বৃষ্টির মতো আকাশ থেকে কুয়াশা পড়ছে, এরপর কি বরফ পড়বে
হাড়কাঁপানো শীতে এখন কাঁপছে পুরো বাংলাদেশ। রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে উত্তরের জনপদ—সর্বত্রই এখন কুয়াশার দাপট। কোথাও কোথাও দুপুরের দিকে সূর্যের দেখা মিললেও দেশের বেশির ভাগ জায়গায় সারা দিন সূর্যের মুখ দেখা যাচ্ছে না। বিকেল হতেই আকাশ থেকে বৃষ্টির মতো ঝিরঝিরে কুয়াশা ঝরতে শুরু করেছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এখন কুয়াশার এমন বৃষ্টি দেখে অনেকে ছবি শেয়ার করে লিখছেন, ‘এবার বোধ হয় বাংলাদেশে তুষার পড়বে।’ সেসব পোস্টের নিচে আবার মজার সব কমেন্ট করছেন নেটিজেনরা। কিন্তু চারপাশের এই ধোঁয়াটে কুয়াশার চাদর ও হাড়কাঁপানো বাতাস দেখে অনেকের মনেই প্রশ্ন জেগেছে, আসলেই কি এবার বাংলাদেশে তুষার বা বরফ পড়বে? আমাদের এই গ্রীষ্মপ্রধান দেশে কি সত্যিই কখনো আকাশ থেকে সাদা বরফ ঝরে পড়া সম্ভব?
তবে বাংলাদেশে এবার তুষার পড়বে কি না তা জানার আগে জানতে হবে কী, কেন, কীভাবে ও কখন তুষার পড়ে কোনো অঞ্চলে। মূলত কোনো অঞ্চলে তুষার হবে কি না, তা মূলত নির্ভর করে তিনটি প্রধান বিষয়ের ওপর। তা হলো বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা, উচ্চতা ও আর্দ্রতা।
এখন আসা যাক তুষার কীভাবে তৈরি হয়? অনেকের ধারণা, বৃষ্টির পানি জমে বরফ হয়ে তুষার হিসেবে ঝরে পড়ে। কিন্তু বিজ্ঞানের ভাষায় প্রক্রিয়াটি ভিন্ন। যখন বায়ুমণ্ডলের ওপরের স্তরে তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নিচে নেমে যায়, তখন মেঘের ভেতর থাকা জলীয় বাষ্পের সঙ্গে ধূলিকণা মিশে সরাসরি বরফের ছোট ছোট স্ফটিকে (আইস ক্রিস্টালস) পরিণত হয়। বিজ্ঞানের ভাষায় এই বিশেষ প্রক্রিয়াকে বলা হয় ডিপজিশন। এই বরফ কণাগুলো যখন একে অপরের সঙ্গে জুড়ে গিয়ে ভারী হয়ে যায়, তখন এরা ‘স্নোফ্লেক’ বা তুষারকণা হিসেবে নিচে নামতে শুরু করে।
তবে তুষার হওয়ার জন্য কেবল আকাশ ঠান্ডা থাকলেই চলে না। মেঘ থেকে মাটি পর্যন্ত পুরো পথের বাতাসই হিমাঙ্কের কাছাকাছি থাকা জরুরি। যদিও ওপর থেকে তুষার পড়া শুরু হয়, কিন্তু মাটির কাছাকাছি বাতাস গরম থাকে, তবে সেই তুষার গলে বৃষ্টির ফোঁটা হয়ে মাটিতে পড়ে। এ কারণেই সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে অনেক উঁচুতে থাকা পাহাড়ে তুষার বেশি দেখা যায়। কারণ, সেখানে তাপমাত্রা সব স্তরেই বেশ কম থাকে। যেমনটা দেখা যায় হিমালয় পর্বতে।
বোঝাই যাচ্ছে কেন বাংলাদেশে তুষারের দেখা মেলে না। বাংলাদেশ একটি নাতিশীতোষ্ণ দেশ। আমাদের দেশে হাড়কাঁপানো শীত পড়লেও মাটির কাছাকাছি তাপমাত্রা সাধারণত ৮ থেকে ১০ ডিগ্রির মধ্যে থাকে। কিংবা এর নিচে খুব একটা নামে না। তবে বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ২০১৮ সালের ৮ জানুয়ারি তেঁতুলিয়ায়, যা ছিল ২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
বাংলাদেশে শীতকালের সাধারণ তাপমাত্রার ফলে আকাশ থেকে যদি তুষার তৈরি হয়ে নামতেও শুরু করে, তবে আমাদের দেশের অপেক্ষাকৃত গরম বাতাসের স্তরে ঢোকা মাত্রই তা গলে পানিতে পরিণত হয়। এ কারণেই আমাদের পঞ্চগড় বা শ্রীমঙ্গলে কনকনে ঠান্ডা অনুভূত হলেও তুষারের বদলে আমরা কেবল বৃষ্টির মতো কুয়াশা বা শিশিরবিন্দু দেখা যায়। ফলে বাংলাদেশে তুষারের পরিবর্তে আমরা বৃষ্টি দেখি।
তবে এখনই নিরাশ হওয়ার কারণ নেই। গবেষকদের মতে, বিশ্বজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তনের যে ধারা চলছে, তাতে ২০৩০ সাল নাগাদ বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গের জেলা পঞ্চগড়ে তুষার হলেও হতে পারে। তবে তা হয়তো সাইবেরিয়া বা ইউরোপের দেশগুলোর মতো ভারী তুষার হবে না; বরং অনেকটা তুষার–বৃষ্টির মতো হালকা কোনো অভিজ্ঞতা হতে পারে। যদিও বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান অনুযায়ী এটি একটি বিরল ঘটনা হবে।