জাপানে রাস্তা বানাতে কাটা হয় না কোনো গাছ
বাংলাদেশে প্রায়ই দেখা যায় উন্নয়নমূলক কাজের নামে নির্বিচারে গাছপালা কেটে ফেলা হচ্ছে। কোনো রকম বিচার-বিশ্লেষণ ছাড়াই রাস্তার পাশের শত শত বছরের পুরোনো গাছ নিমেষে কেটে ফেলে কর্তৃপক্ষ। বাংলাদেশের মতো আরও অনেক দেশেই এমন দৃশ্য দেখা যায়। উন্নয়নের নামে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করে তৈরি করা হচ্ছে কংক্রিটের জঙ্গল।
এই দিক থেকেও জাপান সম্পূর্ন ভিন্ন। আধুনিক অবকাঠামো নির্মাণেও প্রকৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধাবোধ দেখিয়ে আসছে জাপানিরা। জাপানে রাস্তা বানানোর সময় গাছ কাটার পরিবর্তে অভিনব কিছু পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়, যেন কোনো ক্ষতি না করেই এক স্থান থেকে অন্য স্থানে প্রতিস্থাপন করা হয় গাছকে। যা বিশ্ব জলবায়ু কর্মীদের কাছে প্রশংসিত হচ্ছে। কিন্তু কীভাবে তাঁরা এই কাজটি করছে?
অর্থনীতি, অবকাঠামো এবং উদ্ভাবনের দিক থেকে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক র্যাঙ্কিংয়ে জাপান বিশ্বের সেরা দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে। দেশের প্রাকৃতিক পরিবেশ বাঁচাতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে দেশটি। জাপানে এখনও শত এবং হাজার বয়সী কাছ রয়েছে। এক একটি বিশাল আকারে।
এরপর গাছটিকে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে সরিয়ে নেওয়া হয় নতুন জায়গায়। এই নতুন জায়গাটি বিশেষভাবে প্রস্তুত করা হয় গাছের জন্য। একটি গাছকে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় লাগানোর আগে বেশ কিছু দিন দেখানে রেখে দেওয়া হয়।
উন্নয়নমূলক কাজের সময় বিশাল আকারের কারণে মনে হয় গাছগুলোকে কাটা ছাড়া কোনো উপায় নেই। তবে জাপান প্রাচীন উপায়ে ও প্রযুক্তির ব্যবহারে এই কাজ সম্ভব করে দেখিয়েছে। জাপানে যখন একটি পূর্ণবয়স্ক গাছ কোনো উন্নয়ন প্রকল্পের কাজে বাধা হয়ে দাঁড়ায়, তখন বিশেষজ্ঞরা এটি কত দ্রুত সরানো যাবে তা নিয়ে ভাবেন না। বরং তাঁদের প্রধান প্রশ্ন ও চিন্তা থাকে কতটা সাবধানে এটি সরানো যায়।
জাপানে গাছ সরাতে নেমাওয়াশি (Nemawashi) নামে একটি পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। এই পদ্ধতিতে প্রথমে সাবধানে গাছের গোরা থেকে অনেকটা দূরে চারিদিকে গর্ত করা হয়। এতে গাছের শিকর দেখা যায়। সেখান থেকে মুল শিকর আলাদা করা হয়। তা পরে হাতে মুড়িয়ে শক্ত করে কিছু মাটিসহ বেঁধে দেওয়া হয়। এই ধাপ শেষ হওয়ার পর ক্রেন, বিশেষ প্ল্যাটফর্ম, কাঠের রোলার, বিম এবং ট্র্যাকের মতো যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে গাছটিকে সরানোর হয়।
এরপর গাছটিকে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে সরিয়ে নেওয়া হয় নতুন জায়গায়। এই নতুন জায়গাটি বিশেষভাবে প্রস্তুত করা হয় গাছের জন্য। একটি গাছকে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় লাগানোর আগে বেশ কিছু দিন দেখানে রেখে দেওয়া হয়। যাতে গাছটি নতুন পরিবেশে সহজেই মানিয়ে নিতে পারে। অনেক সময় নতুন জায়গার মাটি আগের জায়গা থেকেও এনে প্রস্তুত করা হয় জায়গাটি।
জাপানের দীর্ঘায়ু গাছের মধ্যে রয়েছে ক্রিপ্টোমেরিয়া। এগুলো জাপানি সেডার নামেও পরিচিত। হালকা শীতের আবহাওয়ার মধ্যে এই গাছ জন্মায়। জাপানের এরকম কিছু কিছু গাছের বয়স ৬৫০ বছরেরও বেশি বলে ধারণা করা হয়।
পুরো প্রক্রিয়াটি শেষ করতে এক বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। কারণ বাঁধা শিকড়গুলোকে সাধারণত এদের অস্থায়ী পরিবেশে মানিয়ে নিতে এবং বেড়ে ওঠার জন্য যথেষ্ট সময় দেওয়া হয়। এর ফলে প্রতিস্থাপনের কারণে গাছটির ওপর যে ধকল পড়ে, তা অনেকটাই কমে যায়।
জাপানিরা নেমাওয়াশি কৌশলটি শুধু গাছকে বাঁচানোর জন্য ব্যবহার করে এমটা কিন্তু নয়। এটি জাপানি সংস্কৃতির একটি অংশ। জাপানের প্রধান ও প্রাচীনতম ধর্ম শিন্তোতে গাছের একটি বিশেষ স্থান আছে।
জাপানের দীর্ঘায়ু গাছের মধ্যে রয়েছে ক্রিপ্টোমেরিয়া। এগুলো জাপানি সেডার নামেও পরিচিত। হালকা শীতের আবহাওয়ার মধ্যে এই গাছ জন্মায়। জাপানের এরকম কিছু কিছু গাছের বয়স ৬৫০ বছরেরও বেশি বলে ধারণা করা হয়। এইসব গাছ প্রায় নেমাওয়াশি কৌশল ব্যবহার করে সরানো হয়ে থাকে। জাপানে অনেক পার্কে এই ভাবে গাছ এনে সংরক্ষণ করা হচ্ছে।
নেমাওয়াশি কৌশল ব্যবহার করে জাপান দেখিয়ে দিয়েছে পরিবেশকে রক্ষা করেই উন্নয়ন সম্ভব। কিন্তু বাস্তবে অনেক দেশেই, বিশেষ করে ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চলে, অবকাঠামোগত উন্নয়নের চাপ এতটাই বেশি থাকে যে গাছ কাটা একটি সহজ সমাধান হিসেবে মনে করা হয়। তবে যেই পরিস্থিতি হোক সেখান থেকেই প্রকৃতির কথা ভেবেই কাজ করতে হবে।