কেনিয়ার বনে দেখা মিলল বিপন্ন কালো গন্ডারশাবকের
কালো গন্ডার পৃথিবীর সবচেয়ে বিপন্ন প্রাণীদের মধ্যে অন্যতম। একসময় কেনিয়ার বিশাল বনাঞ্চল থেকে এদের সংখ্যা প্রায় হারিয়েই গিয়েছিল। এখন সেখানে এই গন্ডারদের খুব ছোট একটা দল নিজেদেরকে টিকিয়ে রাখতে প্রাণপণে চেষ্টা করে যাচ্ছে।
ঠিক এমন সময় বন্য প্রাণী গবেষকেরা অত্যন্ত খুশির খবর পেয়েছেন। কেনিয়ার বনে জন্ম নিয়েছে পূর্বাঞ্চলীয় কালো গন্ডারের একটি নতুন শাবক। যেহেতু এ প্রজাতিটি টিকে থাকার জন্য এত কঠিন লড়াই করছে, তাই গবেষকেরা এই শাবকের জন্মকে সংরক্ষণ প্রচেষ্টার পথে এক বিশাল সাফল্য হিসেবে দেখছেন।
বন্য প্রাণী সংরক্ষণের সংস্থা ‘বিগ লাইফ ফাউন্ডেশন ইউএসএ’র কর্মকর্তা অ্যামি বেয়ার্ড বলেছেন, বনরক্ষীরা (রেঞ্জার্স) গত বসন্তকালে একটি খুব মজার জিনিস লক্ষ করেন। তাঁরা যখন একটি মা গন্ডারের পায়ের ছাপ ধরে অনুসরণ করছিলেন, তখন তাঁর ঠিক পাশেই অন্য রকম ছোট ছোট পায়ের ছাপ দেখতে পান। এই ছাপগুলো দেখেই বনরক্ষীরা প্রথমে বুঝতে পারেন সম্ভবত সেখানে একটি নতুন গন্ডারশাবকের জন্ম হয়েছে।
কয়েক মাস অপেক্ষার পর বনরক্ষীদের সন্দেহই সত্যি প্রমাণিত হয়। বিগ লাইফ ফাউন্ডেশন ও কেনিয়া ওয়াইল্ডলাইফ সার্ভিসের লাগানো বিশেষ ক্যামেরা ট্র্যাপে ধরা পড়ে মা ও শাবক গন্ডারের ছবি। দক্ষিণ-পূর্ব কেনিয়ার চিউলু পাহাড়ের প্রত্যন্ত অঞ্চলে এই দারুণ দৃশ্য দেখা যায়। চিউলু পাহাড় আসলে একটি জাতীয়ভাবে সুরক্ষিত এলাকা। যেখানে রয়েছে ঢালু পাহাড়, নদীতীরবর্তী সমভূমি ও প্রচুর বন্য প্রাণীর নিরাপদ আবাস।
বিগ লাইফ ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, শাবকের মায়ের নাম ‘নামুনিয়াক’ (Namunyak)। প্রথমবারের মতো মা হয়েছে নামুনিয়াক। দক্ষিণ কেনিয়া ও উত্তর তানজানিয়ার স্থানীয় সম্প্রদায়ের ‘মা’ (Maa) ভাষায় এই নামের অর্থ হলো ‘সৌভাগ্যশালী’ (Blessed)।
শাবকটির বয়স এখন প্রায় ছয় মাস। কিন্তু গবেষকেরা এখনো নিশ্চিতভাবে জানতে পারেননি, এটা ছেলে না মেয়ে। গবেষক বেয়ার্ড বলেছেন, ‘আমাদের কাছে যথেষ্ট ভালো ছবি নেই। কারণ, শাবকটি সব সময় মায়ের আড়ালে লুকিয়ে থাকে।’
বনরক্ষীরা এখনই শাবকটির নাম রাখছেন না। তাঁরা প্রথমে নিশ্চিত হতে চান যে এটি ভালোভাবে বেড়ে উঠছে ও টিকে আছে। তারপর এর নামকরণ হবে। কারণ, ছোট গন্ডারের বাচ্চারা খুবই দুর্বল ও প্রকৃতির বা মানুষের তৈরি নানা রকম বিপদের মুখে এরা সহজে আঘাত পেতে পারে।
তবে আশার কথা হলো, বনরক্ষীরা এখন পর্যন্ত লক্ষ করেছেন যে শাবকটি সম্পূর্ণ সুস্থ আছে। আর প্রায়ই খুব সুন্দর ও মজার আচরণ দেখায়। একে যখনই দেখা যায়, তখনই সে মায়ের পেছনে ঘুরে বেড়ায়। নতুন শাবকটির জন্মের ফলে চিউলু পাহাড়ের এলাকায় এখন পূর্বাঞ্চলীয় কালো গন্ডারের মোট সংখ্যা ৯টিতে পৌঁছেছে।
একসময় এই এলাকায় প্রচুর কালো গন্ডার ছিল। কিন্তু ১৯৭০–এর দশকে শিকারিরা এদের শিঙের লোভে এত হত্যা করেছিল যে এই প্রজাতির গন্ডাররা প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। এমনকি বন্য প্রাণী বিশেষজ্ঞরা তো ধরেই নিয়েছিলেন, ১৯৯০–এর দশকের শেষেই চিউলু পাহাড় থেকে গন্ডার পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়ে গেছে। তবে পরে বনরক্ষীরা সেখানে লুকানো একটি ছোট দলের খোঁজ পান; যারা এত বছর ধরে মানুষের চোখ এড়িয়ে টিকে থাকতে পেরেছিল।
চিউলু এলাকাটি পাহারা দেওয়া খুবই কঠিন। বিখ্যাত লেখক আর্নেস্ট হেমিংওয়ে এই চিউলু পাহাড়কে ‘আফ্রিকার সবুজ পাহাড়’ বলেছিলেন। এটি একটি বিশেষ ধরনের পর্বতশ্রেণি। যেখানে নানা রকম ভূপ্রকৃতি ও বিপদ রয়েছে। এই পাহাড় আগ্নেয়গিরির কারণে তৈরি। এখানে ধারালো লাভা পাথর, কাঁটাযুক্ত গাছ ও খুব খাড়া জমি আছে। এ কারণে এখানে গন্ডারদের পর্যবেক্ষণ করা ও সুরক্ষা দেওয়া খুবই চ্যালেঞ্জিং কাজ।
গত দুই বছরে এটি এই ছোট দলের দ্বিতীয় শাবক। এর আগে ২০২৩ সালের শেষে জন্ম নেওয়া অন্য বাচ্চাটি এখন বড় হয়ে গেছে এবং হয়তো শিগগিরই সে তার মাকে ছেড়ে চলে যাবে। কালো গন্ডারের ছোট এ দলটিকে রক্ষা করার জন্য অনেক বনরক্ষী ও ৪৮টি ক্যামেরা ট্র্যাপ দিন–রাত নজর রাখছে। তাঁদের কঠোর চেষ্টা ও পর্যবেক্ষণের কারণেই এই গন্ডারগুলো টিকে থাকতে পেরেছে।
সূত্র: এবিসি নিউজ