বর্ষায় সবাইকে টেক্কা দেয় স্পাইডার লিলি। সাদা মাকড়সার মতো এই ফুলের কড়া মিষ্টি গন্ধ—বিষণ্ন রাগী লোকটার মুখেও হাসি ফুটিয়ে দিতে পারে। আরও কয়েক জাতের লিলি এ সময় ফোটে। শাপলা ও পদ্ম সব সময় ফুটলেও বর্ষার পানিতে টইটম্বুর জলাশয় এদের সৌন্দর্যে বাড়তি মাত্রা যোগ করে।
বর্ষার ফল
বর্ষায় বেশ কিছু বুনো ফল পাকে। বেশ মিষ্টি লাগে। এর স্বাদে গন্ধে-আশশেওড়া সেরা। এর রসালো ফল মুখে স্বাদ জীবনে ভোলার নয়। হামজাম নামে একধরনের বেরিজাতীয় ফলও এ সময় পাকে। জামের মতো কিন্তু মটরদানার মতো ছোট। সবুজ বঁইচি ফল এ সময় পেকে কালো হয়ে ওঠে। কাষ্ঠ, কিন্তু খেতে খারাপ নয়। ফুটকিও এ সময় পাকে। রসে ভরা টক–মিষ্টি এ ফলটা একটা খোলসের মধ্যে বন্দী থাকে। এরা আসলে একধরনের বেরি। ইংরেজি নাম কেপ গুসবেরি। বিদেশে যত দামই থাকুক, আমাদের দেশে এর গাছ স্রেফ আগাছা। বর্ষায় রাখালিয়া ফল পাকে। রাখালের খাবার এই টক–মিষ্টি ফলটা। এই ফলের আরেকটা নাম আছে। ঝুমকোলতার ফল।
বর্ষার আরেকটা মজার ফল হলো ডেউয়া। আমাদের এলাকায় একে বলে মান্দার। কিম্ভূতদর্শন এই ফলের ভেতর কাঁঠালের কোয়ার মতো ছোট ছোট কোয়া থাকে। টক–মিষ্টির মিশেলে এই ফল স্বাদে–গন্ধে অপূর্ব।
বর্ষার পাখি
দেশি জলচর পাখিগুলো সবচেয়ে সরব হয় বর্ষাকালে। বহু মেঠোপাখির আনাগোনা এ সময় বাড়ে। বর্ষায় দেখতে পাওয়া সবচেয়ে সুন্দর পাখি হলো শাহ-বুলবুল ও জলময়ূর। শাহ-বুলবুল তার লম্বা লেজ ঘুড়ির মতো উড়িয়ে ঘুরে বেড়ায় বাঁশবনে। জলময়ূর দেখা যায় পানাভরা পদ্মবিলে। জলপিপি ও হট্টিটি পাখিদেরও এ সময় খুব বেশি দেখা যায়। এ সময় এদের খাদ্যের জোগান বেশি থাকে। তাই জলচর দেশি পাখিরা এ সময় পানির ওপর কচুরিপানা কিংবা পদ্মগাছের আড়ালে ভাসমান বাসা তৈরি করে। এ সময় জলাশয়ের ধারে মাটির গর্তে বাসা করে মাছরাঙা ও সুইচোরা পাখি।
পাটখেতে এ সময় প্রচুর শুঁয়াপোকা হয়। তাই পাটখেতের আশপাশে বুলবুলি, শালিক ও হলদে পাখিদের আনাগোনা বেড়ে যায়। বড় বড় গাছে হরিয়ালের দেখা মেলে। চাতক বা পাকড়া পাপিয়াদেরও এ সময় দেখা যায়।