শীতকালে এত শিশির আসে কোথা থেকে

শহরের চেয়ে গ্রামে শীতের দাপট বেশি। গাঁয়ের মাঠে ফসলের গায়ে, কিংবা নরম দূর্বাঘাসে বিন্দু বিন্দু শিশির জমে। রাতে উঠানের নিম বা জামগাছ থেকে টুপটাপ শিশির পড়ে। বৃষ্টির ফোঁটার মতো শিশির। তাই দেখে আমাদের মনে হওয়া স্বাভাবিক, শিশির বুঝি আকাশ থেকে পড়ে।

আসলে কিন্তু তা নয়। বৃষ্টির মতো শিশির আকাশ থেকে পড়া সম্ভব নয়। বৃষ্টির জন্য মেঘের দরকার হয়। ভূপৃষ্ঠ, খাল-বিল, নদী-সাগর থেকে শুকিয়ে যাওয়া পানি বাষ্প হয়ে বায়ুমণ্ডলের একটা স্তরে জমা হয়। এটাও বেশি দূর নয়। মাত্র কয়েক কিলোমিটার ওপরেই মেঘ জমে। জমা হওয়া সেই জলীয় বাষ্প যখনই একটু ঠান্ডা হয়, যখন বাতাসেও পর্যাপ্ত পরিমাণ জলীয় বাষ্প জমা হয়, তখন আকাশের মেঘ জমে পানিতে পরিণত হয়। ফলে আকাশ থেকে বৃষ্টি নেমে আসে।

শিশিরের ক্ষেত্রে এমনটা হয় না।

আরও পড়ুন

খেয়াল করলে দেখবে, বছরের অন্য সময়ের তুলনায় শীতকালে শিশির বেশি দেখা যায়। আসলে শীতকালের বাতাস খুব শুষ্ক থাকে। চারপাশ থেকে প্রচুর জলীয় বাষ্প শুষে নেয় বাতাস। দিনের তাপমাত্রা যখন বেশি থাকে, তখন দ্রুত জলীয় বাষ্প শোষণ করে।

দিনে রোদ থাকে। তাই তুলনামূলক তাপমাত্রা দিনে বেশি।

সূর্য ডোবার পর থেকেই পরিবেশের তাপমাত্রা কমতে থাকে।

এখানে একটা কথা বলা জরুরি। বাতাসের তুলনায় পানি বেশি তাপ ধারণ করে। আবার পানির চেয়ে কঠিন পদার্থ, যেমন ঘরবাড়ি, ভূপৃষ্ঠ, এমনকি গাছপালাও বেশি পরিমাণে তাপ ধারণ করে। কিন্তু কঠিন পদার্থ আবার বাতাসের মতো জলীয় বাষ্প ধারণ করতে পারে না। বাষ্প সব বাতাসের ভেতরেই থাকে।

সূর্য ডুবে যাওয়ার পর পরিবেশের তাপমাত্রা দ্রুত কমতে থাকে। অন্যদিকে কঠিন বস্তুর তাপমাত্রাও কমতে থাকে। তবে একটু ধীরে।

আরও পড়ুন

সূর্য ডোবার পর যতই সময় গড়ায়, ততই ঠান্ডা হয় প্রকৃতি।

ঠান্ডা বাতাসের ঘনত্ব গরম বাতাসের তুলনায় বেশি। অর্থাৎ বাতাস যত ঠান্ডা হয়, এর অণুগুলো তত কাছাকাছি আসে। ফলে অণুগুলোর মধ্যে ফাঁকও কমে। এ অবস্থায় বাতাসের পক্ষে বেশি পরিমাণ জলীয় বাষ্প ধরে রাখা সম্ভব নয়।

আগেই বলেছি, কঠিন পদার্থের তাপ ধারণক্ষমতা বেশি। তেমনি তাপ হারানোর ক্ষমতাও বেশি। অর্থাৎ কঠিন বস্তু বাতাসের তুলনায় অনেক বেশি ঠান্ডা হয়।

ভূপৃষ্ঠও তাই খুব বেশি ঠান্ডা হয়। ঠান্ডা ভূপৃষ্ঠের কাছাকাছি থাকা বাতাস তুলনামূলক বেশি ঠান্ডা হয়। ফলে ভূপৃষ্ঠ লাগোয়া বাতাসের ঘনত্ব তত বেড়ে যায়। বাতাসের জলীয় বাষ্প জমে ভূপৃষ্ঠে চলে আসে। ভূপৃষ্ঠের ওপরে থাকা ঘাসে সেই বাষ্প জমে। এটাকেই আমরা শিশির বলি।

ঘাসের ওপর জমে থাকা শিশিরের জন্ম আসলে ভূপৃষ্ঠসংলগ্ন বায়ুমণ্ডল থেকে। এই শিশির বৃষ্টির মতো ওপর থেকে পড়ে না।

অন্যদিকে গাছের পাতা থেকে টুপটাপ করে যে বৃষ্টির মতো বড় বড় পানির ফোঁটা পড়ে, এগুলোও আকাশ থেকে পড়ে না। রাতে গাছপালা ঠান্ডা হয়, ঠান্ডা গাছপালার পাতায় কিংবা ডালে বাতাস থেকে জমে যাওয়া জলীয় বাষ্প শিশিরের মতো জমা হয়। জমতে জমতে শিশিরবিন্দুগুলো বড় পানির ফোঁটায় রূপ নেয়। ভারী হয়ে ওঠে একসময়। তখন সেটা বৃষ্টির ফোঁটার মতো টুপ করে নিচে পড়ে।

সূত্র: হাউ ইট ওয়ার্কস

আরও পড়ুন