যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিমানে চেপে পান্ডা এল চীনে

ঘুম ঘুম চোখে সকাল-সন্ধ্যা বাঁশ চিবিয়ে খেতে ব্যস্ত থাকে জিয়াও কিউ জি। প্রায় ৯০ কেজি ওজনের সাদাকালো তুলতুলে নরম শরীর নিয়ে বড্ড অলস হয়েছে সে। জন্মের পর থেকেই জায়ান্ট পান্ডা জিয়াও থাকছে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনের জাতীয় চিড়িয়াখানায়। মা পান্ডা, মেই জিয়াং আর বাবা পান্ডা, তিয়ান তিয়ানের সবচেয়ে ছোট ছেলে জিয়াও। তিন সদস্যের এই জায়ান্ট পান্ডা পরিবার জীবনে প্রথমবার একসঙ্গে পান্ডা এক্সপ্রেস নামের এক বিমানে চড়েছে। মা-বাবার সঙ্গে বিমানে চড়ে জিয়াও নিজের দেশে অর্থাৎ চীনে ফিরে গেছে। এই তিন জায়ান্ট পান্ডার বিশেষ বিমানভ্রমণের পেছনকার গল্প কী? চলো জেনে আসি!

চীনের পান্ডা ডিপ্লোমেসি

উপহার হিসেবে জায়ান্ট পান্ডা পাঠানোর মাধ্যমে চীন অন্যান্য দেশের সঙ্গে তাদের কূটনৈতিক সম্পর্ক ভালো করার চেষ্টা করে। চীনের এই কৌশলের নাম পান্ডা ডিপ্লোমেসি। ২০০০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনের স্মিথসোনিয়ান জাতীয় চিড়িয়াখানায় দুটি জায়ান্ট পান্ডা পাঠিয়েছিল চীন। এই দুই পান্ডা হলো মেই জিয়াং আর তিয়ান তিয়ান। যুক্তরাষ্ট্র আর চীনের মধ্যে মেই-তিয়ান জুটিকে নিয়ে একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়। যে চুক্তির মেয়াদ শেষ হতে চলেছে ২০২৪ সালে।

স্মিথসোনিয়ান চিড়িয়াখানায় থাকাকালে মেই-তিয়ান জুটির সাতটি সন্তান হয়েছে। এরমধ্যে মাত্র চারটি পূর্ণবয়স্ক পান্ডা হতে পেরেছে। মা পান্ডার বয়স বিবেচনায় মেই-তিয়ান জুটির সবচেয়ে ছোট ছেলেশিশুর জন্ম ছিল অত্যন্ত বিস্ময়কর। বর্তমানে তিন বছর বয়সী সেই পান্ডা শিশুটির নাম জিয়াও কিউ জি। এই নামের মানে হলো ‘লিটল মিরাকেল’। যুক্তরাষ্ট্র আর চীনের চুক্তি অনুসারে মেই-তিয়ান জুটির বাকি তিনটি সন্তান আগেই চীনে ফিরে গেছে। সেই চুক্তির মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়ার আগেই চীনের পান্ডাদের ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশে ফিরে মেই-তিয়ান জুটি তাদের পরিবারসহ চীনের শহর চেংডুর বাইরে ওলং পান্ডা রিজার্ভে থাকবে।

কার্গো বিমানে পান্ডাদের ফার্স্ট ক্লাস ট্রিপ

ধরো তুমি দেশের বাইরে কোথাও ঘুরতে যাচ্ছ। বিমানে চড়ে দেখলে তোমার সহযাত্রী একটি জায়ান্ট পান্ডা! এত কিউট সহযাত্রী পেলে তুমি নিশ্চয়ই অনেক খুশি হবে। কিন্তু ৯০ কেজি ওজনের একটি পান্ডাকে কি একজন সাধারণ মানুষের আসনে বসানো সত্যি সম্ভব? আসলে কোনো যাত্রীবাহী বিমানে একটি জায়ান্ট পান্ডাকে পর্যাপ্ত জায়গা দেওয়া একদম সম্ভব নয়। তাই পান্ডা পরিবহনের জন্য বিশেষ কার্গো বিমান ব্যবহার করা হয়। এই বছরের ৮ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্র থেকে পান্ডা জুটি মেই-তিয়ান আর তাদের ছেলে জিয়াও চীনের উদ্দেশে রওনা দেয়। দীর্ঘ ১৯ ঘণ্টার যাত্রা শেষে চীনে এসে পৌঁছায় এই পরিবারকে বহনকারী বিমান পান্ডা এক্সপ্রেস।

