সুপারশপে ঢুকে পড়ল একটি কালো ভালুক, তারপর যা হলো
যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সির শহরতলি। একটি সুপারশপের মধ্যে একটি ভালুককে দেখা যাচ্ছে। সুপারশপ না বলে এটিকে ডলার স্টোর বলা ভালো। এখানে কম পয়সায় কেনাকাটা করা যায়। সম্প্রতি এমন একটি ডলার স্টোরের ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওতে দেখা গেছে, একটি কালো ভালুক স্টোরের ভেতর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। একজন লোক ভালুককে পথ দেখিয়ে বাইরে নিয়ে যাচ্ছেন। ভালুকটাকে দেখে খুব স্বাভাবিক লাগছে না। ভিডিওতে এক ব্যক্তি বলছেন, ‘দিস ইজ নট গুড’। এক নারী তাঁর কথায় সায় দেন। শেষ পর্যন্ত পুরো ঘটনাটি ভালোভাবে শেষ হয়নি। বিশেষ করে ভালুকটির জন্য।
ভিডিওতে ভালুকটিকে বিভ্রান্ত দেখাচ্ছিল। একবার বাঁয়ে, একবার ডানে তাকাচ্ছিল। এদিক ওদিক যাচ্ছিল। ভিডিও ধারণ করা ব্যক্তি এই পর্যায়ে ভালুকটিকে দোকানের বাইরে যেতে বলেন।
‘এই, চলে যাও, বের হও।’
নিউ জার্সি পুলিশের মতে, এই ঘটনার কিছুক্ষণ আগে ভালুকটি সুপারশপের ভেতরে ৯০ বছর বয়সী এক নারীকে আঁচড় দিয়েছে বা কামড় দিয়েছে। তবে ওই নারী এতে ঘাবড়ে যাননি। পাশের দোকানের কর্মচারী ক্রিস্টিন ফ্লোর (৫৫) ঘটনা কী দেখতে যান। তিনি ওই নারীকে ভেতরে দেখে দ্রুত বের হয়ে যেতে বলেন।
‘আমি তাঁকে বললাম, দোকানে একটি ভালুক আছে’। তিনি বললেন, ‘আমি জানি, ও আমাকে আঁচড় দিয়েছে।’ এ কথা বলে ওই নারী কেনাকাটা চালিয়ে যান। ফ্লোর বলেন, ‘আমি বিষয়টি দেখে অবাক হয়েছি।’
যুক্তরাষ্ট্রের অ্যালাচিয়ান অঞ্চলের উচ্চভূমিতে অবস্থিত সাসেক্স কাউন্টিতে মাঝেমধ্যেই কালো ভালুক দেখা যায়। নিউ জার্সির পরিবেশ সুরক্ষা বিভাগের তথ্য মতে, চলতি বছর ২১ আগস্ট পর্যন্ত সাসেক্স কাউন্টিতে ২৯৪টি ভালুক সম্পর্কিত ঘটনা ঘটেছে। রাজ্যের অন্য যেকোনো কাউন্টির তুলনায় এই সংখ্যা অনেক বেশি। এসব ঘটনার মধ্যে রয়েছে, ভালুকের দেখা পাওয়া, বাড়িতে ঢোকার চেষ্টা অথবা পশুর দল হত্যা করা। তবে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে ভালুক ঢোকার এ শহরে আগে ঘটেনি।
