৬০ জন শিক্ষার্থীকে বিজয়ী ঘোষণা করে শেষ হলো বিডিজেএসও জাতীয় পর্ব
৬০ জন শিক্ষার্থীকে বিজয়ী ঘোষণা করে শেষ হলো বাংলাদেশ জুনিয়র সায়েন্স অলিম্পিয়াডের জাতীয় পর্ব। গত ৫ সেপ্টেম্বর, শুক্রবার রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজির মাঠে এ উৎসব আয়োজিত হয়। এতে প্রায় ছয় শতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেয়।
অংশগ্রহণকারীদের জন্য ছিল দিনব্যাপী নানা আয়োজন। জাতীয় পর্বে এবারই প্রথমবারের মতো প্রতি ক্যাটাগরিতে একজন করে চ্যাম্পিয়ন নির্বাচন করা হয়েছে। সেকেন্ডারি ক্যাটাগরিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণির ছাত্র বিহান পল। জুনিয়র ক্যাটাগরিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে রাজশাহীর ভোলানাথ বিশ্বেশ্বর হিন্দু একাডেমীর অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী জ্যোতির্ময় বিশ্বাস এবং প্রাইমারি ক্যাটাগরিতে চ্যাম্পিয়ন সেন্ট জোসেফ ইন্টারন্যাশনার স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী আহানাফ আদিব।
বেলুন উড়িয়ে উৎসবের উদ্বোধন করা হয়। অলিম্পিয়াড শেষে শিক্ষার্থীদের জন্য আয়োজিত হয় রোবটিক্স ও ড্রোন শো। কৌতূহলী শিক্ষার্থীদের দেখানো হয় কীভাবে একটি রোবট ও ড্রোন পরিচালনা করা হয়। এরপর শুরু হয় প্রশ্নোত্তর পর্ব। প্রশ্নোত্তর পর্বে উপস্থিত ছিলেন ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজি বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ অব ইঞ্জিনিয়ারিং এবং টেকনোলজির ডিন অধ্যাপক মো. মনিরুল ইসলাম, বাংলাদেশ বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফারসীম মান্নান মোহাম্মদী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এবং বায়োটেকনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মুশতাক ইবনে আয়ুব এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এবং বায়োটেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক আদনান মান্নান।
দুপুরে খাবার বিরতির পর শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সেখানে ম্যাজিশিয়ান স্বপন দিনার ম্যাজিক শো পরিবেশন করেন। বিকেল ৩টায় শুরু হয় পুরস্কার বিতরণী ও সমাপনী অনুষ্ঠান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজির উপচার্য অধ্যাপক আব্দুর রব মিয়া। বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রাফাত উল্লা খান। এছাড়া আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ফ্রিডম ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাজ্জাদুর রহমান চৌধুরী, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট জালাল আহমেদ, ঢাকা উত্তর অঞ্চলের জোনাল হেড এবং এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. মুজিবর রহমান, বাংলাদেশ বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণ সমিতির সভাপতি মুনির হাসান ও সাধারণ সম্পাদক ফারসীম মান্নান মোহাম্মদী এবং ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজি বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ অব ইঞ্জিনিয়ারিং এবং টেকনোলজির ডিন অধ্যাপক মো. মনিরুল ইসলাম।
আব্দুর রব মিয়া শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘বর্তমান শিক্ষার্থীরা শুধু পাঠ্যবইয়ের জ্ঞানেই সীমাবদ্ধ নয়, তারা প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের জগতে নিজেদের দক্ষতা প্রমাণ করছে। শিক্ষার্থীরা সমাজ ও দেশের সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধানের পথ খুঁজছে। এটা সত্যিই প্রশংসনীয়।’
রাফাত উল্লা খান বলেন, ‘বর্তমানে পৃথিবীতে প্রতিটি অগ্রগতির পেছনে বিজ্ঞানের অবদান রয়েছে। শিক্ষার্থীদের উচিত বিজ্ঞানমনস্ক হয়ে গবেষণা ও উদ্ভাবনে নিজেদের নিয়োজিত করা। তোমাদের প্রতিটি সাফল্য আমাদের গর্বিত করে এবং আমাদের ভবিষ্যতের প্রতি আশাবাদী করে তোলে।’
এরপর বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়। জাতীয় পর্বে মোট ৬০ জন বিজয়ী নির্বাচিত হয়েছে। এরমধ্যে প্রাইমারি ক্যাটাগরিতে ১০ জন, জুনিয়র ক্যাটাগরিতে ২৮ জন এবং সেকেন্ডারি ক্যাটাগরিতে ২২জন। তিন ক্যাটাগরির চ্যাম্পিয়নকে দেওয়া হয় চ্যাম্পিয়নস ট্রফি। আর অন্যান্য বিজয়ীদের জন্য ছিল মেডেল ও সার্টিফিকেটসহ আকর্ষণীয় পুরস্কার।
জাতীয় পর্ব থেকে নির্বাচিত সেরা ৬০ শিক্ষার্থীকে নিয়ে আয়োজিত হবে বিডিজেএসও ক্যাম্প। সেখানে তারা নিবিড় প্রশিক্ষণ ও প্রস্তুতির সুযোগ পাবে। ক্যাম্পের বিভিন্ন পারফরম্যান্স অনুযায়ী বাছাই করা হবে সেরা ৬ প্রতিযোগীকে। তারাই চলতি বছর ডিসেম্বরে রাশিয়ায় অনুষ্ঠিতব্য ২২তম আন্তর্জাতিক জুনিয়র সায়েন্স অলিম্পিয়াডে অংশ নেবে। ২০১৫ সাল থেকে বাংলাদেশ বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণ সমিতি নিয়মিত এই অলিম্পিয়াডে দল পাঠাচ্ছে।
এর আগে গত জুলাই মাস থেকে সারাদেশের শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহী করে তুলতে ৫০টিরও বেশি জেলা শহরের দেড় শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সরাসরি প্রচারণা ও প্রস্তুতি কর্মশালার আয়োজন করা হয়। অনলাইন ও অফলাইন মিলিয়ে মোট ১৭ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী নিবন্ধন করে। সেখান থেকে অনলাইন বাছাই পর্বের পর নির্বাচিত শিক্ষার্থীরা পর্যায়ক্রমে নিজের বিভাগে আয়োজিত অফলাইন আঞ্চলিক বাছাই পর্বে অংশগ্রহণ করেছে। ছয়টি আঞ্চলিক পর্ব, ই-অলিম্পিয়াড এবং স্কুল অলিম্পিয়াড বিজয়ীসহ প্রায় ছয় শতাধিক শিক্ষার্থীদের নিয়ে এই জাতীয় পর্ব অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বিডিজেএসও যৌথভাবে আয়োজন করেছে বাংলাদেশ বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণ সমিতি ও বাংলাদেশ ফ্রিডম ফাউন্ডেশন। প্রধান পৃষ্ঠপোষক আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক পিএলসি। প্লাটিনাম স্পন্সর ও জাতীয় পর্বের হোস্ট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজি। আয়োজনে সহযোগী ম্যাসল্যাব এবং রকমারি। ম্যাগাজিন পার্টনার বিজ্ঞানচিন্তা এবং কিশোর আলো।
বিডিজেএসও ২০২৫ সম্পর্কিত তথ্য, ফলাফল এবং বিস্তারিত জানতে দেখো: bdjso.org।