গাধা কি আসলেই গাধা?

ভার বহনে গাধার জুড়ি নেইছবি: সংগৃহীত

গাধার বোকামি নিয়ে নানা গালগল্প প্রচলিত আছে। প্রচলিত ধারণা হলো, গাধা খুব বোকা প্রাণী। কিন্তু আসলেই কি গাধা বোকা? একজন অনুসন্ধানী মানুষ হিসেবে যাচাই না করে কি গাধাকে বোকা প্রাণী হিসেবে মেনে নেওয়া যায়? গাধা আসলে খুবই বুদ্ধিমান। মানুষের ভার বিনা প্রতিবাদে বহন করে বলে গাধাকে নীচুশ্রেণির প্রাণী হিসেবে ভাবেন অনেকেই। তবে পৌরাণিক কাহিনিতে গাধাকে সম্মানজনক অবস্থানে রাখা হয়েছে।

বর্তমানে পালন করা গাধার পূর্বপুরুষ সোমালিয়ান বন্য গাধা। প্রাচীন মিসর এবং লিবিয়ার অধিবাসীরা গাধাকে গৃহপালিত পশু বানানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছিল। প্রথমে গাধাকে ব্যবহার করা হতো কৃষিকাজে। তারপর বোঝাবাহী হিসেবে খাটানো শুরু হয়। খুব কাজে লাগে বলে প্রাচীনকালে গাধার মূল্য ছিল অনেক বেশি। রোমান যুগে গাধার দাম ছিল প্রায় ৪০০ সেস্টারসেস পর্যন্ত। বর্তমানে যা হাজার ইউরোর সমান।

ঘোড়ার পাশাপাশি গাধাও ইতিহাসজুড়ে মানুষকে সেবা দিয়ে এসেছে। মোটরগাড়ি আসার আগে মানুষ চড়ত পশুটানা গাড়িতে। ভ্রমণ ও পরিবহনে গাধার জুড়ি নেই। তবু মানুষের রসিকতায় গাধা বেশ অসম্মানের শিকার। ষষ্ঠ শতাব্দীর প্রথম দিকে বিখ্যাত রোমান পণ্ডিত ডি সি ইসিডোর গাধাকে ‘অলস এবং বোকা’ বলেছেন। রোমান সময়ে যারা পড়তে ও লিখতে পারত না, তাদের গাধা হিসেবে উল্লেখ করা হতো। তারা বলত, ‘এই গাধা, তোমাকে কি শেখাব কীভাবে লিখতে-পড়তে হয়?’ রোমান সাম্রাজ্যের স্কুলে এই কথা খুব প্রচলিত ছিল।

আরও পড়ুন

আসলে গাধা বোকা প্রাণী ধারণাটা এসেছে গাধার জেদ থেকে। গাধা খুব একরোখা। সহজে পোষ মানানো যায় না চারপেয়ে এই প্রাণীকে। তাই পোষমানা বা খামারের কাজে সাহায্য করা গাধার দাম ছিল এত বেশি।

ভার বহনে গাধার জুড়ি নেই। আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও অন্যান্য পাহাড়ি দেশের রুক্ষ পথে গাধাকে টানাগাড়ি টানতে বা বোঝা বহন করতে দেখা যায়। গাধার স্মৃতিশক্তি খুব ভালো। যে পথ দিয়ে গাধা চলে, সেগুলো কখনো ভোলে না। পরিচিত একটি এলাকাকে গাধা প্রায় ২৫ বছর পর্যন্ত মনে রাখতে পারে।

গরু, মহিষ ও ঘোড়াকে যতটা সহজে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত করা যায়, গাধাকে তা করা যায় না। যেমন সামনে কোথাও পানি আছে, তুমি ঘোড়ার পিঠে চড়ে পানিটুকু পাড়ি দিতে চাও। গভীরতা না জেনেও ঘোড়া তোমার নির্দেশ মেনে পানিতে নেমে পড়বে। ঘোড়ার জন্য এই নির্দেশনা ঝুঁকিপূর্ণ কি না, ঘোড়া তা চিন্তাই করতে পারে না। কিন্তু গাধা পারে। গাধার জন্য বিপজ্জনক এমন কাজ করতে গাধাকে বাধ্য করা যায় না। গাধার পছন্দ-অপছন্দ খুব শক্ত। ঠায় দাঁড়িয়ে থাকবে। যতই মারো বা ধরো, এক চুলও নড়বে না। মনে করো, ঢাল বেয়ে গাধাকে উঠতে হবে। কিন্তু পড়ে গিয়ে আহত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। গাধা যদি এই ঝুঁকি টের পায়, আর কোনোভাবেই ওই ঢালে উঠবে না।

আরও পড়ুন

পিঠে পছন্দের বা ক্ষমতার অতিরিক্ত বোঝা চাপিয়ে দিলে গাধা নড়বেও না। অন্ধভাবে অনুকরণ গাধার ধাতে নেই। নির্দেশ পালন করানোর জন্য গাধাকে বুঝিয়ে–শুনিয়ে প্রশিক্ষণ দিতে হয়।

গাধার সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাও দারুণ
ছবি: সংগৃহীত

গাধার সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাও দারুণ। ঝুঁকি খুঁজে পাওয়ার ক্ষমতা তো আছেই। সঙ্গে আছে কৌতূহল। কোনো জায়গা বা দিকের প্রতি কৌতূহলী হয়ে উঠলে গাধা সেদিকেই যায়। কিছু দেখতে পেলে ঘুরেফিরে দেখতে আসে।

ঘোড়ার মতো গাধাও খেলার ছলে ছোটাছুটি আর লাফালাফি করে। তারপরও ঘোড়ার তুলনায় গাধাকে বোকা প্রাণী মনে করে মানুষ। কারণ, গাধার কর্কশ স্বরে ডাকাডাকি। খেলার সময়ও এমন শব্দ করে গাধা। এই ডাক শুনে বিরক্ত হয় মানুষ। আর বিরক্তি থাকলে ওদের খেলাধুলা ঠিক কিউট কোনো প্রাণীর খেলাধুলার মতো আমাদের চোখে পড়ে না। ভালোমতো খেয়াল করলে গাধাকে বুদ্ধিমান প্রাণীই মনে হবে।

এরপর তোমার বন্ধুকে গাধা বলে ডাকার আগে ভেবে নিও।

আরও পড়ুন