পরিত্যক্ত গবেষণাকেন্দ্রের বারান্দায় ভালুক

দ্য গার্ডিয়ান–এর চোখে ২০২৫ সালকে ফুটিয়ে তোলে এমন ছবির তালিকায় স্থান পেয়েছে ছবিটি। ছবির পেছনের গল্প থাকল কিআ পাঠকের জন্য।

রাশিয়ার চুকোটকার উপকূলের কাছে কোলিউচিন দ্বীপ। সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে জায়গাটি বেশ নীরব থাকে। সাগরের বরফ গলে গেছে। আর্কটিকের পরিচিত দৃশ্য বদলে যাচ্ছে। ঠিক এই সময়েই একদল মেরু ভালুক কিছুদিনের জন্য আশ্রয় নিয়েছে বহু বছর ধরে পরিত্যক্ত একটি মেরু গবেষণাকেন্দ্রের ছোট ছোট ভবনে। ভাদিম মাখোরভের ক্যামেরায় ধরা পড়েছে দৃশ্যটি। জলবায়ু আর বন্য প্রাণীর বাস্তবতা ধরা পড়েছে এই ছবিতে।

ভাদিম মাখোরভ লিখেছেন, তিনি চুকোটকার আশপাশের সাগরপথে ভ্রমণ করছিলেন। গন্তব্য ছিল র‌্যাঙ্গেল দ্বীপ। পথেই জাহাজ থামে কোলিউচিন দ্বীপে। এখানে সেপ্টেম্বর নাগাদ সমুদ্রের বরফ গলে যায়, ফলে মেরু ভালুকদের বাধ্য হয়ে কিছু সময় স্থলে কাটায়। শিকার করার জন্য এরা বরফের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু বরফ না থাকলে অপেক্ষা ছাড়া উপায় থাকে না। সেই অপেক্ষার সময়টুকু কাটানোর জন্যই অনেক ভালুক আশ্রয় নিয়েছে দ্বীপের পরিত্যক্ত গবেষণাকেন্দ্রে।

আরও পড়ুন

ড্রোন উড়িয়ে ভাদিম মাখোরভ প্রথমে ভালুকগুলোর উপস্থিতি টের পান। ওপর থেকে দেখেই গুনে ফেলেন, প্রায় ২০টি মেরু ভালুক। যাত্রাপথে দুবার কোলিউচিন দ্বীপে থামার সুযোগ হওয়ায় টানা দুই দিন তিনি এই ভালুকদের চলাফেরা, বিশ্রাম আর অপেক্ষার মুহূর্তগুলো ধারণ করেন। ছোট ছোট ভবনগুলো যেন এদের অস্থায়ী ঘর হয়ে উঠেছে। বাতাস আর বৃষ্টির হাত থেকে বাঁচার নিরাপদ আশ্রয় এগুলো।

একটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে, একটি মেরু ভালুক গবেষণাকেন্দ্রের একটি ঘরের বারান্দায় আরাম করে শুয়ে আছে। কোনো তাড়া নেই। কোনো উত্তেজনা নেই। বরফ আবার জমাট বাঁধবে, এই আশায় এরা শুধু অপেক্ষা করছে। আশ্চর্যের বিষয়, ভালুকগুলোর মধ্যে কোনো সংঘর্ষ বা আগ্রাসনও চোখে পড়েনি। সবাই নীরবে নিজেদের জায়গা বেছে নিয়েছে।

ভাদিম জানান, দ্বীপে নেমে ছবি তোলা ছিল খুব ঝুঁকিপূর্ণ। তাই তিনি জাহাজেই ছিলেন এবং ড্রোনের সাহায্যে দৃশ্য ধারণ করেন। বন্য প্রাণ, বিশেষ করে মেরু ভালুক চিত্রায়ণে ড্রোন ব্যবহারে তাঁর অভিজ্ঞতা আছে। তিনি জানেন কীভাবে ড্রোন ওড়ালে প্রাণীরা ভয় পাবে না বা কোনো ক্ষতি হবে না।

আরও পড়ুন

ভালুকগুলোর প্রতিক্রিয়াও ছিল খুব সাধারণ। কৌতূহল নিয়ে ড্রোন দেখছিল। ধীরে ধীরে কাছে যাওয়ায় এরা হয়তো ড্রোনকে তেমন পাত্তা দেয়নি। অথবা কেবল একটু আগ্রহ নিয়ে দেখেছে। এদের কাছে এটি আরেকটি শব্দ করা পাখি ছাড়া আর কিছু নয়।

কোলিউচিন দ্বীপের পরিত্যক্ত গবেষণাকেন্দ্র, বারান্দায় শুয়ে থাকা মেরু ভালুক আর গলে যাওয়া বরফ, সব মিলিয়ে ছবিটি বেশ সুন্দর। আর্কটিক অঞ্চল বদলে যাচ্ছে। এই পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে প্রাণীরাও নতুনভাবে বেঁচে থাকার পথ খুঁজছে।

সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

আরও পড়ুন