অক্সিজেন নেই তবু সূর্য জ্বলে কীভাবে

সূর্যছবি: সংগৃহীত

সূর্য আমাদের সৌরজগতের কেন্দ্রে অবস্থিত। নাসার তোলা সূর্যের ছবি দেখলে মনে হবে সূর্য যেন জ্বলন্ত শিখা। সূর্যের ব্যাস প্রায় ৬ লাখ ৯৬ হাজার কিলোমিটার, যা পৃথিবীর ব্যাসের তুলনায় প্রায় ১০৯ গুণ বেশি। পৃথিবী থেকে প্রায় দেড় হাজার কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই নক্ষত্র আমাদের গ্রহকে আলো ও তাপ দেয়। বিশাল এই সূর্যে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে বলে মনে হলেও এটি আসলে সঠিক না। কারণ, আমরা জানি, আগুন জ্বলা মানে অক্সিজেনের সঙ্গে বিক্রিয়া। অথচ সূর্য জ্বলছে অক্সিজেন ছাড়াই! কীভাবে? কোথায় এর জ্বালানি?

এই প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য আমাদের সূর্যের কাছে যাওয়ার প্রয়োজন নেই! পৃথিবীতে বসেই মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা উন্নত টেলিস্কোপের সাহায্যে এই রহস্য উন্মোচন করেছে। আমরা যখন আগুনের কথা ভাবি, তখন মনে হয় কাঠকয়লা জ্বলছে, তীব্র লাল আলো আর তাপ নির্গত হচ্ছে। আগুন জ্বলার রহস্য লুকিয়ে আছে এক্সোথারমিক বিক্রিয়ায়। এই বিক্রিয়ায় শক্তি নির্গত হয়, যা তাপ ও আলোর রূপে আমাদের কাছে প্রকাশ পায়। এই শক্তি আসে জ্বালানি থেকে। কাঠের মতো কোনো জ্বালানি যেমন কার্বন হাইড্রোজেন ও অক্সিজেনের সঙ্গে বিক্রিয়া করে রাসায়নিক বন্ধন ভেঙে নতুন বন্ধন তৈরি করে। এই বন্ধন তৈরির প্রক্রিয়ায় শক্তি নির্গত হয়, যা থেকে আমরা আগুন পাই।

কিন্তু সূর্যের আগুন পুরোপুরি আলাদা। সূর্যের মূল জ্বালানি হাইড্রোজেন। মহাবিশ্বের সবচেয়ে মৌলিক উপাদান। সূর্যের কেন্দ্রে প্রচুর পরিমাণে হাইড্রোজেন বিদ্যমান। হাইড্রোজেনের নিউক্লিয়াসগুলো এতটা দ্রুত গতিতে চলে যে একে অপরের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এই সংঘর্ষে নিউক্লিয়ার ফিউশন নামক পারমাণবিক বিক্রিয়া ঘটে।

আরও পড়ুন

নিউক্লিয়ার ফিউশনের মাধ্যমেই এই শক্তি উৎপন্ন হয়। নিউক্লিয়ার ফিউশন বিক্রিয়ায় দুটি হাইড্রোজেন পরমাণু একীভূত হয়ে একটি হিলিয়াম পরমাণু তৈরি করে। এই প্রক্রিয়ায় কিছু ভর হারিয়ে যায়। হারিয়ে যাওয়া এই ভর রূপান্তরিত হয় শক্তিতে। আইনস্টাইনের বিখ্যাত E=mc সূত্র অনুযায়ী, এই ভর হারানোই সূর্যের বিপুল শক্তির উৎস। প্রতি সেকেন্ডে, সূর্য প্রায় ৬০০ মিলিয়ন টন হাইড্রোজেনকে হিলিয়ামে রূপান্তরিত করে, যা অকল্পনীয় পরিমাণে শক্তি নির্গত করে। এই শক্তিই সূর্যকে আলোকিত করে এবং উষ্ণ রাখে আমাদের গ্রহকে। সূর্যসহ সব নক্ষত্র নিজের শক্তি নিজে তৈরি করে। সূর্যের জন্ম প্রায় ৪ দশমিক ৬ বিলিয়ন বছর আগে। বিজ্ঞানীদের মতে চিন্তার কোনো কারণ নেই, কারণ আগামী ৫ বিলিয়ন বছর ধরে সূর্য আমাদের গ্রহকে প্রয়োজনীয় আলো ও তাপ সরবরাহ করবে।

সূত্র: স্পেস ডটকম

আরও পড়ুন