সারা দিন স্কুল করার পরও কেন হোমওয়ার্ক করতে হবে
সারা দিন স্কুলে ক্লাস করার পর বাসায় ফিরে আবার হোমওয়ার্কের খাতা নিয়ে বসতে কার ভালো লাগে, বলো? তোমারও নিশ্চয়ই মাঝেমধ্যে খুব বিরক্ত লাগে। শিক্ষকেরা কেন এত হোমওয়ার্ক দেয়, প্রশ্নটা কি তোমার মাথায় আসে? তাহলে তোমাকে কানে কানে একটা কথা বলি। এই দলে তুমি একা নও, পৃথিবীর অনেক ছাত্রছাত্রীর মাথায় এই প্রশ্নটা ঘোরে। তাই চলো, কথা না বাড়িয়ে শিক্ষকদের হোমওয়ার্ক দেওয়ার আসল উদ্দেশ্যটা বোঝার চেষ্টা করি।
হোমওয়ার্ক কি সত্যিই দরকারি
গবেষণা বলছে, ভালোভাবে নিয়মিত হোমওয়ার্ক করলে হাই স্কুলের শিক্ষার্থীরা গণিত বা ইংরেজির মতো বিষয়ে অন্যদের চেয়ে প্রায় পাঁচ মাস এগিয়ে থাকতে পারে। প্রাইমারি স্কুলের ক্ষেত্রে এই প্রভাবটা একটু কম। তারা এগিয়ে থাকতে পারে প্রায় তিন মাসের মতো। সেটাও কিন্তু কম নয়! আর গবেষণা করে যেহেতু এই তথ্য পাওয়া গেছে, বিশ্বাস না করে উপায় আছে?
আসলে তুমি স্কুলে যা শিখেছ, তা বাড়িতে বসে অনুশীলন করার জন্যই শিক্ষকেরা হোমওয়ার্ক দেন। স্কুল থেকে শেখার পর বাসায় এসে আবার একটু অনুশীলন করলে বিষয়টা আরও ভালোভাবে মনে থাকে। শুধু তাই নয়, হোমওয়ার্ক তোমার নিজের দায়িত্ববোধ, সময়মতো কাজ শেষ করার অভ্যাস এবং একা একা কোনো সমস্যা সমাধান করার মতো দারুণ সব দক্ষতা তৈরি করে দেয়।
তবে সব হোমওয়ার্ক কিন্তু এক রকম নয়। তোমার যদি কোনো হোমওয়ার্ক খুব বিরক্তিকর লাগে, তাহলে হতে পারে সেটা আসলেই হয়তো কিছুটা বোরিং! হয়তো একটা খাতার মধ্যে শুধু কিছু প্রশ্নের উত্তর লেখা, যার সঙ্গে ক্লাসের পড়ার কোনো মিল নেই। এমন হোমওয়ার্ক বোরিং লাগতে পারে। যে কাজটা তোমাকে নতুন করে ভাবতে শেখাবে না, কিছু তৈরি করতে বা কোনো বিষয় নিয়ে আরও জানতে উৎসাহিত করবে না, সেই হোমওয়ার্ক খুব একটা কাজের নয়। কিন্তু তুমি হয়তো ক্লাসে একটা অঙ্ক করেছ, সেই একই নিয়মের অঙ্ক যদি বাসায় এসে আবার নিজেই বুদ্ধি খাটিয়ে করতে পারো, তাহলে সেটাই হলো আসল হোমওয়ার্ক।
এ জন্য শিক্ষকদেরও বড় দায়িত্ব আছে। তাঁদের এমন কাজ বেছে নিতে হবে, যা শিক্ষার্থীদের কাছে অর্থবহ মনে হয়। ক্লাসের শেষে তাড়াহুড়া করে হোমওয়ার্ক দেওয়ার চেয়ে, ক্লাসের শুরুতে বা মাঝে বুঝিয়ে দিলে শিক্ষার্থীরা পড়ার সঙ্গে হোমওয়ার্কের সম্পর্কটা ভালোভাবে বুঝতে পারে।
তোমার চারপাশের মানুষজনও কিন্তু হোমওয়ার্কের ব্যাপারে তোমার ভাবনাকে প্রভাবিত করে। যেমন, তোমার মা–বাবা যদি তোমাকে উৎসাহ দেন, তোমার হোমওয়ার্কের খোঁজখবর নেন বা সময়মতো কাজটা করার জন্য সাহায্য করেন, তাহলে দেখবে হোমওয়ার্ক করতে ভালো লাগছে। তবে একটা মজার তথ্য দিই। মা–বাবা বা ভাই-বোন কিংবা অন্য কেউ যদি হোমওয়ার্ক করার কথা বলেন বা খোঁজখবর নেন, তাহলে সত্যিই তোমার উপকার হবে। কিন্তু তাঁরা যদি তোমার হোমওয়ার্ক করে দেন, তাহলে কিন্তু কোনো লাভ হবে না! অর্থাৎ, নিজের হোমওয়ার্ক নিজের করতে হবে।
সবার জন্য কি হোমওয়ার্ক সমান?
এটাও সত্যি যে সবার পরিস্থিতি এক রকম থাকে না। কেউ হয়তো বাসায় পড়ার জন্য একটা শান্ত জায়গা পায়, আবার কেউ পায় না। কারও বাসায় সাহায্য করার মতো মানুষ থাকে, আবার কারও থাকে না। এই যে সুযোগের পার্থক্য, একে বলা হয় ‘হোমওয়ার্ক গ্যাপ’। এই কারণে অনেক শিক্ষার্থীর কাছে হোমওয়ার্ক করতে ভালো লাগে না। অনেকেই হয়তো মা–বাবা বা শিক্ষকের চাপে হোমওয়ার্ক করে, কিন্তু কোনো মজা পায় না।
এই সমস্যাগুলোর কথা মাথায় রেখেই এখন অনেক স্কুল হোমওয়ার্ক নিয়ে নতুন করে ভাবছে। তারা চেষ্টা করছে হোমওয়ার্ককে আরও মজার এবং সবার জন্য সমান সুযোগ করে দিতে। কিছু স্কুল তো আবার সব বিষয়ে হোমওয়ার্ক বাধ্যতামূলক না রেখে ঐচ্ছিক করে দিচ্ছে। আবার অনেক স্কুলে ‘হোমওয়ার্ক ক্লাব’ তৈরি করা হচ্ছে। সেই ক্লাবের সদস্যরা বন্ধুদের সঙ্গে মিলে বা শিক্ষকদের সাহায্য নিয়ে কাজটা শেষ করতে পারে।
তাহলে বুঝতেই পারছ, হোমওয়ার্ক সবার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। তবে তা করতে হবে আনন্দের সঙ্গে। এটাকে বোঝা মনে করা যাবে না। হোমওয়ার্ক থেকে নতুন জিনিস শিখতে পারবে। নিজের চিন্তা ও কল্পনাশক্তিও কাজে লাগাতে পারবে।
সূত্র: কিউরিয়াস কিডস