সৌরজগতের অন্যান্য গ্রহে কি ঋতু পরিবর্তন হয়

সৌরজগতছবি: ফ্রিপিক

পৃথিবীতে প্রতিবছর একটা নির্দিষ্ট ছন্দে ঋতু পরিবর্তন হয়। গ্রীষ্ম, বর্ষা ঘুরে আসে শীতকাল। কিন্তু সৌরজগতের অন্যান্য গ্রহেও কি এমন ঋতু পরিবর্তন হয়?

এ প্রশ্নের উত্তরে যাওয়ার আগে জানতে হবে, পৃথিবীতে কেন ঋতু পরিবর্তন হয়? পৃথিবীর উত্তর-দক্ষিণে দুই মেরুকে সংযুক্ত করে একটি কল্পিত রেখা আছে। সেই রেখাকে বলে অক্ষ। এই অক্ষ একটুখানি কাত হয়ে আছে। মানে মাটিতে লাটিম ঘোরার সময় যেমন একটু কাত হয়ে থাকে, অনেকটা সে রকম। কতখানি কাত হয়ে আছে, তা–ও বিজ্ঞানীরা পরিমাপ করেছেন—প্রায় সাড়ে ২৩ ডিগ্রি। এই কাত হয়ে থাকার কারণেই যখন পৃথিবী সূর্যের চারপাশে ঘোরে। কখনো উত্তর গোলার্ধ সূর্যের দিকে একটু ঝুঁকে থাকে, আবার কখনো দক্ষিণ গোলার্ধ। যে অংশ সূর্যের দিকে ঝুঁকে থাকে, সেখানে হয় গরমকাল। আর অন্য অংশে তখন শীতকাল।

দুটি বিষয়ই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলে যেতে পারে। যেমন মঙ্গল গ্রহের অক্ষ আগে ২৫ ডিগ্রি হেলে ছিল না। ২০১৮ সালে আর্থ অ্যান্ড প্ল্যানেটারি সায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে

অন্যান্য গ্রহেও এমন ঋতু পরিবর্তন হয়। শুধু গ্রহই নয়, বরং বামন গ্রহ, এমনকি কিছু চাঁদেও হয় ঋতু পরিবর্তন। আর ওসব গ্রহ বা চাঁদে ঋতু পরিবর্তনের কারণটাও পৃথিবীর মতোই। তবে কারণ এক হলেও ঋতুগুলোর রূপ কিন্তু পৃথিবীর মতো নয়। সব গ্রহ পৃথিবীর মতো ২৩ দশমিক ৫ ডিগ্রি হেলে থাকে না। কোনোটা কম, আবার কোনোটা বেশি। সঙ্গে ওসব গ্রহ-উপগ্রহের সূর্যের চারপাশে ঘোরার পথও ভিন্ন। এ জন্য একেক গ্রহে একেক রকম ঋতু পরিবর্তন দেখা যায়।

পৃথিবী
রয়টার্স

শুরুতে মঙ্গল গ্রহের কথাই বলি। মঙ্গল গ্রহের অক্ষ প্রায় পৃথিবীর মতোই—২৫ ডিগ্রি কোণে হেলে থাকে। তাই ওই লাল গ্রহেও পৃথিবীর মতোই গ্রীষ্ম, শীত আসে। তবে ওখানে শীতকালে পানি বরফ আকারে না থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড রূপে থাকে। একে বলে ড্রাই আইস। এই বরফের কারণে মঙ্গলের মাটিতে মাকড়সার জালের মতো ফাটল তৈরি হয়।

আবার সৌরজগতের সবচেয়ে ছোট গ্রহ বুধের অক্ষ কিন্তু হেলে থাকে না। ফলে এই গ্রহে ঋতু পরিবর্তন হয় খুব সামান্য।

অন্যদিকে ইউরেনাসে ঘটে ঠিক উল্টো চিত্র। এর অক্ষ প্রায় ৯০ ডিগ্রি হেলে আছে। ফলে এই গ্রহের একপাশ সরাসরি সূর্যের দিকে মুখোমুখি থাকে, আবার কখনো থাকে পুরোপুরি অন্ধকারে। ফলে সেখানে গ্রীষ্মকালে একটানা অনেক দিন ধরে সূর্যের আলো পাওয়া যায়, আর শীতকালে থাকে দীর্ঘ অন্ধকার।

তবে শুধু অক্ষ হেলে থাকার কারণেই গ্রহের ঋতু পরিবর্তন হয় না। একটি গ্রহের কক্ষপথের আকৃতিও ঋতু পরিবর্তনে বড় ভূমিকা রাখে। যেহেতু সব গ্রহের কক্ষপথ নিখুঁত গোল নয়, উপবৃত্তাকার, তাই গ্রহগুলো কখনো সূর্যের কাছাকাছি থাকে, আবার কখনো থাকে অনেক দূরে। যেমন বুধ গ্রহের কক্ষপথ খুব বিচিত্র। তাই বুধ গ্রহের অক্ষ হেলে না থাকলেও কক্ষপথের কারণে কিছুটা ঋতু পরিবর্তন দেখা যায়। আবার বামন গ্রহ প্লুটোর কক্ষপথ এত উপবৃত্তাকার যে ঋতু পরিবর্তনে অনেক পার্থক্য দেখা যায়।

তবে এতক্ষণ যে অক্ষ হেলে থাকা আর কক্ষপথের গঠনের কথা বললাম, এই দুটি বিষয়ই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলে যেতে পারে। যেমন মঙ্গল গ্রহের অক্ষ আগে ২৫ ডিগ্রি হেলে ছিল না। ২০১৮ সালে আর্থ অ্যান্ড প্ল্যানেটারি সায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, গত কয়েক শ কোটি বছরে মঙ্গল গ্রহের অক্ষ ১০-৪০ ডিগ্রি বদলে গেছে। এ কারণে গ্রহটির বার্ষিক জলবায়ু অনেক সময় চরমভাবে বদলে গেছে।

তবে আমরা কিন্তু খুব ভাগ্যবান। আমাদের অক্ষের অবস্থান অনেকটা স্থিতিশীল, মানে বদলে যায় না। এ কারণে পৃথিবীতে হাজার হাজার বছর ধরে ঋতুর একটি নির্দিষ্ট ছন্দ বজায় আছে। তবে একেবারে যে বদলে যাচ্ছে না, তা কিন্তু নয়। অবশ্য এই বদলে যাওয়ার পরিমাণ খুব সামান্য। এ কারণেই পৃথিবীর জলবায়ুও ধীরে ধীরে বদলে যাচ্ছে। তবে সৌরজগতের আর কোনো গ্রহের অক্ষ পৃথিবীর মতো এত স্থিতিশীল নয়। এ কারণেই বলছি, আমরা কিন্তু বেশ ভাগ্যবান!

সূত্র: লাইভ সায়েন্স

আরও পড়ুন