২০২৬ সাল থেকে ক্লাসে আর স্মার্টফোন ব্যবহার করা যাবে না
দক্ষিণ কোরিয়ায় শিক্ষার্থীরা ক্লাসে আর স্মার্টফোন ব্যবহার করতে পারবে না। ২০২৬ সাল থেকে কার্যকর হবে এই আইন। এই আইন প্রয়োগের মাধ্যমে স্কুলে ফোন ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপকারী সর্বশেষ দেশ হতে যাচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়া।
দক্ষিণ কোরিয়া ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ বুধবার একটি বিল পাস করেছে। এই বিল অনুযায়ী, দক্ষিণ কোরিয়ার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলে ক্লাসের সময় মোবাইল ফোন ব্যবহার করা যাবে না। এমনকি অন্যান্য স্মার্ট ডিভাইস ব্যবহারও নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
২০২৩ সাল থেকে দক্ষিণ কোরিয়ার বেশিরভাগ স্কুলের ক্লাসরুমে স্মার্টফোন ব্যবহার সীমিত রাখা হয়েছিল। তখন এটি আইন ছিল না। স্কুলের নির্দেশনা অনুযায়ী শিক্ষার্থীরা ক্লাসরুমে ফোন ব্যবহার করতে পারত না। তবে বুধবার দেশটির জাতীয় সংসদে পাস হওয়া নতুন বিলে জরুরি অবস্থা ছাড়া স্কুলে ফোন ব্যবহার করা যাবে না। জরুরি অবস্থার বাইরে শিক্ষাগত বা অন্যান্য উদ্দেশ্য ছাড়া সারা দেশে এটি আনুষ্ঠানিকভাবে অবৈধ ঘোষণা করা হবে।
এই আইন দিয়ে কেবল ক্লাসের সময় স্মার্টফোন ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আইন ভঙ্গকারীদের জন্য কোনো শাস্তির বিধান রাখা হয়নি। তবে একই আইনের স্কুলের অধ্যক্ষ এবং শিক্ষকদের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, তাঁরা চাইলে শিক্ষার্থীদেরকে স্কুলের ক্যাম্পাসে ফোন বহন বা ব্যবহার করা থেকে বিরত রাখতে পারবেন। নতুন আইনে স্কুলগুলোকে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যকর ডিজিটাল অভ্যাস গড়ে তোলার বিষয়ে শিক্ষা দিতেও বলা হয়েছে।
কেন এই আইন বানানো হলো
অভিভাবক এবং শিক্ষকেরা বছরের পর বছর ধরে এমন একটি আইন বানাতে সরকারের কাছে আবেদন করে আসছেন। তাঁদের যুক্তি ছিল, স্মার্টফোন ব্যবহার করলে ক্লাসে ব্যাঘাত ঘটে। ক্লাসে স্মার্টফোন শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার মান নষ্ট করে। পাশাপাশি শিশুদের মানসিক বিকাশে বাঁধা দেয়।
দক্ষিণ কোরিয়ার বিরোধী দলের আইনপ্রণেতা চো জং-হুন বলেছেন, তিনি প্রথম দক্ষিণ কোরিয়ার তরুণদের স্মার্টফোন আসক্তি ঠেকাতে এই বিলের খসড়া তৈরি করেন। তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য তিনি এই আইনটির পক্ষে কাজ করেছেন।
আইনের বিরোধিতা
শিক্ষার্থীদের অধিকার নিয়ে কাজ করা কিছু ব্যক্তি বলেছেন, দেশটি এই বিষয়ে বেশি কড়াকড়ি করছে। এই আইনের বিরোধীরা গত সপ্তাহে একটি বিবৃতি দিয়েছেন। তাঁরা বলেছেন, ‘যদিও তাঁরা বিদ্যমান নিয়ম অনুযায়ী স্কুলে ফোনের ব্যবহার সীমিত করতে পারে। তবুও তাঁরা এটিকে আইন হিসেবে লিপিবদ্ধ করতে চান। এটি শিক্ষার্থীদের মৌলিক সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘন করে। যেমন যোগাযোগের স্বাধীনতা, গোপনীয়তা রক্ষা এবং আনন্দ অন্বেষণের অধিকার সরাসরি লঙ্ঘিত হয়েছে এই আইনে।’
বিশ্বের অন্যান্য দেশের পরিস্থিতি
স্মার্টফোন ব্যবহারের ওপর বিভিন্ন স্তরের নিষেধাজ্ঞা আরোপকারী অন্যান্য দেশের মধ্যে আছে ফ্রান্স, ফিনল্যান্ড, ইতালি, নেদারল্যান্ডস এবং চীন। বাংলাদেশে এমন কোনো আইন নেই। তবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নিজস্ব নির্দেশনা অনুযায়ী ফোন ব্যবহার সীমিত রাখতে পারে।
২০২৪ সালের একটি সরকারি সমীক্ষায় দেখা গেছে, দক্ষিণ কোরিয়ার ৫ কোটি ১০ লাখ মানুষ স্মার্টফোনে প্রচণ্ডভাবে আসক্ত। এই সংখ্যা মোট জনসংখ্যার প্রায় এক-চতুর্থাংশ। তাঁরা স্মার্টফোনে এমনভাবে আসক্ত, শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিক জীবনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব থাকা সত্ত্বেও কতক্ষণ ফোনটি ব্যবহার করবে তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। ১০ থেকে ১৯ বছর বয়সীদের মধ্যে এই সংখ্যা প্রায় ৪৩ শতাংশে পৌঁছেছে।
এই অবস্থার পরিবর্তন করতে কিছু স্কুল কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে। যেমন শিক্ষার্থীদের স্মার্টফোন সারাদিনের জন্য বাজেয়াপ্ত করা। গত বছর দেশটির জাতীয় মানবাধিকার কমিশন নিজেদের আগের অবস্থান থেকে সরে এসেছে। তাঁরা মত দিয়েছেন, ফোন বাজেয়াপ্ত করা শিক্ষার্থীদের অধিকার লঙ্ঘন করে না।
সূত্র: নিউইয়র্ক টাইমস