যে রঙের পোশাক পরলে এই গরমে রক্ষা পাওয়া যাবে

উজ্জ্বল রঙের পোশাক গরমে আরাম দেবেপোশাক: বিবিয়ানা

বৈশাখী ঝড়ের শীতল বাতাসে কিছুক্ষণের জন্য অস্বস্তি কমলেও, এই ঝড়-বৃষ্টিরই দেখা নেই। বরং দিন দিন বাড়ছে গরমের প্রখরতা। দিনের বেলা রোদের খরতাপ এতই তীব্র, বাইরে বের হওয়াই মুশকিল। ছায়া ছাড়া রোদে দাঁড়ালে মনে হয় যেন মাথা ফেটে যাবে! এই উত্তপ্ত আবহাওয়ায় আরামদায়ক পোশাক ছাড়া উপায় নেই। তাই গরমে কোন রঙের পোশাক পরলে বেশি স্বস্তি পাওয়া যাবে, তা নিয়ে জানা খুব জরুরি।

শুনতে কিছুটা উদ্ভট মনে হলেও তাপ নিয়ন্ত্রণে রঙিন পোশাকের বেশ ভূমিকা আছে। বিশেষ করে রোদে রঙের কারণে তাপমাত্রা কমে-বাড়ে, কথাটা আসলেই সত্যি। অনেকেই বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করে না। ফলে বাইরে বের হলে গরমে অস্বস্তিতে বেশি পড়তে হয়। কিছু নির্দিষ্ট রঙের পোশাক পরলে শরীর ঠান্ডা থাকে, গরমও কম লাগে। এমনই তথ্য উঠে এসেছে এক গবেষণায়।

জাপানের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর এনভায়রনমেন্টাল স্টাডিজ ২০১৯ সালের জুন মাসে একটি গবেষণা করে। এতে দেখা গেছে, হালকা রঙের পোশাক ছাড়াও উজ্জ্বল রঙের পোশাকেও শরীরে তুলনামূলক ঠান্ডা থাকে।

সাদা শার্ট পরিহিত ম্যানিকুইন সবচেয়ে ঠান্ডা ছিল, তারপর হলুদ শার্ট
ছবি: ইয়াহু লাইফ

জাপানি বিজ্ঞানীরা গ্রীষ্মের সূর্যের প্রখরতায় ভিন্ন ভিন্ন রঙের ৯টি পোলো শার্ট পরা ম্যানিকুইন রাখেন। সাদা, কালো, লাল, কমলা, হলুদ, সবুজ, নীল, বেগুনি ও গোলাপি রঙের পোলো শার্টগুলো কতটা তাপ ধরে রাখে, তা জানার জন্য পাঁচ মিনিটের জন্য সূর্যের আলোতে রাখা হয়েছিল। তখন বাইরের বাতাসের তাপমাত্রা ছিল প্রায় ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কাপড়ের উপরিভাগ ও ম্যানিকুইনের তাপমাত্রা পরিমাপ করে দেখা হয়।

দেখা গেছে, সাদা শার্ট পরিহিত ম্যানিকুইন সবচেয়ে ঠান্ডা ছিল, তারপর হলুদ শার্ট। দুই শার্টের পৃষ্ঠের তাপমাত্রা প্রায় ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল। এরপরে তুলনামূলকভাবে ঠান্ডা ছিল হালকা ধূসর এবং লাল শার্ট। আর মধ্যম রঙের পোশাক বেগুনি, নীল ও সবুজ শার্ট তাপ শোষণে মাঝারি ভূমিকা রাখে। তাপমাত্রার দিক থেকে এগুলো মোটামুটি স্বাভাবিক অনুভূতি দেয়। বিশেষ করে গাঢ় সবুজ ও কালো শার্ট সবচেয়ে বেশি তাপ শোষণ করে। ফলে সবচেয়ে গরম অনুভূত হয়। কাপড়পৃষ্ঠে তাপমাত্রা পাওয়া যায় ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি।

পরীক্ষায় দেখা গেছে, উজ্জ্বল রং, যেমন সাদা পোশাকের তুলনায় গাঢ় রং বা কালো পোশাকে প্রায় ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস কম তাপমাত্রা থাকে। সাদা পোশাকের তাপমাত্রা বাতাসের তাপমাত্রার সমান ছিল। আর কালো ও গাঢ় রঙের পোশাক বাইরের তাপমাত্রার চেয়ে বেশি গরম ছিল।

আরও পড়ুন

এ ঘটনার পেছনে বিজ্ঞান হলো, উজ্জ্বল রঙের পোশাক, যেমন সাদা বেশির ভাগ আলো প্রতিফলিত করে। সাদা পোশাক সবচেয়ে কম আলো শোষণ করে। তাই রোদের মধ্যে অন্য রঙের পোশাকের তুলনায় সাদা রঙের পোশাক কম উত্তপ্ত হয়। বিপরীতে কালো এবং গাঢ় রঙের পোশাক বেশির ভাগ আলো শোষণ করে। ফলে এই রঙের পোশাক বাইরের তাপ শোষণ করে এবং শরীরকে গরম করে তোলে।

তবে এর পাশাপাশি আরেকটা দিক মাথায় রাখতে হবে। সেটা হলো সাদা পোশাক যদি আঁটসাঁট হয়, তাহলে তা ত্বকের সঙ্গে লেগে তাপ বন্দী করে ফেলবে। তাই ঢিলেঢালা সাদা পোশাকই বেছে নিতে হবে। পলিয়েস্টারের মতো কৃত্রিম সুতা তৈরি পোশাক ত্বক থেকে ঘাম শোষণ করে না এবং গরম বন্দী করে ফেলে। তাই সুতি বা লিনেনের মতো প্রাকৃতিক সুতার পোশাকই পরা উচিত। সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, পোশাক যদি নিজের কাছে আরামদায়ক না হয়, তবে তাতে অস্বস্তি ও গরম বেশি লাগবে।

সাদা পোশাকে অস্বস্তি লাগলে হলুদ, হালকা ধূসর বা লাল রঙের পোশাক পরা যায়। এই রংগুলো সূর্যের আলোকে তুলনামূলকভাবে বেশি প্রতিফলিত করে। ফলে শরীর কম তাপ শোষণ করবে এবং ঠান্ডা থাকা যাবে।

আরও পড়ুন