এই ৭ খাবারকে ঐতিহ্যবাহী বলে স্বীকৃতি দিয়েছে ইউনেস্কো

খাবার কি শুধু পেট ভরানোর জন্য? মোটেই না। খাবার একধরনের শিল্প, যা বিভিন্ন সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যের সঙ্গে জড়িত। প্রতিবছর ঐতিহাসিক স্থাপনা আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রক্ষার কাজ করে জাতিসংঘ শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা ইউনেস্কো। এ কাজের পাশাপাশি তারা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সঙ্গে সম্পর্ক আছে, এমন বিষয়গুলোকে তালিকাভুক্ত করে। এই তালিকায় আছে নাচ, গান আর মজাদার খাবার। চলো ইউনেস্কোর তালিকাভুক্ত ৭টি আইকনিক খাবার নিয়ে কিছু জানা যাক।

১. টম ইয়াম কুং

টম ইয়াম কুং টক-ঝাল স্বাদের জন্য এতে লেবুর রস ও তেঁতুল মেশোনো থাকে
ছবি: আলামি

থাইল্যান্ডের জনপ্রিয় ও ঐতিহ্যবাহী স্যুপ টম ইয়াম কুং। এটি মূলত একটি টক-ঝাল ও মসলাদার স্যুপ। থাইল্যান্ডে স্থানীয় লোকজন এটিকে ‘টম ইয়াম’ নামেই ডাকেন। ‘টম’ শব্দের অর্থ হলো সিদ্ধ, ‘ইয়াম’ মানে বিভিন্ন উপাদান মিশিয়ে মসলাদার সালাদ আর ‘কুং’ বলতে চিংড়ি বোঝানো হয়। স্যুপটিতে প্রধানত থাকে লেমনগ্রাস, কাফির লাইম পাতা, থাই আদা এবং থাই মরিচ। টক-ঝাল স্বাদের জন্য এতে লেবুর রস ও তেঁতুল মেশোনো থাকে। স্যুপটিকে আরও সুস্বাদু করতে এতে চিংড়ি, মুরগি অথবা মাশরুম দেওয়া হয়। বিশ্বজুড়ে থাই খাবারের জনপ্রিয়তার সঙ্গে সঙ্গে টম ইয়াম কুংয়ের কদর দিন দিন বাড়ছে। ২০২৪ সালে ইউনেস্কোর তালিকায় স্থান পেয়েছে টম ইয়াম কুং স্যুপ।

আরও পড়ুন

২. কুসকুস

কুসকুস চারটি দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অংশ

আলজেরিয়া, মৌরিতানিয়া, মরক্কো ও তিউনিসিয়ার মতো দেশগুলোতে কুসকুস অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি খাবার। এটি মূলত একটি ঐতিহ্যবাহী পাস্তা, যা সেমোলিনা বা একধরনের সুজি দিয়ে তৈরি হয়। অনেকটা ছোট দানার মতো দেখতে। খাবারটি এই চারটি দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অংশ। সাধারণত, এটি মাংস, বিভিন্ন সবজি ও মসলার সঙ্গে সেদ্ধ করে পরিবেশন করা হয়। কুসকুসের ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব বিবেচনা করে ২০২০ সালে ইউনেস্কো এটিকে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে।

৩. কিমচি

মুলা, শসা বা পেঁয়াজের মতো সবজি দিয়েও বানানো যায় কিমচি
ছবি: এএফপি

দক্ষিণ কোরিয়ার জাতীয় খাবার হিসেবে কিমচি বিশ্বজুড়ে পরিচিত। এটি মূলত লবণাক্ত ও গাজন করা একধরনের সবজি। গাজন একধরনের রাসায়নিক প্রক্রিয়া। এই খাবারে থাকে বিভিন্ন ধরনের মসলা। কিমচি বানানোর মূল উপাদান বাঁধাকপি। এ ছাড়া মুলা, শসা বা পেঁয়াজের মতো সবজি দিয়েও বানানো হয়। ধারণা করা হয়, ৩ হাজার বছরের বেশি আগে থেকে কিমচি তৈরি করার প্রক্রিয়াটি কোরিয়ানরা ব্যবহার করছে। ২০১৩ সালে ইউনেস্কো কিমচি তৈরি করার ঐতিহ্যবাহী পদ্ধতি অর্থাৎ ‘গিমজাং’-কে অদৃশ্য সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে।

