সাফল্য
এই প্রথম মহাকাশে হেঁটেছেন কোনো অপেশাদার নভোচারী
নিরাপদে মহাকাশযাত্রা শেষ করে পৃথিবীতে ফিরেছে পোলারিস ডন মিশন। ১৫ সেপ্টেম্বর, রোববার পৃথিবীতে ফেরার মাধ্যমে এ মিশন এক মাইলফলক অর্জন করেছেন। এই প্রথম কোনো অপেশাদার নভোচারী স্পেসওয়াক করেছেন (মহাকাশে গিয়ে নভোযানের বাইরে হাঁটা বা ঘোরা)। এটা ছিল একটা বাণিজ্যিক স্পেস মিশন।
পোলারিস ডন মিশন কী
পোলারিস ডন মিশন পোলারিস প্রোগামের অংশ। মহাকাশ সংস্থা স্পেসএক্স ও প্রযুক্তি বিলিয়নেয়ার জারেড আইজ্যাকম্যান যৌথভাবে এ প্রজেক্ট পরিচালনা করছে। আইজ্যাকম্যান এ প্রোগ্রামে অর্থ দিয়ে সাহায্য করছে। পোলারিস ডন মহাকাশের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে ১০ সেপ্টেম্বর, মঙ্গলবার। এই প্রোগ্রামে মোট তিনটি মিশন পরিচালনা করা হবে। ইতিমধ্যে প্রথমটি সম্পন্ন হয়েছে। স্পেসএক্সের ফ্যালকন ৯ রকেটের মাধ্যমে ১০ সেপ্টেম্বর উৎক্ষেপণ করা হয় স্পেসএক্স ক্রু ড্রাগন। এর ক্যাপসুলের মধ্যে ছিলেন চার নভোচারী। এদের মধ্যে ছিলেন আইজ্যাকম্যান নিজেও। তিনি এ মিশনে কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন। পাইলট হিসেবে ছিলেন মার্কিন বিমানবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা স্কট পোটেট। এ ছাড়া বাকি দুজন হলেন স্পেসএক্সের প্রকৌশলী সারাহ গিলিস ও আনা মেনন। এই মিশনে মহাকাশ অনুসন্ধানের পাশাপাশি অর্থ সংগ্রহ করে পৃথিবীতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ করা হবে। যেমন যুক্তরাষ্ট্রের টেনেসির সেন্ট জুড চিলড্রেনস রিসার্চ হাসপাতালে তাঁরা সাহায্য করছেন।
এই মিশন কেন গুরুত্বপূর্ণ
পোলারিস ডন মিশনে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য অর্জিত হয়েছে। যেমন আইজ্যাকম্যান এবং গিলিস আলাদা আলাদাভাবে নভোযানের বাইরে গিয়ে সাত থেকে আট মিনিট ছিলেন। এটাকে স্পেসওয়াক বলে। ফলে এই মিশনের মাধ্যমে প্রথম কোনো অপেশাদার নভোচারী স্পেসওয়াক করলেন। তবে পোটিট ও মেনন ক্যাপসুলের ভিতরেই ছিলেন। এর আগে প্রায় ২৬০ জন স্পেসওয়াক করলেও তাঁরা সবাই ছিলেন পেশাদার নভোচারী। সেগুলো ছিল সরকার পরিচালিত মিশন। এটা প্রথম বাণিজ্যিক মিশনে স্পেসওয়াকও বটে।
পোলারিস ডন ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১ হাজার ৪০০ কিলোমিটার উচ্চতায় পৌঁছায়। ১৯৭২ সালে শেষবার নভোচারীরা চাঁদে যাওয়ার পর আর কেউ এত উচ্চতায় যাননি। এ ছাড়া গিলিস এবং মেনন পৃথিবী থেকে এত দূরে ভ্রমণকারী প্রথম নারী।
নভোচারীরা কখন পৃথিবীতে ফিরে এসেছেন
পাঁচ দিন মহাকাশে কাঁটিয়ে ক্যাপসুলটি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে। আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁরা ১৫ সেপ্টেম্বর পৃথিবীতে অবতরণ করেন। ফ্লোরিডার উপকূলে আটলান্টিক মহাসাগরে অবতরণ করে ক্যাপসুলটি। সেখান থেকে উদ্ধারকারীরা তাঁদের নিরাপদে জাহাজে ফিরিয়ে আনেন।
মিশন নিয়ে প্রতিক্রিয়া কী
স্পেসওয়াকের সময় আইজ্যাকম্যান বলেন, ‘ঘরে ফিরে আমাদের সবারই অনেক কাজ করতে হবে। কিন্তু এখান থেকে পৃথিবীকে একটা নিখুঁত জগৎ মনে হচ্ছে।’
এই সাফল্যের জন্য মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা অভিনন্দন জানিয়েছে। সংস্থাটির প্রধান বিল নেলসন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, ‘আজকের এই সাফল্য বাণিজ্যিক মহাকাশ শিল্পের জন্য এক বিশাল অর্জন।’
স্পেসএক্সের নির্বাহী গোয়েন শটওয়েল বলেন, ‘অত্যন্ত স্বস্তির সঙ্গে আমি আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। এই মিশনটি আমার প্রত্যাশার চেয়েও বেশি অসাধারণ ছিল। এই যাত্রায় সহযোগী হওয়ার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ।’
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী
ভবিষ্যতের জন্য আরও দুটি পোলারিস মিশন পরিকল্পনায় আছে। তবে ঠিক কখন সেগুলো পরিচালনা করা হবে, তা এখনো জানানো হয়নি। ভবিষ্যতে হয়তো আরও অনেক অপেশাদার নভোচারী মহাকাশ ভ্রমণে যেতে পারবেন। সে জন্য দরকার হবে শুধু কোটি কোটি ডলার। এছাড়া ভবিষ্যতে বাণিজ্যিক মিশনের পথও সুগম করলো পোলারিস ডন মিশন। স্পেসএক্সের পাশাপাশি হয়তো আরও অনেক বেসরকারি মহাকাশ গবেষণা সংস্থা একই পথে হাঁটবে।
সূত্র: দ্য ইউক জুনিয়র