প্রাকৃতিক উপাদান মানেই কি ত্বকের জন্য ভালো?

পণ্যের গায়ে যদি 'প্রাকৃতিক' তকমাটা থাকে, তবে সবাই একটু বেশি নির্ভর করে। মডেল: আনিকা, সাজ: হারমনি স্পা, ছবি: কবির হোসেনছবি: কবির হোসেন

যেদিন বাইরে অনেক রোদ থাকে, ঘর থেকে সেদিন একটু সাবধানে বের হতে হয়। রোদে ত্বক যেন পুড়ে না যায়, তাই একটু সানস্ক্রিন, একটু ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতেই হয়। এছাড়া স্কিন কেয়ারের জন্য অনেকেই বিভিন্ন পণ্য ব্যবহার করে। মেকআপ থেকে শুরু করে স্কিনকেয়ার, সব ধরনের পণ্য এখন বহু মানুষ প্রতিদিন ব্যবহার করে।

এসব পণ্যের গায়ে যদি 'প্রাকৃতিক' তকমাটা থাকে, তবে সবাই একটু বেশি নির্ভর করে। বিজ্ঞাপনে সবসময় জোড় গলায় বলা হয়, আমাদের এই পণ্যটি প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে তৈরি।

আমরা নিজেদের অজান্তেই ধরে নিই, প্রকৃতি থেকে পাওয়া যেকোনো কিছুই আমাদের জন্য নিরাপদ আর উপকারী। সিনথেটিক বা কৃত্রিম উপাদানগুলোর চেয়ে তাই প্রাকৃতিক পণ্যের প্রতি আমাদের ভরসা একটু বেশিই থাকে। কিন্তু এই ধারণা কি সব সময় সত্যি? প্রতিটি প্রাকৃতিক পণ্যে কি পুরোপুরি প্রাকৃতিক উপাদান থাকে? আর থাকলেই কি সেটা আমাদের ত্বক বা মুখের জন্য পুরোপুরি নিরাপদ?

আরও পড়ুন

গবেষকেরা বলছেন, সব ক্ষেত্রে এই ধারণা ঠিক নয়। ইউনিভার্সিটি অব নটিংহামের চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ড. রোজালিন্ড সিম্পসন মনে করেন, 'প্রাকৃতিক' শব্দটি এখন বাজারজাতকরণের একটি বড় হাতিয়ার। এই লেবেল দেখলেই বিক্রেতারা পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেন, কারণ মানুষের মনে একটি ভুল ধারণা গেঁথে আছে, কৃত্রিম উপাদানগুলো ক্ষতিকর, আর যা কিছু 'প্রাকৃতিক', তা ত্বকের জন্য ভালো ও নিরাপদ। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন।

প্রথমত, 'প্রাকৃতিক' হিসেবে বিক্রি হওয়া অনেক পণ্যই প্রকৃতি থেকে পুরোপুরি আসে না। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, অ্যামাজনে 'প্রাকৃতিক' হিসেবে বাজারজাত করা ১০০টি স্কিনকেয়ার পণ্যের মধ্যে মাত্র ৪২ শতাংশে সত্যিকারের প্রাকৃতিক উপাদান ছিল। বেশিরভাগ পণ্যেই অন্তত দুটি কৃত্রিম উপাদান পাওয়া গেছে।

আরও পড়ুন

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, কোনো উপাদান প্রাকৃতিক উৎস থেকে এসেছে বলেই তা সব ধরনের ত্বকের জন্য ভালো হবে, এমন না। যদিও উদ্ভিদ থেকে পাওয়া, দারুচিনি, টি ট্রি বা পেপারমিন্টের মতো এসেনশিয়াল তেলগুলো সংবেদনশীল ত্বকের মানুষের জন্য জ্বালা বা অ্যালার্জির কারণ হতে পারে। একইভাবে, ভেড়ার পশম থেকে পাওয়া ল্যানোলিন নামক একটি ময়েশ্চারাইজিং উপাদান থেকেও অনেকের ত্বকে প্রতিক্রিয়া দেখা যায়।

অন্যদিকে, কিছু কৃত্রিম উপাদান গবেষকেরা বৈজ্ঞানিকভাবে তৈরি করেন, যেগুলো ত্বকের জন্য প্রাকৃতিক উপাদানের চেয়ে আরও বেশি কোমল হয়। ক্ষতিকর প্রতিক্রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। কিছু সুগন্ধি বা রং কৃত্রিমভাবে তৈরি করা হয় সংবেদনশীল ত্বকে ব্যবহারযোগ্য করে। ল্যাবে পরীক্ষা করা এবং নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য নিয়ে তৈরি করা এসব উপাদান ত্বকের জন্য বরং নিরাপদ হতে পারে।

আরও পড়ুন

ড. সিম্পসনের মতে, সব প্রাকৃতিক পণ্যই যে 'ভালো', আর সব কৃত্রিম পণ্যই যে 'খারাপ', তা বলা যায় না। আসল কথা হলো, তোমার ত্বকের জন্য কোনটি সবচেয়ে ভালো কাজ করে, সেটি খুঁজে বের করা। সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ হলো এমন পণ্য বেছে নেওয়া, যা তোমার ত্বক সহ্য করে এবং যা তোমার বাজেটের সঙ্গেও মানানসই।

যদি তোমার ত্বক সংবেদনশীল হয়, তবে এমন পণ্য ব্যবহার করার চেষ্টা করো যেখানে উপকরণের সংখ্যা সবচেয়ে কম। আর যদি তুমি কোনো পণ্যের কারণে ত্বকের কোনো নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া হচ্ছে এমন সন্দেহ করো, তবে সেটি ব্যবহার থেকে বিরতি নাও। এমনকি সেটি ব্যবহার শুরু করার কয়েক মাস পরেও বিরতি নিতে পারো। কিছুদিন পর আবার ব্যবহার শুরু করলে তুমি বুঝতে পারবে, তোমার ত্বকের সমস্যার জন্য আসলেই সেই পণ্যটি দায়ী ছিল কি না? নিজের ত্বকের প্রয়োজন বুঝতে পারা সবচেয়ে জরুরি।

আরও পড়ুন