আরও পড়ুন

৪. বাগেট

বাগেট একধরনের রুটি
ছবি: এএফপি

বাগেট ২০২৩ সালে ইউনেস্কোর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়। এটা একধরনের রুটি। এটি ফ্রান্সের ঐতিহ্যবাহী খাবার। লম্বা আকৃতির এই রুটি দিয়ে ফ্রান্সে জনপ্রিয় স্যান্ডউইচগুলো তৈরি করা হয়।

৫. লাভাশ

মাটির নিচের বিশেষ চুলায় তৈরি করা হয় লাভাশ
ছবি: আলামি

একধরনের পাতলা রুটিকে বলে লাভাশ। আর্মেনিয়া, ইরান এবং তুরস্কসহ ককেশাস ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে এটি অত্যন্ত জনপ্রিয়। লাভাশ তৈরি হয় ময়দা, পানি আর লবণ দিয়ে। সাধারণত খুব পাতলা ও নরম হয়। ঐতিহ্যগতভাবে, এটি মাটির নিচের বিশেষ চুলায় তৈরি করা হয়। লাভাশ বিয়ের অনুষ্ঠানে বা অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পারিবারিক অনুষ্ঠানে পরিবেশন করা হয়। ২০১৪ সালে লাভাশকে আর্মেনিয়ার অমূল্য সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে ইউনেস্কো স্বীকৃত দিয়ে তালিকাভুক্ত করে।

আরও পড়ুন

৬. নেপোলিটান পিৎজা

নেপোলিটান পিৎজা
ছবি: আলামি

নেপোলিটান পিৎজা ইতালির নেপলস শহরের এক ঐতিহ্যবাহী খাবার। বেজ বা ভিত্তি একদম পাতলা আর নরম। কিন্তু চারপাশের ক্রাস্টটা উঁচু, তুলতুলে ও ফোলা। এই পিৎজা তৈরিতে ব্যবহার করা হয় ভিসুভিয়াসের আগ্নেয়গিরির সমভূমিতে জন্ম নেওয়া বিশেষ ধরনের টমেটো। এর সঙ্গে মোজারেলা ডি বুফালা অথবা ফিওর ডি লাত্তের মতো ঐতিহ্যবাহী পনির ব্যবহার করা হয়। নেপোলিটান পিৎজা ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাজ্যের একটি ঐতিহ্যবাহী বিশেষ পণ্য হিসেবে স্বীকৃত এবং ইউনেস্কো স্বীকৃত।

৭. ওয়াশোকু

ওয়াশোকুতে স্বাস্থ্যকর এবং এতে তাজা উপাদান ব্যবহার করা হয়
ছবি: গেটি ইমেজেস

জাপানের ঐতিহ্যবাহী খাবার ওয়াশোকু। দেশটির রন্ধনশিল্পের এক বিশেষ ধারা এটি। এই রান্নার প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো, এটি স্বাস্থ্যকর এবং এতে তাজা উপাদান ব্যবহার করা হয়। পাশাপাশি ঋতু অনুযায়ী প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে এতে ফুটিয়ে তোলা হয়। ওকোনোমিয়াকি, তেম্পুরা বা সুশির মতো জাপানে প্রচলিত প্রায় সব খাবারই ওয়াশোকুর অন্তর্ভুক্ত। ২০১৩ সালে ওয়াশোকুকে তালিকাভুক্ত করা হয় ইউনেস্কোর অদৃশ্য সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায়।

সূত্র: দ্য টেলিগ্রাফ, ইউনেস্কো

আরও পড়ুন