অস্ট্রেলিয়ায় লুসিফার মৌমাছি আবিষ্কার, নাম এসেছে নেটফ্লিক্স থেকে
পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার গোল্ডফিল্ডস এলাকায় বিজ্ঞানীরা খুঁজে পেয়েছেন এক অদ্ভুত সুন্দর নতুন প্রজাতির মৌমাছি। এর নাম রাখা হয়েছে মেগাকাইল (হ্যাকারিয়াপিস) লুসিফার। নামটি এসেছে ল্যাটিন শব্দ লুসিফার থেকে। লুসিফার মানে ‘আলো আনে যে’। তবে নামের পেছনে আছে একটি মজার গল্প।
নতুন এই মৌমাছি আবিষ্কার করেছেন কার্টিন ইউনিভার্সিটির জীববিজ্ঞানী ড. কিট প্রেন্ডারগাস্ট। তিনি বিরল বুনো ফুল মারিয়ানথাস অ্যাকুইলোনারিয়াস নিয়ে গবেষণা করছিলেন। এই ফুল কেবল নরসম্যান ও হাইডেন নামের দুই শহরের মাঝখানে ব্রেমার রেঞ্জ নামে ছোট একটি অঞ্চলে জন্মায়। গবেষণার সময় ড. প্রেন্ডারগাস্ট দেখলেন, এক অচেনা মৌমাছি এই বিরল ফুলের পরাগ সংগ্রহ করছে এবং কাছের একটি ম্যালিগাছেও বসছে।
ড. প্রেন্ডারগাস্ট বলেন, ‘স্ত্রী মৌমাছিটির মাথায় ছোট ছোট শিংয়ের মতো গঠন ছিল। এই শিংয়ের কারণে অন্য মৌমাছি থেকে এটি দেখতে আলাদা। শিং থাকায় এই মৌমাছিকে দেখতে খানিকটা ডেভিল বা শয়তানের মতো লাগে। এটি দেখতে বেশ সুন্দর। অধ্যাপক প্রেন্ডারগাস্ট বলেছেন, ‘যখন আমি নতুন প্রজাতিটির বর্ণনা লিখছিলাম, তখন নেটফ্লিক্সে “লুসিফার” সিরিজটি দেখছিলাম। আমি লুসিফার চরিত্রটির ভীষণ ভক্ত। তাই নামটা রেখে দিয়েছি।’
বিজ্ঞানীরা পরে ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে লুসিফার প্রজাতিটি নতুন আবিষ্কৃত বলে নিশ্চিত হয়েছেন। এই মৌমাছির পুরুষ ও স্ত্রীর ডিএনএ কোনো পরিচিত প্রজাতির সঙ্গে মেলে না। জাদুঘরের কোনো নমুনার সঙ্গেও এর গঠন মেলে না। তাই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, এটি সম্পূর্ণ নতুন এক প্রজাতি। প্রায় ২০ বছর পর এই গোষ্ঠীর মধ্যে নতুন সদস্য পাওয়া গেল।
ড. প্রেন্ডারগাস্ট বলেন, ‘এর মাধ্যমে প্রমাণিত হয়, প্রকৃতির অনেক কিছু এখনো আমরা জানি না। এমনকি খনির মতো জায়গাতেও প্রাণী লুকিয়ে থাকতে পারে, যেগুলো বিলুপ্তির পথে।’
মৌমাছিটি একটি বিরল ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে। বিরল ফুল ও মৌমাছি—দুটিকেই ছোট একটি এলাকায় পাওয়া গেছে। ফলে খনিতে খননকাজ, বনভূমি ধ্বংস বা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দুটিই বিপন্ন হতে পারে। অনেক খনন কোম্পানি এখনো স্থানীয় মৌমাছি নিয়ে কোনো জরিপ করে না। এতে এমন প্রজাতি হারিয়ে যেতে পারে, যেগুলো এখনো আবিষ্কৃতই হয়নি।
গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে জার্নাল অব হাইমেনোপটেরা রিসার্চে। এর শিরোনাম ছিল ‘মেগাকাইল লুসিফার, এক নতুন মৌমাছি, যার মাথায় আছে শিংয়ের মতো গঠন, আর যে আসে বিপন্ন ফুল মারিয়ানথাস অ্যাকুইলোনারিয়াসে।’
যখন মৌমাছিটি আবিষ্কৃত হয়, তখন অস্ট্রেলিয়ায় চলছিল ‘অস্ট্রেলিয়ান পলিনেটর উইক’। ফুলের পরাগায়ন সপ্তাহ অস্ট্রেলিয়াজুড়ে পালিত হচ্ছিল। এই সপ্তাহে পরিবেশে মৌমাছি, প্রজাপতি ও অন্যান্য পোকামাকড়ের ভূমিকা উদ্যাপন করা হয়।
নতুন প্রজাতির মৌমাছি খুঁজে বের করার এই গবেষণায় সহযোগিতা করেছে অ্যাটলাস অব লিভিং অস্ট্রেলিয়া, গোল্ডফিল্ডস এনভায়রনমেন্টাল ম্যানেজমেন্ট গ্রুপ আর যুক্তরাষ্ট্রের ইউএসডিএ কৃষি গবেষণা সংস্থা।
সূত্র: এবিসি নিউজ অস্ট্রেলিয়া ও ডেইলি স্টার ইউকে