বৃক্ষমেলার বিচিত্র গাছ
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পুরোনো বাণিজ্য মেলার মাঠে চলছে মাসব্যাপী জাতীয় বৃক্ষমেলা। ২৫ জুন থেকে শুরু এই মেলা চলবে ২৭ জুলাই পর্যন্ত। বিনা টিকিটেই গাছ কেনা থেকে শুরু করে মেলা ঘুরে দেখার সুযোগ পাচ্ছে যে কেউ- সকাল ৯টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত।
নানা রঙে নানা বর্ণে বৃক্ষমেলা সাজে দেশি বিদেশি নানা ফুল, ফল, ঔষধি আর শোভাবর্ধক গাছে। সেসবের মাঝে ব্যতিক্রম কী কী গাছের দেখা মিললো সেসব নিয়ে জানা যাক এবার। সুযোগ করে তোমরাও নাও হয় ঘুরে এলে একবেলা।
১। ২৫ ফুট উচ্চতার গাছ নাগাচূড়া
উইনার নার্সারিতে দেখা মেলে প্রায় ২৫ ফুট উচ্চতার নাগাচূড়া গাছ। বিক্রেতার তথ্য মতে, এটি একটি বিদেশি প্রজাতির গাছ। বয়স এখন ৩৬ বছর। পাতার গঠন ও রঙে আছে বৈচিত্র্য। ৪ রকমের রং ফুটে ওঠে এর পাতায় পাতায়। এক জায়গা থেকে অন্য জায়গা মানে বৃক্ষমেলায় স্থানান্তরের ফলে গাছের পাতা সাময়িকভাবে কিছু ঝড়ে যায়। গাছটির দাম সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা। নাগাচূড়া বা আমব্রেলা ট্রি – ছাতার মত পাতা ছড়িয়ে উপড়ে উঠে বলে এমন নাম। তাও আবার উলটো ছাতা! বাতাসে ছাতা উল্টালে যেমন দেখায় অনেকটা সেরকম। কেউ কেউ একে নাগাচুয়া বলেও ডাকে।
২। মেলার সবচেয়ে সস্তা গাছ: সবজির চারা
ঠিক তাই। এতো এতো রং-বেরঙের ফুল ফল আর শোভাবর্ধক গাছের ভিড়ে সবচেয়ে কম দামে মিলে ছোট ছোট সবজির চারা। লাউ, মিষ্টি কুমড়া, মরিচ, বেগুনের মতো সবজির ছোট চারার দাম শুরু মাত্র দশটাকা থেকে।
৩। মেলার সবচেয়ে বড় গাছ
উইনার নার্সারির নাগাচূড়া গাছটি যেমন মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা সবচেয়ে বড় গাছ। লম্বা গাছের তালিকায় আরও যোগ করা যায় বাঁশ ও বক্স বাদাম গাছের নাম। বাঁশ সবাই চিনলেও বক্স বাদাম আমরা কজন চিনি? তুলাগাছের পাতার মত পাতা নিয়ে বেড়ে ওঠা বিশালদেহী গাছ। থোকা থোকা বাঁকানো বক্স আকৃতির ফল, সেই ফলের ভিতরে সারি সারি কালো রঙের বাদাম- খেতে অনেকটা নারিকেলের স্বাদ। ঢাকার ফার্মগেট খামারবাড়ির গিয়াস উদ্দিন মিল্কী অডিটোরিয়াম চত্বরে আছে তেমনই বিশালদেহী এক বক্সবাদাম গাছ। গাছটা এতোটাই বড় আর মোটা যে, কেউই ফল পাড়ার সাহস করে না। ফল পেকে ফেটে বাদাম ছিটিয়ে ফেলে মাটিতে। আর শিশুরা ভিড় করে সেই বাদাম কুড়াতে।
৪। মেলার সবচেয়ে ছোট গাছ
কাচের ছোট্ট টেস্টটিউবে বন্দী টিস্যু কালচারের চারাগুলোই মেলার সবচেয়ে ছোট্ট চারাগাছ। বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বিএডিসির স্টলে প্রদর্শিত হচ্ছে তেমনই ছোট্ট চারা গাছ। কাচের ছোট্ট টেস্টটিউবে বেড়ে ওঠছে আলু, আনারস, অর্কিড, লিলিয়াম ও জারবেরা। ল্যাবরেটরিতে উৎপাদিত এই চারা কয়েকটি ধাপে বড় করে বিক্রয় ও বাগানে উপযোগী করা হয়।
৫। ফুলেল কৃষ্ণচূড়া
মেলায় এইবারেই প্রথম এত বড় কৃষ্ণচূড়ার দেখা মিললো ইব্রাহিম নার্সারির স্টলে। প্রায় ১৫ ফুট উচ্চতার গাছে টকটকে লাল ফুলও ফুটে আছে। গাছটির দাম চাওয়া হচ্ছে দশ হাজার টাকা।
৬। ভিনদেশী লিচু রামবুটান
মালয়েশিয়ান ফল। ভেতরের অংশ অনেকটাই লিচুর মত। বাহিরে কাঁচা অবস্থায় থাকে সবুজ রঙের লোমশ দাড়ি আর পাকলে হয় টকটকে লাল থোকা থোকা ফল। লালের পাশাপশি আছে হলুদ রঙের রামবুটানও। ভিনদেশী এই রামবুটান এখন কমন হয়ে ধরা দিচ্ছে স্টলে স্টলে। কাঁচা ফলসহ দাম পড়ছে ১০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। আর পাকা রঙিন ফলসহ গাছের দাম ওঠেছে দেড় লক্ষ টাকা পর্যন্ত।
