মাংসের লোভে শিশুদের পানিতে ফেলে দিত যে কুকুর
ঘটনাটা এখন থেকে শত বছরেরও আগের। লেখাটি ২ ফেব্রুয়ারি ১৯০৮ সালে নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত হয়েছিল।
সে সময় ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের সিন নদীর তীরে এক কুকুরের বীরত্বের কাহিনী সারা প্যারিসে ছড়িয়ে পড়ে। যেন তেন সে বীর নয়।
যখনই কোন শিশু সিন নদীতে পড়ে যায়। তখন কোথা থেকে একটা কুকুর ডুবন্ত শিশুটির পাশে হাজির হয়। তারপর সে প্রবল শক্তি দিয়ে শিশুটিকে মুখে ধরে পাড়ে নিয়ে আসে।
সিন নদীর তীরে বাসা বেধেছিলেন মশিয়ে লেপিন। তিনি এক নিউফাউনল্যান্ড প্রজাতির কুকুর পোষা শুরু করেন।
ইতোমধ্যে নদীর পাড়ে মানুষের ভিড় জমে যায়। তাঁরা এই কুকুরটিকে বাহবা দিতে থাকে। অনেকে শুধু বাহবা নয়, কুকুরটির দিকে বাড়িয়ে দেয় নানান খাবার। কারো হাতে থাকে মাংসের টুকরা, কেউ আবার নদীর তীরে খাবার জন্য আনা খাবারটা তুলে দেয় এই বীর কুকুরের হাতে।
কুকুরটি তাঁর বীরত্বের জন্য পায় এন্তার পুরস্কার । সব লোভনীয় খাবার ছাড়াও সবচেয়ে বড় সম্মান সবার চোখে সে শিশুদের জীবন বাঁচানো এক হিরো।
যেভাবে কাহিনীর শুরু
সিন নদীর তীরে বাসা বেধেছিলেন মশিয়ে লেপিন। তিনি এক নিউফাউনল্যান্ড প্রজাতির কুকুর পোষা শুরু করেন। কুকুরটাকে তিনি এমন ভাবে প্রশিক্ষণ দেন যেন সে সিন নদীতে পড়া যা বা ডুবন্ত শিশুকে যেন উদ্ধার করতে পারে। আর এর পুরস্কার অবশ্যই ডগ মিট বা মাংসের টুকরা।
এরপর মসিয়ে লেপিন কুকুরটি নদীর ধারে রেখে দেন। যাতে সে দিনের বেলা নদীতে পড়ে যাওয়া শিশুকে সে নদী থেকে তুলে আনতে পারে। এরপর দেখা গেলো প্রায়শ শিশুরা নদীতে পড়ে যায়।আর সেই বীর কুকুর তাদের তুলে আনে আর পায় প্রচুর খাবার (পুরস্কার হিসেবে)।
যখন কুকুরটি আবিষ্কার করলো পানি থেকে শিশুকে উঠিয়ে আনলেই মাংস পাওয়া যায়, তখন সে অপেক্ষা করতে শুরু করে কখনো শিশু পানিতে পড়ে যায়।
এরপর ঘটনাটা এত ঘন ঘন ঘটতে থাকলো সিন নদীর পাড়ের বাসিন্দারা শঙ্কিত হয়ে উঠলো, সেই সাথে তাঁদের দেখা দিল সন্দেহ। এরপর তারা নদী তীরে পাহারা বসালো। পাহারাদারদের অনুসন্ধানে আবিষ্কার হয় এত বেশী আর ঘন ঘন শিশুদের সিন নদীতে পড়ে যাওয়ার পেছনে দায়ী আর কেউ নয়, সেই উদ্ধারকারী কুকুর।
যখন কুকুরটি আবিষ্কার করলো পানি থেকে শিশুকে উঠিয়ে আনলেই মাংস পাওয়া যায়, তখন সে অপেক্ষা করতে শুরু করে কখনো শিশু পানিতে পড়ে যায়। কিন্তু যদি কোন শিশু পানিতে না পড়ে তাহলে সে কৌশলে শিশুদের পাড়ের একেবারে কাছে নিয়ে আসে, তারপর শিশুটিকে ধাক্কা দিয়ে পানিতে ফেলে দেয়। আর শিশুরা পানিতে পড়ে গেলে সেও ঝাঁপিয়ে পড়ে শিশুটির জীবন বাঁচায়।
সারা বিশ্ব যখন এই ঘটনা জানতে পারে তখন কুকুরটির নাম দেয়, ‘দি ফেক হিরো’ বা ‘ভুয়া এক বীর’।