আমাজনের বিশালাকার গাছগুলো হুট করে বড় হচ্ছে কেন

আমাজনের সবচেয়ে বড় গাছগুলো শুধু টিকে নেই, বরং আরও মোটা ও শক্তিশালী হয়ে উঠছেদ্য কনসার্ভেশন

আমাজন বনের ১ শতাংশ গাছ দানবাকৃতির। অক্সিজেন উৎপাদনে এসব গাছ সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখে। বছরের পর বছর ধরে বিজ্ঞানীরা মনে করতেন, ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা ও দীর্ঘ খরায় এই সব দানবাকার গাছ দ্রুত মরে যাবে। কিন্তু সাম্প্রতিক এক গবেষণা এ ধারণাকে বদলে দিয়ে বলছে। জানা গেছে, পুরোনো আমাজন বন এখন আশ্চর্যজনকভাবে জলবায়ুর ধাক্কা সামলে বেঁচে থাকতে পারছে।

৪ ডিসেম্বর ২০২৫ বৃহস্পতিবার নেচার প্ল্যান্টস জার্নালে প্রকাশিত নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, আমাজনের সবচেয়ে বড় গাছগুলো শুধু টিকে নেই, বরং আরও মোটা ও শক্তিশালী হয়ে উঠছে। শতাধিক গবেষক এই প্রকল্পে কাজ করছেন। ব্রাজিল, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশের ৬০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা ৩০ বছর ধরে ১৮৮টি প্লটে বনের পরিবর্তনগুলো পর্যবেক্ষণ করছেন। দেখা গেছে, গাছের গুড়ির গড় ব্যাস প্রতি দশকে প্রায় ৩ দশমিক ৩ শতাংশ বাড়ছে। সবচেয়ে বেশি বৃদ্ধি দেখা গেছে বনের সেই সব বিশাল গাছের মধ্যে, যেগুলোর উচ্চতা ৩০ মিটারের বেশি।

আরও পড়ুন

বিজ্ঞানীরা বলছেন, বাতাসে কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে যাওয়াই এই বৃদ্ধির কারণ। যানবাহন, বিদ্যুৎকেন্দ্র ও শিল্পকারখানার ধোঁয়া থেকে যে অতিরিক্ত কার্বন বাতাসে জমছে, গাছগুলো তা শোষণ করে নিজেদের কাণ্ড, শাখা, বাকল ও শিকড়ে জমা রাখছে। এই প্রক্রিয়া পৃথিবীর উষ্ণায়ন কিছুটা হলেও কমাতে সাহায্য করছে।

লিডস ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক অলিভার ফিলিপস বলেছেন, ‘এটি নিঃসন্দেহে ভালো খবর, তবে এখানে “কিন্তু” আছে। আমাদের তথ্য কেবল টিকে থাকা পুরোনো বনের অবস্থা জানাচ্ছে। এই বনের পরিস্থিতি আমরা স্থিতিশীল দেখছি। কিন্তু যদি বন উজাড় করা থামানো না যায়, তাহলে এর মূল্য শেষ পর্যন্ত শূন্য হয়ে যাবে।’

আরও পড়ুন

ব্রাজিল সরকার এখন আমাজনের কেন্দ্রভাগে বিআর-৩১৯ নামে একটি নতুন রাস্তা পাকা করার পরিকল্পনা করছে। এই রাস্তার পাশে এখনো বিশাল বনাঞ্চল অক্ষত রয়েছে। তবে রস্তা বানানো শেষ হলে এই এলাকায় দ্রুত মানুষের আনাগোনা বাড়বে। অন্যদিকে, বলিভিয়ায় সয়াবিন চাষ ও গবাদিপশুর খামারের জন্য অনেক বন কেটে ফেলা হচ্ছে।

গবেষণার আরেকটি তথ্য গুরুত্বপূর্ণ। আমাজন বনের যেসব অংশ আগেই আলাদা হয়ে গেছে, যেখানে কৃষিজমি, রাস্তা ও বাড়িঘর বনের মধ্যে বানানো হয়েছে, সেসব জায়গা এখন কার্বন শোষক থেকে কার্বন নিঃসরণকারী অঞ্চলে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে বনের সীমানায় থাকা বড় গাছগুলো আগুন, খরা ও ঝড়ে দুর্বল থাকে। দাবানলের আগুন সহজে বড় বনাঞ্চলের দিকে ছড়িয়ে যায়।

বড় গাছ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে প্রচলিত ধারণা ছিল, যেহেতু এদের শিকড় তুলনামূলক পাতলা, তাই তাপমাত্রা বাড়লে এরা দ্রুত মরে যাবে। কিন্তু সাম্প্রতিক পর্যবেক্ষণে দেখা যাচ্ছে, এসব গাছের পাতলা শিকড়গুলো অনেক গভীর থেকে পানি শোষণের ক্ষমতা রাখে যা এদের বেঁচে থাকতে বাড়তি সাহায্য দেয়।

আরও পড়ুন

গবেষণার অন্যতম প্রধান লেখক কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. আদ্রিয়ানে এসকিভেল-মুয়েলবার্ট জানান,‘যদিও বড় গাছ পুরো বনের মাত্র ১ শতাংশ, তবু এই সামান্য অংশই বনের ৫০ শতাংশ কার্বন চক্র পরিচালনা করে। একইভাবে বনের পানিচক্রেরও অর্ধেকের ভার এদের ওপর।

ড. আদ্রিয়ানের মতে, বড় গাছ মারা গেলে বন অনেক বেশি শুকিয়ে যায়। বন টিকে থাকে না। এই পরিবেশ থেকে আবারও বিশাল গাছ জন্ম নিতে দশকের পর দশক সময় লাগে। তাই বনের বড় গাছগুলো আরও বড় হওয়ার সুখবরের পাশাপাশি উদ্বেগের বিষয়ও আছে। দানবাকার গাছ যতই শক্তিশালী হোক, বন উজাড় এবং আগুনের প্রবল চাপে এরা দীর্ঘদিন একা টিকে থাকতে পারবে না। তাই মানুষকে বনের পাশে দাঁড়াতে হবে। বন উজাড় করা বন্ধ করতে হবে।

সূত্র: ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম

আরও পড়ুন