পৃথিবীতে কত ধরনের রুবিকস কিউব আছে

১৯৮০ সালে অধ্যাপক এর্নো রুবিক রুবিকস কিউবের সঙ্গেছবি: গেটি ইমেজেস

রুবিকস কিউব দেখতে সাধারণ খেলনার মতো মনে হলেও, এটি আসলে এর চেয়ে বেশি কিছু। মাত্র ছয়টি রং আর নয়টি বর্গাকার টুকরো দিয়ে বানানো এই খেলনাটি একবার এলোমেলো হয়ে গেলে আবার সব রং ও পাশ মেলাতে বেশ মাথা ঘামাতে হয়। যারা রুবিকস কিউব মেলাতে পারে, তাদের কাছে এটা দুধভাত মনে হলেও, যারা পারে না, তাদের জন্য এটি মেলানো বেশ কঠিন।

তবে রুবিকস কিউব কিন্তু প্রথমে খেলার জন্য বানানো হয়নি। এটা প্রথমে বানানো হয়েছিল শিক্ষার্থীদের ত্রিমাত্রিক কাঠামো বোঝানোর জন্য। কিন্তু খুব দ্রুতই এটি বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া পাজলে পরিণত হয়। ছোট থেকে বড়, সবার কাছে এটি একটি চ্যালেঞ্জিং খেলনা হয়ে ওঠে।

১৯৭৪ সালে হাঙ্গেরির স্থাপত্যের অধ্যাপক এর্নো রুবিক তাঁর শিক্ষার্থীদের ত্রিমাত্রিক কাঠামোর নড়াচড়া বোঝানোর একটি উপায় খুঁজছিলেন। এই ভাবনা থেকেই তিনি কাঠ, কাগজ, রাবার ব্যান্ড, আঠা আর কাগজের ক্লিপের সাহায্যে কিউবের ব্লকগুলো নিয়ে কয়েক মাস ধরে কাজ করেন। এগুলো দিয়ে তিনি প্রথমে কিউব তৈরি করেন। নাম দেন ম্যাজিক কিউব। তবে কিউবটি বানানো শেষ হলেও তিনি নিশ্চিত ছিলেন না, এটি কখনো সমাধান করা যাবে কি না। পরে এক মাস চেষ্টার পরে তিনি এটার সমাধান করতে পারেন।

এর কিছু বছর পর এক খেলনা কোম্পানির এজেন্ট এই কিউবের আইডিয়াল টয় অ্যান্ড নভেলটি কোম্পানির কাছে নিয়ে যান। কোম্পানিটি পাজলের নাম পরিবর্তন করে ‘রুবিকস কিউব’ রাখে এবং ১৯৮০ সাল থেকে এটি বিক্রি করা শুরু করে। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই সারা বিশ্বে কিউবটি সমাধান করার চ্যালেঞ্জ শুরু হয়। মাত্র দুই বছরের মধ্যে ১০ কোটি বিক্রি হয়ে যায়। ফলে রুবিকস কিউব ইতিহাসের সবচেয়ে জনপ্রিয় পাজলের খেতাব অর্জন করে।

বিভিন্ন ধরনের রুবিকস কিউব

গণিতবিদরা হিসেব করে দেখেছেন, একটি রুবিকস কিউবের ছয়টি রঙের বর্গাকার টুকরোগুলোকে মোট ৪৩,২৫২,০০৩,২৭৪,৪৮৯,৮৫৬,০০০ (৪৩ কুইন্টিলিয়ন) বিভিন্ন উপায়ে সাজানো সম্ভব। কিন্তু এতগুলো উপায়ের মধ্যে শুধু একটি উপায়ই সঠিক, যখন কিউবের প্রতিটি দিকে একই রং থাকে এবং কিউবটি পুরোপুরি মেলানো থাকে।

এর্নো রুবিক এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘কয়েক সপ্তাহ ধরে চেষ্টা করার পর অবশেষে যখন কিউবটি মেলাতে পারি, তখন বেশ স্বস্তি লাগে। এখন যখন দেখি স্পিডকিউবাররা কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে রুবিকস কিউব মিলিয়ে ফেলে, তখন বেশ মজা লাগে। কারণ, এটা মেলাতে আমার এক মাস সময় লেগেছিল।’

স্পিডকিউবার হলো যারা খুব দ্রুত সময়ে কিউব মেলাতে পারে। রুবিকস কিউব সমাধানের বর্তমান রেকর্ডটি ম্যাক্স পার্কের দখলে, যা মাত্র ৩.১৩ সেকেন্ডের। ২০২৩ সালের ১১ জুন অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড কিউব অ্যাসোসিয়েশনের একটি আনুষ্ঠানিক প্রতিযোগিতায় এই বিশ্ব রেকর্ডটি তৈরি করেছিলেন।

৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে রুবিকস কিউব বিশ্বের সবচেয়ে আকর্ষণীয় পাজলগুলোর মধ্যে একটি হয়ে উঠেছে। বিশ্বব্যাপী ৩৫ কোটিরও বেশি কিউব বিক্রি হয়েছে। আর যদি নকলগুলো কিউবগুলো যোগ করা হয়, তবে সংখ্যাটি আরও অনেক বেশি হবে। দ্রুত সমাধানের কৌশল, কিউবের নকশা বিশ্লেষণ বা এর শত শত বই প্রকাশিত হয়েছে। ইউটিউবে হাজার হাজার টিউটোরিয়াল ভিডিও আছে কিউব মেলানোর।

রুবিকস কিউব বলতে সাধারণত আমরা এর্নো রুবিক উদ্ভাবিত ক্লাসিক ৩x৩x৩ কিউবটিকে বুঝি। তবে, রুবিকস কিউবের ধারণা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে বহু ধরনের পাজল কিউব তৈরি হয়েছে, যা বিভিন্ন আকার, আকৃতি এবং সমাধানেও রয়েছে জটিল জটিল ধাপ। এগুলোকে সাধারণত ‘টুইস্টি পাজল’ বলা হয়। জনপ্রিয় রুবিকস কিউব মধ্যে রয়েছে ২x২। এটাকে পকেট কিউব বা মিনি কিউব ও বলা হয়ে থাকে। এটি ৩x৩ কিউব থেকে মেলানো সহজ। তাই নতুন কেউ শিখতে চাইলে এটা দিয়ে শুরু করতে পারে।

৩x৩ কিউবকে বলা হয় ক্লাসিক রুবিকস কিউব। রুবিকস রিভেঞ্জ হলো ৪x৪। এটি ৩x৩ এর চেয়ে বেশ কঠিন। এরপর রয়েছে ৫x৫ মানে প্রফেসরস কিউব। এটার পরে রয়েছে ৬x৬ ভি-কিউব ৬ এবং ৭x৭ ভি-কিউব ৭ এগুলো বড় আকারের কিউব। এর থেকে আরও বড় আকারের কিউব পাওয়া যায় ১৩x১৩x১৩। এমনকি ৩৩x৩৩x৩৩ আকারের কিউবও পাওয়া যায়। এগুলো তো গেল ঘনক আকৃতির।

১৯৭৪ সালে হাঙ্গেরির স্থাপত্যের অধ্যাপক এর্নো রুবিক এই কিউবটি একমাস খেটে বানিয়েছিলেন

এগুলো ছাড়াও আরও রয়েছে অদ্ভুত আকারের পাজল কিউব। পিরামিডের আকৃতির পিরামিঙ্কস (Pyraminx) কিউব। এটা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে মেলাতে হয়। ১২টি মুখবিশিষ্ট কিউব মেগামিনক্স (Megaminx)। এটার আকৃতিকে বলা হয় ডোডেকাহেড্রন। বিভিন্ন আকারের ব্লক দিয়ে তৈরি করা হয়েছে মিরর কিউব (Mirror Cube)। কোণগুলো ঘুরিয়ে মিলাতে হয় স্কিউব (Skewb) নামের কিউব। দেখতে মিরর কিউবের মতো, কিন্তু আরও কঠিন হলো ঘোস্ট কিউব (Ghost Cube)। এটাকে শেপ-শিফটার পাজলও বলা হয়। আরও রয়েছে স্কয়ার-১ (Square-1) ও অ্যাক্সিস কিউব (Axis Cube)। এই কিউবগুলো এলোমেলো হলে ভিন্ন জটিল আকৃতি ধারণ করে।

জাপানের খেলনা নির্মাতা প্রতিষ্ঠান মেগা হাউস গত বছর প্রায় দুই বছর চেষ্টা করে বিশ্বের সবচেয়ে ছোট রুবিকস কিউব তৈরি করেছে। অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি এই কিউবটির আকার মাত্র পাঁচ মিলিমিটার। তবে এটা মেলাতে হলে ব্যবহার করতে হবে চিমটা।

ওয়ার্ল্ড কিউব অ্যাসোসিয়েশন এখন প্রতি বছর হাজারটিরও বেশি স্পিড কিউবিং প্রতিযোগিতার আয়োজন করে থেকে। এগুলোতে অনলাইনে অংশ নেওয়া যায়। এছাড়াও বিভিন্ন স্কুল কলেজের ফেস্টে রুবিকস কিউব নিয়ে পর্ব বা প্রতিযোগিতা থাকে। তুমিও চাইলে সেগুলোতে অংশ নিতে পার।

সূত্র: দ্য নিউইয়র্ক টাইমস, স্মিথসোনিয়ান ম্যাগাজিন, ওয়ার্ল্ড কিউব অ্যাসোসিয়েশন

আরও পড়ুন