শীতকালে পানি কম খাই কেন

নিয়মিত পানি পান করলে ত্বক ভালো থাকবে, ওজন কমবে

আমরা তো জানি, পৃথিবীর ৭০ ভাগ জল আর ৩০ ভাগ স্থল। আমাদের শরীরের সঙ্গে পৃথিবীর তুলনা দেওয়া চলে। তুলনাটা হাস্যকর হলেও মিল আছে। আমাদের শরীরের ৭০ শতাংশ তরল, যা শরীরের সব কোষ, টিস্যু আর অঙ্গগুলোর কাজ চালু রাখতে ব্যবহার হয়। শুরুতেই বলে রাখি, যে ঋতুই চলুক, সব সময় নিজেকে হাইড্রেটেড রাখতে হবে। পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে যেন শরীর ঠিকভাবে কাজ করতে পারে। পানির পিপাসা না লাগলে অনেকে পানি পান করে না। বিশেষ করে শীতকালে। পিপাসা লাগুক বা না লাগুক, পানি তোমাকে পান করতেই হবে।

গ্রীষ্মে পিপাসা বেশি লাগলেও কেন শীতে আমাদের পিপাসা কম পায়? উত্তর খুব সহজ। গ্রীষ্মে শরীর প্রচুর ঘামে। শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে পানি হাওয়া হয়ে যায়, সত্যি সত্যিই হাওয়া হয় পানি। তরল ঘাম বের হয়ে বাতাসে বাষ্প হয়ে যায়। এই প্রক্রিয়ায় পানি হারায় শরীর। এভাবে আমাদের তৃষ্ণা বাড়ে। আর তৃষ্ণা মেটাতে শরীরের চাওয়া অনুযায়ী আমরা পান করি। বাইরের গরম আবহাওয়া আমাদের মাঝেমধ্যে পানি খেতে বাধ্য করে। শরীর শুধু হাইড্রেট করার জন্য পানি ব্যবহার করে না। সব অঙ্গের কাজ নিয়ন্ত্রণ করতে পানি প্রয়োজন হয়।

শীতকালে মানুষের পিপাসা কম লাগে কেন

চারপাশের আবহাওয়া শীতল হওয়ার সঙ্গে আমাদের শরীর থেকে পানিসহ অন্যান্য তরলও বাষ্প হয়ে বেরিয়ে যায়। শীত থেকে বাঁচার জন্য আমরা গরম পানীয় যেমন চা, কফি, স্যুপ খাই। পানির বদলে এগুলো পান করার প্রবণতা শীতকালেই বেশি দেখা যায়। চারপাশের তাপমাত্রা কমলে আর্দ্রতা কমে। সঙ্গে শরীরের আর্দ্রতাও কমে যায়।

শীতের জবুথবু অবস্থা। শীত থেকে বাঁচতে দুই মেয়েসহ নিজে শীতের পোশাক পরে বাইরে বেড়িয়েছেন এক ব্যক্তি। উত্তম বানিয়াপাড়া এলাকা, রংপুর, ৭ জানুয়ারি
ছবি: মঈনুল ইসলাম

তবে শীতকালে গ্রীষ্মের মতো তেমন পিপাসা লাগে না। তাই গরমকালের পানি খাওয়ার মতো করে শীতকালে অতটা পানি আমরা খাই না। মানে তৃষ্ণা মেটানোর প্রয়োজন অনুভব করি না। এর কারণ, আবহাওয়ার সঙ্গে আমাদের শরীরের তাপমাত্রা মেলে না। তাই চা খাওয়া সহজ হলেও সাধারণ তাপমাত্রার পানি খাওয়ার প্রয়োজন অনুভব করি না।

আবার শীতকালে শরীর থেকে ঘাম কম বের হয়, পানিশূন্যতা কম হয়। শরীরে পানির চাহিদা তৈরি হতে সময় লাগে। ঠান্ডা আবহাওয়ার কারণে ভারী জামাকাপড় পরি। আমাদের শরীরের ঘাম বের হলেও কাপড় দিয়ে শোষিত হবে। পানি কম খেলে প্রস্রাবও হয় কম।

শীতকালে পানি কম খাওয়া কোনোভাবেই উচিত না। কারণ, চারপাশের বায়ু শুষ্ক। পুকুরের পানি শীতকালে শুকিয়ে যায়। শরীরের ক্ষেত্রেও তাই। পানি বাষ্পাকারে বের হয়ে যায়। ঠোঁট শুকিয়ে ফেটে যাওয়ার সঙ্গে তুমি নিশ্চয়ই পরিচিত। তাই খেলাধুলা সময় বা অন্য যে কোনো কাজের সময় তৃষ্ণা নাও লাগতে পারে। না লাগলেও তোমাকে যতটা সম্ভব পানি পান করতে হবে। এক গ্লাস পানি একবারে না হলেও ছোট ছোট চুমুক দিয়ে অল্প অল্প করে পানি খাও।

আরও পড়ুন

পর্যাপ্ত পানি পান করা সারা বছরই গুরুত্বপূর্ণ। হোক শীত বা গ্রীষ্ম। অনেকেরই শীতে কম পানি পান করার প্রবণতা আছে। সচেতনভাবে এই অভ্যাস থেকে দূরে থাকা উচিত। কারণ, সুস্থ থাকার জন্য পানি খুব দরকারি।

শীতে পানি কম পান করলে কী হয়

চাহিদা মতো পানি খাও
ছবি: পেক্সেলস ডটকম

পানি কম খেলে শরীরে দেখা যায় বিভিন্ন উপসর্গ। যখন শরীরে পানির পরিমাণ কমে যাওয়া মানে পানিশূন্যতা। পানিশূন্যতা থেকে তৈরি হয় মাথাব্যথা। এই মাথাব্যথাকে অবহেলা করলে মাইগ্রেন বা তীব্র মাথাব্যথা তৈরি হতে পারে। শুষ্ক ত্বক, শুকনো দীর্ঘস্থায়ী কাশি হতে পারে। নাক দিয়ে রক্ত পড়াও অসম্ভব না। তাই পানি পান করা খুব গুরুত্বপূর্ণ।

আরও পড়ুন

শীতকালে কতটা পানি পান করা উচিত

এই প্রশ্নের উত্তর খুব সহজ। যতটা সম্ভব পানি পান করতে হবে। নিয়মিত পানি পানের অভ্যাস তৈরি করলে শরীর নিজেই পানি পানের কথা মনে করিয়ে দেবে। অল্প পরিমাণে হলেও নিয়মিত পানি পান করতে হবে। তোমার শরীর যতটুকু চায়, যতটুকু পান করলে অস্বস্তি তৈরি হবে না, ততটুকু পান করা উচিত। তবে একসঙ্গে অনেক পানি পান করা উচিত না। থেমে থেমে অল্প অল্প করে পান করতে হবে। ছয়-সাত গ্লাস পানি তুমি কিশোর হিসেবে পান করতে পারো একদিনে। পরিশ্রমী কেউ যেমন খেলোয়াড় হিসেবে আরও বেশি পানি পানের প্রয়োজন হতে পারে। বিশুদ্ধ পানি পানের বিকল্প নেই। ফিল্টার করা পরিষ্কার আর বিশুদ্ধ পানি পান না করলে টাইফয়েড, হেপাটাইটিসসহ অনেক রোগই হতে পারে। তাই পানি পান কোরো।