প্রতি পাঁচ স্কুলশিক্ষার্থীর মধ্যে একজন এআইয়ের সঙ্গে বন্ধুত্ব করছে

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআইয়ের সঙ্গে বন্ধুত্ব! শুনতে হয়তো কল্পবিজ্ঞানের গল্পের মতো লাগছে। কিন্তু নতুন একটি জরিপে অবাক করা এক তথ্য উঠে এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রের হাইস্কুলের প্রতি পাঁচ শিক্ষার্থীর মধ্যে একজন এআইয়ের সঙ্গে ‘বিশেষ বন্ধুত্ব’ করছে।

৪২ শতাংশ শিক্ষার্থী জানিয়েছে, তারা বা তাদের পরিচিত কেউ একাকিত্ব কাটাতে এআইকে সঙ্গী হিসেবে ব্যবহার করেছে। এ গবেষণাটি চালিয়েছে সেন্টার ফর ডেমোক্রেসি অ্যান্ড টেকনোলজি নামের একটি অলাভজনক সংস্থা। তারা যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৮০০ স্কুলশিক্ষক, এক হাজার স্কুলশিক্ষার্থী ও এক হাজার অভিভাবকের ওপর এই জরিপ চালিয়েছে।

জরিপে দেখা গেছে, গত শিক্ষাবর্ষে ৮৬ শতাংশ শিক্ষার্থী এআই ব্যবহার করেছে। শিক্ষকদের মধ্যে এই হার ৮৫ শতাংশ এবং অভিভাবকদের মধ্যে ৭৫ শতাংশ। গবেষণার অন্যতম লেখক এলিজাবেথ লেয়ার্ড বলেন, ‘যে স্কুলগুলোয় পড়াশোনার কাজে এআইয়ের ব্যবহার বেশি, সেখানকার শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটি প্রবণতা দেখা যায়। তারা এআইকে বন্ধু বা ব্যক্তিগত সঙ্গী হিসেবে বেশি ব্যবহার করে।’

আরও পড়ুন

গবেষণায় আরও দেখা গেছে, স্কুলে এআইয়ের বেশি ব্যবহারের কারণে কিছু নেতিবাচক ঘটনার জন্ম দিচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে ডেটা ফাঁস ও ডিপফেকের সাহায্যে কৃত্রিমভাবে তৈরি ছবি বা ভিডিও বানানোর ব্যাপার। তা ছাড়া স্কুলের প্রতি মানুষের আস্থাও কমে যাচ্ছে।

এ ব্যাপারে এলিজাবেথ লেয়ার্ড বলেন, ‘এই প্রযুক্তি হয়রানি ও বুলিংয়ের জন্য একটি নতুন মাধ্যম হয়ে উঠেছে। যে সমস্যাগুলো আগে থেকেই ছিল, এআই সেগুলোকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।’

জরিপের তথ্য অনুযায়ী, যেসব শিক্ষক পড়াশোনায় এআই বেশি ব্যবহার করেন, তাঁদের ২৮ শতাংশই বড় ধরনের ডেটা ফাঁসের ঘটনার কথা জানিয়েছেন। অন্যদিকে কম এআই ব্যবহারকারী শিক্ষকদের মধ্যে এই হার মাত্র ১৮ শতাংশ। লেয়ার্ড মনে করেন, এআই সিস্টেমে যত বেশি ব্যক্তিগত তথ্য দেওয়া হয়, ডেটা ফাঁসের ঝুঁকিও তত বাড়ে।

আরও পড়ুন

এ ছাড়া অনেক শিক্ষক জানিয়েছেন, ক্লাসে ব্যবহৃত এআই সিস্টেম ঠিকমতো কাজ করেনি। ফলে স্কুলের প্রতি মানুষের বিশ্বাসও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যেমন অনেক স্কুল শিক্ষার্থীদের ডিভাইসে এআইচালিত একটি সফটওয়্যার ব্যবহার করে। ওই সফটওয়্যার শিক্ষার্থীদের ডিভাইস নজরদারিতে রাখে। কিন্তু অনেক সময় সেটি ভুল সংকেত পাঠায়। ফলে নির্দোষ শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তার হওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে। যাদের ব্যক্তিগত কম্পিউটার কেনার সামর্থ্য নেই, তাদের জন্য এ ব্যাপারটা বেশি উদ্বেগের।

যেসব স্কুলে এআইয়ের ব্যবহার বেশি, সেখানকার ছাত্রছাত্রীরা নানা ব্যক্তিগত কারণে এআই ব্যবহার করে। তারা মানসিক স্বাস্থ্যের সহায়তার জন্য, একাকিত্ব কাটাতে বা বাস্তবতা থেকে পালাতে এআইকে সঙ্গী বানায়।

সবচেয়ে আশঙ্কার বিষয় হলো, ৩১ শতাংশ শিক্ষার্থী এই ব্যক্তিগত আলাপচারিতার জন্য স্কুলের দেওয়া ডিভাইস বা সফটওয়্যার ব্যবহার করে। মানে, তাদের ব্যক্তিগত কথাগুলো স্কুলের নজরদারির আওতায় থাকতে পারে।

শিক্ষার্থীরা অনুভব করতে পারছে না যে তারা একটি যন্ত্রের সঙ্গে কথা বলছে। এই যন্ত্রের অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। গবেষণা বলছে, শিক্ষার্থীদের এআই সম্পর্কে জ্ঞান খুব প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে।

আরও পড়ুন

শিক্ষকদেরও এ বিষয়ে যথেষ্ট প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে না। জরিপে মাত্র ১১ শতাংশ শিক্ষক জানেন, কোনো শিক্ষার্থী ক্ষতিকরভাবে এআই ব্যবহার করলে কীভাবে তা সামলাতে হয়। কারণ, এ নিয়ে তাঁরা কোনো প্রশিক্ষণ পাননি।

তবে মজার ব্যাপার হলো, যেসব শিক্ষক ক্লাসে বেশি এআই ব্যবহার করেন, তাঁরা মনে করেন, এটি তাঁদের শিক্ষাদানকে উন্নত করছে। এতে তাঁদের সময়ও বাঁচছে। কিন্তু সেই স্কুলগুলোর শিক্ষার্থীরাই এআই নিয়ে বেশি চিন্তিত। তারা জানিয়েছে, এআই ব্যবহারের কারণে শিক্ষকদের সঙ্গে তাদের সম্পর্কে কিছুটা দূরত্ব তৈরি হয়েছে।

সব মিলিয়ে ব্যাপারটা যেমন বিস্ময়ের, তেমনি চিন্তারও। প্রযুক্তি যত শক্তিশালী হচ্ছে, ততই জরুরি হয়ে পড়ছে তা বোঝা ও সঠিকভাবে ব্যবহার শেখা। কারণ, যন্ত্র হয়তো কখনো মানুষের মতো অনুভূতিশীল হবে না। যন্ত্রের অনুভূতির ভাষা নেই, নেই সম্পর্কের উষ্ণতা। তাই এআইকে সহায়ক হিসেবে রাখা যায়, কিন্তু বন্ধুর জায়গায় বসানো মানে নিজের বাস্তব জগৎটাকে ধীরে ধীরে দূরে সরিয়ে দেওয়া।

সূত্র: এনপিআর ডটঅর্গ

আরও পড়ুন