গাজর না, খরগোশের প্রিয় খাবার ঘাস

মনের আনন্দে ঘাস খাচ্ছে দুটি খরগোশ। ছবিটি ময়মনসিংহ শহরের কাঠগোলা থেকে তোলা।ছবি: জগলুল পাশা

খরগোশ শব্দটা শুনলেই আমাদের চোখে ভেসে ওঠে একটা ছবি, ছোট্ট একটি খরগোশ দাঁত বসিয়েছে টুকটুকে কমলা রঙের গাজরে। কার্টুন, গল্পের বই আর বিজ্ঞাপনের কারণে এই দৃশ্য এত পরিচিত যে আমরা ধরে নিয়েছি, গাজরই বুঝি খরগোশের প্রিয় খাবার। গাজর খেয়েই বুঝি খরগোশ বেঁচে থাকে। কিন্তু সত্য হলো, গাজর খরগোশের জন্য খুব একটা ভালো খাবার নয়। কারণ, এতে অনেক সুগার বা চিনি থাকে।

খরগোশের শরীর তৈরি হয়েছে একেবারে ভিন্ন ধরনের খাবারের জন্য। বন্য খরগোশ হোক বা বাড়িতে পালা পোষা খরগোশ, সবগুলোর ক্ষেত্রেই সুস্থ থাকার জন্য সঠিক খাদ্যাভ্যাস দরকার হয়। প্রশ্ন হলো, খরগোশ আসলে কী খায়?

খরগোশের পরিপাকতন্ত্র মূলত আঁশযুক্ত খাবার হজম করার জন্য তৈরি। তাই তাদের খাদ্যতালিকার বড় অংশজুড়ে থাকে ঘাস ও খড়জাতীয় খাবার। বনে থাকা খরগোশ নানা ধরনের ঘাস, পাতা এমনকি কখনো কখনো গাছের বাকলও খায়। আর যেসব খরগোশ আমরা বাড়িতে পুষি, এদের খাবার সাধারণত তাজা খড়, সবুজ শাকপাতা আর সামান্য পরিমাণ বিশেষ পিলেট বা মিক্স ফিড।

আরও পড়ুন

খরগোশের খাদ্যতালিকার মূল খাবার হলো খড়। এটি খরগোশের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। এতে থাকা আঁশ খরগোশের হজমপ্রক্রিয়াকে ঠিক রাখে, দাঁত অতিরিক্ত বড় হওয়া থেকে রক্ষা করে এবং শরীরকে সক্রিয় ও সুস্থ রাখতে প্রয়োজনীয় পুষ্টি জোগায়। অনেক সময় খাদ্যে বৈচিত্র্য আনতে খড়ের সঙ্গে ঘাসও খায়।

খরগোশের আরেকটি প্রিয় খাবার সবুজ শাকপাতা। লেটুস, বাঁধাকফি থেকে শুরু করে পাতাজাতীয় সবজি এদের শরীরে ভিটামিন ও পানির ঘাটতি পূরণ করে। এগুলোই হওয়া উচিত খরগোশের দৈনিক তাজা খাবারের বড় অংশ। এর পাশাপাশি অল্প পরিমাণে ব্রকলি, মটর ইত্যাদি দেওয়া যেতে পারে।

তবে সব সবজি খরগোশের জন্য নিরাপদ নয়। আলু বা ভুট্টার মতো শর্করাযুক্ত খাবার না দেওয়াই ভালো। আঁশসমৃদ্ধ খাবার খরগোশের জন্য সবচেয়ে উপকারী। গাজরে চিনি বেশি থাকায় আসলে খরগোশ খুব অল্প পরিমাণে গাজর খেতে পারে। তবে গাজরের পাতা খরগোশের জন্য বেশ ভালো খাবার।

অনেক পোষা খরগোশ পিলেট বা জৈব খাবার খায়। ভালো মানের পিলেট খরগোশ খেতে পারে। তবে এটিকে কখনোই প্রধান খাবার বানানো উচিত নয়। বনে থাকা খরগোশ তো কোনো পিলেট খায় না। এরা সব পুষ্টি পায় গাছপালা থেকে। তাই পোষা খরগোশের ক্ষেত্রেও উদ্ভিদভিত্তিক খাবারই হওয়া প্রধান খাদ্য হওয়া উচিত। দিনে অল্প কিছু পিলেট খরগোশের পুষ্টির ঘাটতি পূরণে সাহায্য করতে পারে, তবে সেগুলোতে অপ্রয়োজনীয় উপাদান বা ফিলার যেন না থাকে।

আরও পড়ুন

খরগোশের সুস্থতার জন্য শুধু কী খাচ্ছে, তা নয়, কতটুকু খাচ্ছে আর কতক্ষণ পরপর খাচ্ছে, সেটাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। খড় এমন খাবার যা সারাক্ষণই খরগোশের কাছে রাখা যায়। তাজা শাকপাতা দিনে এক বা দুইবার দেওয়া ভালো। সাধারণভাবে খরগোশের ওজন প্রতি দুই কেজি হলে এক থেকে দেড় কাপ শাকপাতা যথেষ্ট। পিলেট দিতে হলে সেটাও দিনে এক বা দুইবার, খুব অল্প পরিমাণে।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো পানি। খরগোশের কাছে সব সময় পরিষ্কার পানি থাকা প্রয়োজন। প্রতিদিন অন্তত একবার, সম্ভব হলে দুবার পানি বদলে দেওয়া ভালো।

খরগোশের বয়স, নড়াচড়া, স্বাস্থ্য আর জাতভেদে খাবারের পরিমাণ কিছুটা কমবেশি হতে পারে। তাই কোনো সন্দেহ হলে পশুচিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া নিরাপদ। মনে রাখতে হবে, ঘাস, খড় আর সবুজ পাতা খরগোশের প্রিয় খাবার, গাজর নয়।

সূত্র: হাউ স্টাফ ওয়ার্কস

আরও পড়ুন