বাসার বিড়ালটা এমন অন্যমনস্ক কেন

আলঝেইমারের একটি নিখুঁত প্রাকৃতিক মডেল।ছবি: জগলুল পাশা

আমাদের বাসায় তিন প্রজন্মের মোট ছয়টা বিড়াল আছে। চারটা ছোট, একটা মাঝারি, আরেকটা বুড়ো বিড়াল। এর মধ্যে বুড়োটার আচরণ অন্যগুলোর থেকে পুরোপুরি আলাদা। ছোট বিড়ালগুলো সারাক্ষণ ছোটাছুটি করে। মাঝারিটাও চঞ্চল তবে বেশি ছোটে না। কিন্তু বুড়ো বিড়ালটা একদম আলাদা। চুপচাপ থাকে। আগে বিড়ালটা এমন ছিল না। ছোটাছুটি, খেলাধুলা সবই করত। বয়স বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইদানীং একদম ধীরস্থির হয়ে গেছে। কখনও তো আবার মনে হয়, চোখের পলকও বুঝি স্লো মোশনে ফেলছে।

বয়স বেড়ে যাওয়ায় শুধু আমাদের বিড়ালের এমন লক্ষণ দেখা গেছে এমন না, অনেকের বাসার বিড়ালই এমন আচরণ করে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অন্যমনস্ক হয়ে যায়। অনেক বিড়াল চেনা-পরিচিত ঘরকে চিনতে পারে না। তখন বিড়ালগুলো বিষণ্ন হয়ে ওঠে। বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি বলছেন, মানুষের পাশাপাশি পোষা প্রাণীদের এই যন্ত্রণা দূর করা সম্ভব হবে।

আরও পড়ুন

ইউনিভার্সিটি অব এডিনবরার বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, বিড়ালেরও স্মৃতিভ্রম বা ডিমেনশিয়া হয়। আর এই ডিমেনশিয়া একদম মানুষের আলঝেইমার রোগের মতো। বিজ্ঞানীরা ২৫টি মৃত বিড়ালের মস্তিষ্ক পরীক্ষা করে দেখেছেন। এদের সবার জীবদ্দশায় স্মৃতিভ্রমের লক্ষণ ছিল। যেমন, এদের মধ্যে বিভ্রান্তি দেখা দিত, ঘুমের ব্যাঘাত ঘটত এবং বিনা প্রয়োজনে ডাকাডাকি করার প্রবণতা ছিল।

গবেষণায় তাঁরা দেখতে পেয়েছেন, এই বিড়ালগুলোর মস্তিষ্কে অ্যামাইলয়েড-বিটা জমা হয়েছে। এটি একটি ক্ষতিকর প্রোটিন। মানুষের আলঝেইমার রোগ হলে এটি জমা হয়। এটি কোষের সংযোগস্থলে জমে মস্তিষ্কের কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়। ফলে স্মৃতিশক্তি ও চিন্তাভাবনার ক্ষমতা কমে যায়। বিজ্ঞানীরা এই আবিষ্কারকে বলছেন ‘আলঝেইমারের একটি নিখুঁত প্রাকৃতিক মডেল’। কারণ, এই আবিষ্কার আলঝেইমার নিয়ে আরও গবেষণায় সাহায্য করবে।

আরও পড়ুন
বিড়াল
প্রতীকী ছবি

মানুষ বা অন্য প্রাণীর জন্য ডিমেনশিয়া খুব ভয়াবহ রোগ। গবেষণায়ও বিড়ালের স্মৃতিভ্রম এবং মানুষের আলঝেইমার রোগের মধ্যে দারুণ মিল পাওয়া গেছে। তাই এখন মানুষের আলঝেইমার রোগের জন্য করা গবেষণা কাজে লাগবে পোষা প্রাণীদের জন্যও।

আগে বিজ্ঞানীরা আলঝেইমারের গবেষণার জন্য জেনেটিকভাবে পরিবর্তন করা ইঁদুরের ওপর গবেষণা করতেন। কারণ ইঁদুরের মধ্যে প্রাকৃতিকভাবে ডিমেনশিয়া দেখা যায় না। বুড়ো হলেও ইঁদুরের স্মৃতিশক্তি কমে না। তাই কৃত্রিমভাবে ইঁদুরের ডিমেনশিয়া তৈরি করে গবেষণা করতে হতো। এখন দেখা গেল, বিড়ালের ডিমেনশিয়া এমনিতেই হয়। বিজ্ঞানীরা এখন বিড়ালকে এই গবেষণার জন্য ইঁদুরের চেয়ে অনেক বেশি নির্ভরযোগ্য মডেল মনে করছেন।

তোমার পোষা বিড়ালের যদি ভুলে যাওয়ার লক্ষণ দেখা দেয়, তবে ঘাবড়ে যেও না। শীঘ্রই এমন চিকিৎসা আসবে, বিড়ালের ডিমেনশিয়া দূর করা সম্ভব হবে।

সূত্র: বিবিসি

আরও পড়ুন