এই ভালুকটি একটি ১৭৫ পাউন্ড ওজনের স্ত্রী ভালুক। এটি সুপারশপের পার্কিং লটে বেশ কয়েক ঘণ্টা ঘোরাঘুরি করছিল। পুলিশ জানিয়েছে, দুপুর ১টা ৩৯ মিনিটে পুলিশ প্রথম ভালুকটির মুখোমুখি হয়। তখন এটিকে ওই স্টোরের পার্কিং থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। পাশের রেস্টুরেন্টের মালিক অ্যারন গ্ল্যাডিং বলেন, ‘তারা ভালুকটিকে রাবার বুলেট মেরেছে। তবে এতে ভালুকটির ওপর কোনো প্রভাব পড়েনি। তবে ঘুরতে ঘুরতে এটা অনেকটা হতভম্ব হয়ে গিয়েছিল।’
দুই ঘণ্টা পর ভালুকটি আবারও সুপারশপের পাশের রেস্টুরেন্টের বাইরে আসে। রেস্টুরেন্ট মালিক গ্ল্যাডিংয়ের জার্মান শেফার্ড কুকুরের মুখোমুখি হয় এটি। গ্ল্যাডিং বলেন, ‘ভালুকটি আমার কুকুরকে আঘাত করে। কিন্তু কামড়ায়নি বা আঁচড় দেয়নি। আমাদের এখানে প্রতিদিন একটি ভালুক আসে। যার ওজন ৩০০-৪০০ পাউন্ড। আমরা তাকে ফ্র্যাঙ্কি ডাকি। সে ডাস্টবিনের কাছে আসে। তার ১০ ফুটের মধ্যে গেলেই সে পালিয়ে যায়। তবে এই ভালুকটি ছিল ভিন্ন। আমি এক শ বিশ ভাগ নিশ্চিত যে এই ভালুকটির কিছু একটা সমস্যা আছে।’
এর প্রায় ১০ মিনিট পর রিয়েল এস্টেট এজেন্ট শন এফ ক্লার্কিন সুপারশপটিতে ঢোকেন। ভালুকটা দেখে তিনি ভিডিও করা শুরু করেন। এটিকে কীভাবে দোকান থেকে বের করা যায়, তা বোঝার চেষ্টা করেন। একসময় তিনি চিৎকার করে বলেন, ‘এখানে কি পেছনের কোনো দরজা আছে?’
ভালুকটি তাঁর পেছনে পেছনে আসছিল। ভিডিওতে তাঁর কণ্ঠ অন্যরকম শোনালেও তিনি ভয় পাননি বলে জানিয়েছেন। ৬৫ বছর বয়সী ক্লার্কিন বলেন, ‘ভালুকটিকে দেখে মোটেও বিপজ্জনক মনে হয়নি। এটি সম্ভবত অসুস্থ ছিল।’
তবে ভালুকটির শেষ পরিণতি ভালো হয়নি। যখন দোকান থেকে এটি বের হয়, তখন পার্কিং লটে পুলিশের গাড়ি ছিল। ভিড় জমে গিয়েছিল। এরপর ভালুকটি আবার দোকানে ঢোকার চেষ্টা করে। কিন্তু ক্লার্কিন একটি শপিং কার্ট দিয়ে পথ আটকে দেন।
ভালুকটি এরই মধ্যে দুটি 'ক্যাটাগরি ১' ধরনের আচরণে জড়িত ছিল। ক্যাটাগরি ১ আচরণের মধ্যে আছে 'মানুষকে আক্রমণ করা', 'কুকুরের ওপর বিনা প্ররোচনায় আক্রমণ করা' ইত্যাদি। যখন ভালুকটি রাস্তা পার হচ্ছিল, তখন একজন পুলিশ কর্মকর্তা নিজের বন্দুক তাক করেন ভালুকটির দিকে।
ফ্লোর বলেন, ‘যখন আমি গুলির শব্দ শুনলাম, আমার মনটা ভেঙে গেল। আমি দেখলাম, ভালুকটি যন্ত্রণায় ছটফট করছে।’
এই রাজ্যের পরিবেশ কর্মীরা ভালুকটির দেহাবশেষ সংগ্রহ করেছে। সেটি র্যাবিস পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। এক থেকে তিন দিনের মধ্যে ফলাফল পাওয়া যাবে।
সূত্র: নিউইয়র্ক টাইমস