মানুষ কেন বিড়াল পোষা শুরু করেছিল

মানুষ আর বিড়ালের বন্ধুত্ব এখন এত স্বাভাবিক যে মনে হয় যুগ যুগ ধরে যেন এভাবেই চলছে। তবে বিজ্ঞানীরা এবার বিড়ালের ইতিহাস খুঁজতে গিয়ে অদ্ভুত কিছু রহস্য খুঁজে পেয়েছেন। মানুষ নাকি শুরুর দিকে বিড়ালকে আদরের পোষা প্রাণী হিসেবে আশ্রয় দেয়নি!

কৃষিজমিতে ইঁদুর বেড়ে যাওয়ায় বিড়াল এসেছিল আশীর্বাদ হয়েএআই আর্ট

বিড়ালের চোখে সব সময় রহস্য লুকিয়ে থাকে। গৃহপালিত হলেও এরা একেবারেই স্বাধীনচেতা প্রাণী। তাই বিজ্ঞানীরাও অনেক দিন ধরে মানুষের সঙ্গে এই অদ্ভুত প্রাণীর সম্পর্ক খুঁজছেন। কবে, কোথায়, কেন মানুষ ও বিড়াল একসঙ্গে থাকা শুরু করেছিল?

নতুন এক গবেষণা বলছে, বিড়ালের গৃহপালন শুরু হয়েছিল সম্ভবত মিসরে কিংবা উত্তর আফ্রিকার অন্য কোনো অঞ্চলে।

আগে ধারণা ছিল, প্রায় ১২ হাজার বছর আগে যখন মানুষ কৃষিকাজ শুরু করে, তখনই বিড়াল এসে বাস করা শুরু করেছিল মানুষের সঙ্গে। কৃষিজমিতে ইঁদুর বেড়ে যাওয়ায় বিড়াল এসেছিল আশীর্বাদ হয়ে। এ জন্যই মানুষ আর বিড়াল একসঙ্গে বসবাস করতে শুরু করেছিল। এর প্রমাণ হিসেবে দেখানো হতো সাইপ্রাস দ্বীপে পাওয়া একটি কবরকে। সেই কবরে একজন মানুষের পায়ের কাছে সমাধি দেওয়া হয়েছিল একটি বিড়ালকে। তাও আজ থেকে প্রায় ১০ হাজার বছর আগে। কিন্তু সাম্প্রতিক দুটো গবেষণা আগের ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। বিজ্ঞানীরা প্রাচীন বিড়ালের হাড় থেকে ডিএনএ পরীক্ষা করে দেখেছেন, ইউরোপ ও তুরস্কে পাওয়া প্রাচীন বিড়ালগুলো আধুনিক বিড়ালের পূর্বপুরুষ নয়। ওগুলো ছিল ইউরোপীয় বন্য বিড়াল। মাঝেমধ্যে আফ্রিকার বন্য বিড়ালের সঙ্গে মিলেমিশে নতুন জাত তৈরি করেছিল। ফলে বোঝা যাচ্ছে যে সেসব বিড়াল পোষা প্রাণী ছিল না।

আরও পড়ুন
বিড়াল পরিবারের অংশ

তাহলে বিড়াল গৃহপালিত হলো কখন? গবেষকদের মতে, সেটা উত্তর আফ্রিকায়। আধুনিক গৃহপালিত বিড়ালের জিন সবচেয়ে বেশি মেলে তিউনিসিয়ার বন্য বিড়ালের সঙ্গে। আর প্রাচীন মিসরের সঙ্গে বিড়ালের সম্পর্ক তো ইতিহাসে বেশ স্পষ্ট। প্রাচীন মিসরে দেবী বাস্তেতকে ঘিরে গড়ে উঠেছিল বিড়ালপূজা। এই দেবীকে প্রথম দিকে সিংহীর মতো দেখানো হলেও পরে আঁকা হতো বিড়ালের মতো করে। বিড়াল ছিল গৃহস্থালি, সুরক্ষা এমনকি উর্বরতা ও সুস্বাস্থ্যের প্রতীক। হাজার হাজার বিড়ালকে তখন মমি বানানো হতো। বিজ্ঞানীদের ধারণা, ধর্মীয় রীতির জন্যই শুরু হয়েছিল বিড়ালের নিয়মিত প্রজনন ও ধীরে ধীরে গৃহপালন।

এরপর মিসর থেকে বিড়াল ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বের নানা প্রান্তে। বাণিজ্যপথ ধরে প্রথমে বিড়াল পৌঁছে যায় ইউরোপে। ব্রিটেনে লৌহযুগের সময়কার বিড়ালের হাড় পাওয়া গেছে। এই হাড়ই প্রমাণ করে যে লৌহযুগে ব্রিটেনে বিড়াল পৌঁছে গিয়েছিল। পরে গ্রিক ও রোমান যুগে আরও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে এই প্রাণী।

আরও পড়ুন

তবে এখনো কিছু রহস্য অমীমাংসিত। মিসরের বিড়ালের মমি থেকে কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্য পাওয়া যায়নি। তাই বিজ্ঞানীরা বলছেন, জেনেটিক প্রমাণ না পাওয়া পর্যন্ত নিশ্চিত করে বলা যাবে না, বিড়ালের আসল জন্মভূমি কোথায়। হয়তো মিসর অথবা পশ্চিম উত্তর আফ্রিকার কোনো অঞ্চলে।

তবে একটা কথা পরিষ্কার, বিড়াল এসেছে অনেকটা ভিন্ন পথে। প্রথমে হয়তো ধর্মীয় কারণে বিড়াল লালন-পালন করা হয়েছিল। কিন্তু পরে মমি বানানোর জন্য প্রজনন করা হয়েছে। এরপর ধীরে ধীরে ঘরে ঘরে পৌঁছে গেছে বিড়াল। আজ ওরাই আমাদের সঙ্গী, খেলার সঙ্গী, এমনকি পরিবারের অংশ। অথচ হাজার হাজার বছর আগে ওদের কাজ ছিল ভিন্ন। এই দ্বিমুখী ইতিহাসের কারণেই বিড়াল রহস্যময়।

সূত্র: লাইভ সায়েন্স ও বিবিসি সায়েন্স ফোকাস

আরও পড়ুন