কে-পপ ব্যান্ড স্ট্রে কিডসকে দেখলাম সামনাসামনি

স্ট্রে কিডস

করোনা মহামারির সময়ে ঘরে বন্দি অবস্থায় একাকিত্বে ভুগছিলাম। হঠাত আমার জীবনে আসে স্ট্রে কিডস। খুব অল্প সময়েই আট সদস্যের এই কে-পপ ব্যান্ডটির ভক্ত হয়ে উঠি আমি। স্ট্রে কিডস ভক্তদের বলা হয় 'স্টে'। অন্য অনেক 'স্টে'দের মতো আমিও স্বপ্ন দেখতাম একদিন তাঁদের কনসার্ট দেখার। হাজারও মানুষের সঙ্গে লাইটস্টিক দুলিয়ে দুলিয়ে গলা মেলানোর। তবে কখনও ভাবিনি এই আশা পূরণ হবে।

কিন্তু ও-লেভেল পরীক্ষা শেষে মায়ের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা করি। সৌভাগ্যবশত ঠিক সেসময়েই সেখানে স্ট্রে কিডসের 'ডমিনেট ওয়ার্ল্ড টুর' চলছিল। এরপর আর কে পারে এই স্টে কে থামিয়ে রাখতে? অনেক আবদার করে শেষমেশ মাকে রাজি করলাম। কেটে ফেললাম ওয়াশিংটন কনসার্টের টিকেট।

স্ট্রে কিডসের কনসার্টে মায়ের সঙ্গে আমি

গত ২৩ জুন বিমান থেকে নেমে লাঞ্চ সাড়লাম কোনোমতে। রেডি হয়েই বেড়িয়ে পড়লাম ন্যাশনালস পার্কের উদ্দেশ্যে। উত্তেজনায় বুক ধড়ফড় করছিল। এর আগে আমি কোনো ছোটখাটো কনসার্টেও যাইনি, আর এ তো ছিল আরও বিশাল ব্যাপার। তবে যখন দেখলাম পিলপিল করে আমারই মতো হাজারো স্টে ব্যান্ডটির সিগনেচার রঙ লাল ও কালোতে সেজে স্টেডিয়ামে ঢুকছে, তখন স্বস্তি পেলাম।

আরও পড়ুন
ছোট-বড় দেশি-বিদেশি নানা ভক্তদের সঙ্গে গলা মিলিয়ে চিৎকার করতে পারা এবং নিজ চোখে মঞ্চের আলোয় আমার প্রিয় আটজনকে দেখার অনুভূতিটি ভাষায় বোঝানো কঠিন

ঘড়ির কাটা সাড়ে সাতটা ছুঁতেই স্টেজে উঠে পড়লো বাংচান, লি নো, হান, ফিলিক্স, হিউনজিন, চাংবিন, সাংমিন ও আই এন। প্রথম পারফরম্যান্সটি ছিল তাঁদের হিট গান, 'চিক চিক বুম'। এরপর একে একে 'ডমিনো', 'এস-ক্লাস' এর মতো জনপ্রিয় গানগুলো নিখুঁতভাবে পরিবেশন করলেন তাঁরা। যখন সাংমিন ও লি নো 'সিনেমা' গানটি শুরু করলেন, স্টেজের দুপাশ থেকে আতসবাজি ছোড়া হলো। আলোকিত হয়ে উঠল সন্ধ্যার আকাশ। শুধু তাই নয়, গানটির পর কনসার্টে উপস্থিত সবার নাম স্ক্রিনে ভেসে উঠল। ব্যান্ডের প্রতিটি মেম্বার আমাদের উদ্দেশ্যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন।

ছোট-বড় দেশি-বিদেশি নানা ভক্তদের সঙ্গে গলা মিলিয়ে চিৎকার করতে পারা এবং নিজ চোখে মঞ্চের আলোয় আমার প্রিয় আটজনকে দেখার অনুভূতিটি ভাষায় বোঝানো কঠিন। মনে হচ্ছিল এই মুহূর্তের চাইতে আনন্দময় আর কিছুই হতে পারে না। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত খুব দ্রুতই এই আনন্দের সমাপ্তি ঘটে। তীব্র গরমের কারণে বেশ কয়েকজন দর্শক অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে কনসার্টটি সময়ের আগেই হঠাৎ করে বন্ধ করে দেয়া হয়। আমরা শেষের কয়েকটি গান শুনতে পারিনি, বিদায়ও দিতে পারিনি আমার প্রিয় ব্যান্ডকে।

আরও পড়ুন
আমরা শেষের কয়েকটি গান শুনতে পারিনি, বিদায়ও দিতে পারিনি আমার প্রিয় ব্যান্ডকে

কনসার্টটি অসম্পুর্ণ থেকে গেলেও দিনটি চিরকাল আমার সবচেয়ে স্মরণীয় একটি দিন হয়ে থাকবে। কারণ, সেদিন কেবল গান বা পারফম্যান্সই দেখিনি, বড় তারকা হয়েও মানুষ কীভাবে বিনয়ী হতে হয়, দেখেছি সেটাও। ভক্তদের পানি এগিয়ে দিচ্ছিলেন বাং চান। একজন স্টে পাশের আচেনা আরেকজনকে বাতাস করছিল। দিন শেষে, স্ট্রে কিডস শুধু তাঁদের গানবাজনার জন্যই আমার প্রিয় নয়। এটা একটা পরিবারের মতো। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে আমারই মতো আরও লক্ষ লক্ষ স্ট্রে কিডসভক্তদের নিয়ে তৈরি এই পরিবার। এটাই স্ট্রে কিডসকে আমার কাছে অসাধারণ করে তুলেছে।

লেখক: শিক্ষার্থী, একাদশ শ্রেণি, এস. এফ. এক্স. গ্রিনহেরাল্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, ঢাকা

আরও পড়ুন