৭। আমাজন লিলি
মেলায় জলজ উদ্ভিদের মধ্যে শাপলা, পদ্ম, সোর্ড লিলি, কচুরিপানা, থাই পানা, জলজ বাঁশ থাকলেও শুধু একটি মাত্র স্টলেই মিলে আমাজন লিলির দেখা। ফুলের চেয়ে বরং এর পাতার সৌন্দর্যই বেশি। পানিতে ভেসে ডালার মত এক ছড়ানো সবুজ পাতা। ছোট্ট এক শিশুকে অনায়েসে বসিয়ে রাখা যাবে সেই পাতার ওপর- তবুও ডুববে না। চমৎকার এই আমাজন লিলির দেখা পাবে মেলার গেট দিয়ে প্রবেশ করতেই হাতের বামে থাকা জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানের স্টলে।
৮। সবচেয়ে বড় আম
আমরা ফলবাজারে গিয়ে ফল কিনি- এক কেজি আম কিংবা দুই কেজি জাম। একবার ভাবো তো একটা আমের ওজনই যদি হয় দুই কেজির সমান! হ্যাঁ, ঠিকই পড়েছো। বৃক্ষমেলার বিএডিসির স্টলে প্রদর্শিত হচ্ছে তেমনই দুই কেজি ওজনের একটি আম। ছবিতে কাঁঠালের চেয়েও যেন আমের আকার বড় মনে হচ্ছে। দেশের সবচেয়ে বড় জাতের আমের স্বীকৃতি পেয়ে আছে ব্রুনাই কিং আম। ওজনে চার কেজি পর্যন্ত হতে পারে একেকটি আম। কেউ চারা নিতে চাইলে সরকারি বিএডিসির স্টল থেকেই নিতে পারব ২০০ টাকা করে। অন্য স্টলে দাম ওঠে কয়েকগুণ বেশি।
৯। যে গাছের চেয়ে ফলের ওজন বেশি!
বলছি জাতীয় ফল কাঁঠালের কথা। কলম করা ছোট্ট গাছেই ঢাউশ আকারের কাঁঠাল ঝুলছে স্টলে স্টলে।
এর কোনটা আঠাহীন থাই কাঁঠাল, কোনটা থাই পিংক কাঁঠাল, কোনটা আবার ভিয়েতনামী বারোমাসি কাঁঠাল। দাম পড়ছে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা। ছোট চারা নেয়া যাবে ৩০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকায়।
১০। বাঁশ
মেলার কোয়ান্টাম বোম্বোরিয়াম স্টল বসেছে শুধু বাঁশ নিয়েই! তাঁদের তথ্য মতে, বিশ্বে ১ হাজার ৬৭৮ প্রজাতির বাঁশ আছে। এর মধ্যে কোয়ান্টাম বোম্বোরিয়ামের সংগ্রহে আছে দেশীয় ৩৬ প্রজাতিসহ ২১০ প্রজাতির বাঁশ। ভারতসহ চীন, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়ার মত বিভিন্ন দেশ থেকে বাঁশের বীজ সংগ্রহ করে উৎপাদন করা হচ্ছে এই বাঁশ। সেসবের মধ্যে বীজ থেকে করা দৈত্যাকার জায়ান্ট বেম্বোর চারার দাম পড়ে ২ হাজার টাকা। আর ডাল কাটিং থেকে করা চারা মিলে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকার মধ্যে। স্টলে সবচেয়ে বেশি নজর কাড়ছে ২০ সেন্টিমিটার পরিধি সমান মোটা আকৃতির ভুতুম বাঁশের!
আছে ফ্রিতে বাঁশ খাওয়ার সুযোগও! ইয়ে মানে, বাঁশ পাতার চা! ফাউন্টেন আর স্বর্ণা বাঁশের পাতায় বানানো সেই চা বিনামূল্যে পান করতে পারছে যে কেউ। খাবে নাকি এক কাপ?
১১। পুষ্পা মুভির রক্তচন্দন গাছ
পুষ্পা মুভির সেই রক্তচন্দন গাছের দেখাও মিলবে মেলায়। মেলার ব্র্যাক নার্সারিতে।
১২। সুন্দরবনের সুন্দরী গাছ
সুন্দর বন যেই গাছের নামে, লোনা পানির জোয়ার ভাটায় জন্মানো শ্বাস মূল উঁচু করে রাখা সেই সুন্দরী গাছের দেখাও পাবে বৃক্ষমেলায়। ব্র্যাক নার্সারিতে রক্তচন্দন গাছের পাশেই পাবে এর দেখা।
১৩। টিয়া পাখির ঝাঁক
প্রতিদিনের বিকাল বেলা মেলার আকাশে মাথার ওপর দিয়ে উড়ে যায়
ঝাঁকে ঝাঁকে টিয়া পাখি। ওরা থাকে পাশের জিয়া উদ্যানের লম্বাটে গাছের কোঠরে। ঘুরেফিরে খাবার খেয়ে দিনশেষে ঘরে ফেরে দল বেধে। দেখতে দারুণ লাগে। স্রেফ টিয়া পাখির উড়াউড়ি দেখতে চাইলেও আসতে পারো বৃক্ষমেলায়।