আরও পড়ুন

বোয়িং ৭৭৭, যুক্তরাষ্ট্রের ফেডেক্স কোম্পানির বিশাল একটি কার্গো বিমান। এই বিমানকে পান্ডা এক্সপ্রেস নাম দেওয়া হয়েছে। ফেডেক্সের মূল কাজ দেশে বিদেশে বিভিন্ন পণ্য কিংবা পার্সেল ডেলিভারি করা। কিন্তু তিনটি জায়ান্ট পান্ডাকে নিরাপদে যুক্তরাষ্ট্র থেকে চীনে পৌঁছে দেওয়া যেকোনো প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি গুরুদায়িত্ব। আর ফেডেক্স সেই দায়িত্ব পালনে সফল হয়েছে। এই কোম্পানির একজন মুখপাত্র মিডিয়াকে বলেন, ‘সম্পূর্ণ যাত্রায় পান্ডাদের ফার্স্ট ক্লাস সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়েছে।’

পান্ডা এক্সপ্রেসে তিনটি জায়ান্ট পান্ডার জন্য তিনটি আলাদা ক্রেট ছিল। মূলত নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে স্টিল এবং প্লেক্সিগ্লাসের তৈরি তিনটি মজবুত ক্রেটের আয়োজন করা হয়। এই বিশেষ ক্রেটগুলো পান্ডাদের ফ্লাইটের অনেক আগেই ওয়াশিংটনের চিড়িয়াখানায় পৌঁছে যায়। বিমানে চড়ার আগে কয়েক সপ্তাহ যাবত মেই-তিয়ান জুটি এবং তাদের ছেলে জিয়াও স্বাচ্ছন্দ্যে ক্রেটে থাকার প্রশিক্ষণ পেয়েছে। একটি জায়ান্ট পান্ডার নড়াচড়া করার পর্যাপ্ত জায়গা ছিল প্রতিটি ক্রেটে। এর পাশাপাশি প্রায় ১৩৫ কেজি ওজনের বাঁশ, অন্যান্য খাদ্য এবং বেশকিছু খেলনা ছিল ক্রেটগুলোতে।

আরও পড়ুন

পান্ডা এক্সপ্রেসের প্রধান পাইলট, ক্যাপ্টেন রন জাম্পিনি অসাধারণ এই যাত্রা শুরু করার আগে বলেন, ‘এই প্রথমবার আমি পান্ডাদের সঙ্গে আকাশপথে পাড়ি দিচ্ছি। আমার পেশাজীবনের হাইলাইট হয়ে থাকবে এই ফ্লাইট। এই পান্ডাগুলোকে নির্বিঘ্নে চীনের শহর চেংডুতে পৌঁছে দেওয়া এখন আমার ১ নম্বর লক্ষ্য।’

পান্ডা এক্সপ্রেস
ছবি: সংগৃহীত

স্বস্তির খবর হচ্ছে, জায়ান্ট পান্ডা মেই, তিয়ান আর জিয়াও তাদের বিমানভ্রমণ শেষে চীনে নিরাপদে পৌঁছেছে। জায়ান্ট পান্ডা পৃথিবীতে বিপন্ন প্রাণীদের একটি। তাই স্মিথসোনিয়ান চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের পরিকল্পনা আছে তাদের আপাদত ফাঁকা পড়ে থাকা পান্ডাদের বাসস্থানকে আরও উন্নত করার। এই কাজে তাদের বাজেট থাকবে প্রায় ১.৭ মিলিয়ন ডলার! সব মিলিয়ে জায়ান্ট পান্ডাদের আবার যুক্তরাষ্ট্রে ফিরিয়ে আনা নিয়ে বেশ আশাবাদী স্মিথসোনিয়ান চিড়িয়াখানা।