মহাকাশ অভিযানে বিপ্লব ঘটাতে চলেছে নাসার নতুন সোলার সেইল

সোলার সেইল যেভাবে কাজ করেনাসা

মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা ২০২৪ সালের ২৩ এপ্রিল একটি নতুন সোলার সেইল বা সৌরপাল প্রযুক্তিসম্পন্ন নভোযান উৎক্ষেপণ করে। এই মহাকাশযান সফলভাবে মহাকাশে স্থাপন করা হয়েছে। এটি বর্তমানে পৃথিবী থেকে ১ হাজার কিলোমিটার ওপরের কক্ষপথে অবস্থান করছে। এরই মধ্যে এটি ৯ মিটার পাল মেলতে সফল হয়েছে। ৮০ বর্গমিটার বিস্তৃত পালটি খুলতে প্রায় ২৫ মিনিট সময় লেগেছে।

নিউজিল্যান্ডের মাহিয়াতে অবস্থিত রকেট ল্যাব লঞ্চ কমপ্লেক্স-১ থেকে একটি রকেটে চড়ে এটি মহাকাশে উড্ডয়ন করে। নাসার এই মহাকাশযানের নাম অ্যাডভান্সড কম্পোজিট সোলার সেইল সিস্টেম বা এসিএস ৩। সোলার সেইল–প্রযুক্তিতে ডিজাইন করা এই মহাকাশযান চলবে সৌরশক্তি ব্যবহার করে। কাজ করবে কিছুটা পালতোলা নৌকার মতো। পার্থক্য হলো, এখানে বাতাসের বদলে মহাকাশযানটি ব্যবহার করবে সৌরশক্তি। যদি পরিস্থিতি অনুকূল থাকে, তাহলে এটি পৃথিবী থেকে দৃশ্যমান হতে পারে।

প্রকল্পটির সঙ্গে যুক্ত থাকা বিজ্ঞানীদের মতে, ভবিষ্যতের মহাকাশ অভিযানে বিপ্লব ঘটাতে চলেছে সৌরশক্তিচালিত মহাকাশযান। এই প্রযুক্তি দূরবর্তী গ্রহ ও উপগ্রহে দীর্ঘমেয়াদি মিশন পরিচালনায় নতুন সম্ভাবনার দরজা খুলে দেবে। এযাবৎ ব্যবহৃত জ্বালানির ওপর নির্ভরশীলতার অবসান ঘটিয়ে এই স্পেসক্রাফটগুলো অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করবে। কারণ, সৌরশক্তির অফুরন্ত উৎস সূর্য, অদূর ভবিষ্যতেও এর আলো ফুরিয়ে যাবে না। সূর্য থেকে দূরে গেলে সৌরশক্তি দুর্বল হলেও একদম শেষ হয়ে যায় না। নাসা এই দুর্বল শক্তি কাজে লাগিয়েও দূরবর্তী গ্রহ ও উপগ্রহে গবেষণা পরিচালনা করতে পারবে।

আরও পড়ুন
সোলার সেইল
নাসা

মহাকাশে সোলার সেইলের ব্যবহার নতুন নয়। এর আগেও এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে মহাকাশযান উৎক্ষেপণ করা হয়েছে। ২০১০ সালে জাপানের ইকারোস নভোযানে প্রথম পরীক্ষামূলকভাবে সোলার সেইল লাগানো হয়। এই নভোযানটি প্রমাণ করে, সূর্য থেকে আসা ফোটন (আলোর কণা) মহাকাশযান নিয়ন্ত্রণে ব্যবহার করা সম্ভব। ২০১৯ সালে ‘লাইটসেল ২’ নামে আরেকটি সোলার সেইলসম্পন্ন নভোযান সফলভাবে উৎক্ষেপণ করা হয়। ওই যান ৩ বছরের বেশি সময় ধরে মহাকাশে চালু ছিল। নাসার ‘এসিএস ৩’ মিশন এই প্রযুক্তিকে আরও এগিয়ে নিচ্ছে। এটি আগের তুলনায় অনেক বড় ও উন্নত সোলার সেইল ব্যবহার করেছে। এ ছাড়া এই মিশনের মাধ্যমে সোলার সেইল–প্রযুক্তির দীর্ঘমেয়াদি কার্যকারিতা এবং মহাকাশে দীর্ঘ ভ্রমণের জন্য এর সম্ভাব্যতা পরীক্ষা করা হবে।

এই ঐতিহাসিক মিশন মহাকাশ অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। হালকা হওয়ায় সোলার সেইল–প্রযুক্তি আমাদের সৌরজগতের গভীরে আরও সহজে এবং কম খরচে যেতে সাহায্য করবে। এটি দূরবর্তী গ্রহগুলোতে মানব মিশন পাঠানোর, এমনকি সেখানে বসতি স্থাপনের পথও উন্মুক্ত করতে পারে। তবে এর সীমাবদ্ধতাগুলো আগে সমাধান করতে হবে। তবেই সৌরপাল–প্রযুক্তি মহাকাশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটাতে পারবে। এই মিশন সফল হওয়ায় নাসা আরও বড় এবং উচ্চাভিলাষী প্রকল্প ভবিষ্যতে পরিচালনা করবে বলে মনে করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন