টিয়া পাখি কি নিজের বলা কথা বুঝতে পারে
বন্য পরিবেশে টিয়া পাখিরা নানা ধরনের শব্দ করে ডাকে। এর মাধ্যমে নিজেদের দলের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। পাখি হিসেবে এরা খুবই সামাজিক। জটিল সব ধ্বনি ব্যবহার করে খাবারের অবস্থান জানায়, বিপদের সতর্কতা দেয় বা একে অপরের উপস্থিতি জানান দেয়। গবেষণায় দেখা গেছে, কিছু টিয়া পাখির নিজস্ব ‘সিগনেচার কল’ থাকে, যা ব্যবহারে তারা নির্দিষ্ট সঙ্গীকে আলাদা করে চিনতে পারে। অনেকটা মানুষের নাম ধরে ডাকার মতো।
কিন্তু মানুষের সঙ্গে বসবাস শুরু করলে টিয়া পাখি আর সেই ‘পাখির ভাষা’ শেখার সুযোগ পায় না। এর বদলে এরা চারপাশে শোনা মানুষের কথাবার্তা অনুকরণ করতে শেখে। তখন স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে, টিয়া পাখিরা কি সত্যিই বোঝে তারা কী বলছে, নাকি কেবল শব্দ নকল করছে?
এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন বোস্টন ইউনিভার্সিটির মনোবিজ্ঞানী অধ্যাপক আইরিন পেপারবার্গ। টিয়া পাখির ভাষা শেখার ক্ষমতা নিয়ে তাঁর গবেষণা বিশ্বজুড়ে পরিচিত। তাঁর গবেষণার সবচেয়ে বিখ্যাত সঙ্গী ছিল অ্যালেক্স নামের একটি আফ্রিকান গ্রে টিয়া পাখি। যেটিকে বলা যায় এককথায় বিস্ময়কর।
অ্যালেক্স ১০০টির বেশি বস্তু, রং ও কাজের নাম জানত। সে ছয় পর্যন্ত গুনতে পারত এবং এমনকি ‘শূন্য’ ধারণাটিও বুঝত। কোনো বস্তু দেখানো হলে সে এর রং, আকার ও উপাদান শনাক্ত করতে পারত। শুধু তা–ই নয়, বড়–ছোট, একই–আলাদা—এ ধরনের তুলনামূলক ধারণাও সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারত।
ওয়াশিংটনের পিউজেট সাউন্ড ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক এরিন কলবার্ট–হোয়াইট বলেন, টিয়া পাখিরা বাস্তব জগতের বস্তু ও শব্দের মধ্যে সম্পর্ক তৈরি করতে পারে। যেমন কেউ যদি বারবার ‘চিনাবাদাম’ শব্দটি বলে এবং একই সঙ্গে সত্যিকারের চিনাবাদাম দেয়, তাহলে পাখিটি ধীরে ধীরে বুঝে ফেলে এই শব্দের অর্থ ওই খাবার।
তবে বিমূর্ত বা আবেগভিত্তিক শব্দ, যেমন ভালোবাসি ইত্যাদি কথা টিয়া পাখি পুরোপুরি অর্থসহ বুঝতে পারে না। কিন্তু এরা নির্দিষ্ট পটভূমিতে এসব শব্দ ব্যবহার করতে শেখে। যেমন ‘হ্যালো’ শব্দটি। কেউ রুমে ঢুকলে এই শব্দ বলা হয়, এটা বারবার শুনে টিয়া পাখিও অভ্যাস করে ফেলতে পারে। পাখিটি বুঝে যায়, এ শব্দটি বললে মালিক খুশি হয় এবং আদর করে। এভাবেই তৈরি হয় একটি ‘রিওয়ার্ড সাইকেল’ বা পুরস্কার দেওয়ার পর্যায়। এভাবে টিয়া নির্দিষ্ট ঘটনা বা প্রসঙ্গ অনুযায়ী শব্দ ব্যবহার করতে শেখে।
একবার অ্যালেক্স পরীক্ষাগারে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাগজ টেনে ছিঁড়ে ফেলেছিল। পেপারবার্গ রেগে গেলে অ্যালেক্স বলে ওঠে, ‘আই অ্যাম সরি’। আসলে এই শব্দ সে আগেই শিখেছিল। একবার একটি কাপ ভেঙে যাওয়ার পর পেপারবার্গ প্রথমে রেগে গিয়ে পরে তাকে শান্ত করে বলেছিলেন, ‘আই অ্যাম সরি, ইউ ওকে?’। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই অ্যালেক্স বুঝে নিয়েছিল, এ বাক্যটি বললে রাগ কমে যায়।
সব টিয়া পাখি অবশ্য কথা বলে না। বিশেষ করে যদি এরা আরেকটি পাখির সঙ্গ পায়। তখন এরা মানুষের ভাষার চেয়ে নিজেদের ডাকেই বেশি মনোযোগী হয়। পেপারবার্গ বলেন, ‘আমরা প্রায়ই প্রাণীদেরকে আমাদের চেয়ে কম বুদ্ধিমান মনে করি। অথচ এরাই আমাদের ভাষা শেখার চেষ্টা করে। আর আমরা এখনো এদের ভাষা পুরোপুরি বুঝতে পারিনি।’
তবে টিয়া একটি বন্য প্রাণী। আমাদের দেশের বন্য প্রাণী আইনে এটিকে ধরা বা পোষা দণ্ডনীয় অপরাধ। খেয়াল রেখো, বনের পাখি বনেই থাকা ভালো।
সূত্র: লাইভ সায়েন্স