ব্যায়ামের পর পেশিতে ব্যথা কেন হয়
খেলাধুলা করার পর, জিমে প্রথম দিনের ওয়ার্কআউট করে কিংবা দৌড়ানো বা সাইকেল চালানোর সময় বেশ ফুরফুরে লাগে সবার। কিন্তু আসল সমস্যা শুরু হয় পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে। তখন মনে হয় যেন শরীরের কোনো পেশিতেই শক্তি নেই। এমনকি নাশতা করতে বসে গ্লাস ওঠাতে গেলেও হাতে ব্যথা কিংবা হাঁটতে অনেক কষ্ট হয়। কিন্তু হঠাৎ বেশি পরিশ্রম করলে বা ব্যায়াম করলে মাংসপেশিতে এমন ব্যথা হয় কেন?
এমনটা ভাবার কারণ নেই যে ব্যথা শুধু হঠাৎ বেশি পরিশ্রম করলেই হয়। মূলত ব্যায়ামের পর পেশিতে ব্যথা হওয়াটা নিয়মিত শরীরচর্চা করেন—এমন যেকোনো মানুষের জন্য খুবই সাধারণ অভিজ্ঞতা। এই ব্যথা সাধারণত তখনই হয়, যখন এমন কোনো নতুন ধরনের বা ভিন্ন ব্যায়াম করা হয়, যা করার জন্য শরীর আগে থেকে অভ্যস্ত ছিল না।
সাধারণত যখন প্রতিদিন একই ধরনের ব্যায়াম বা কাজ করা হয়, তখন শরীরের নির্দিষ্ট পেশিগুলো সে কাজে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে। কিন্তু হঠাৎ যখন একটি নতুন নিয়মে কাজ শুরু করা হয় অথবা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সময় ধরে ব্যায়াম করা হয়, তবে পরের দিন সকালে পেশিতে ব্যথা নিয়ে ঘুম থেকে ওঠার আশঙ্কা থাকে।
ব্যায়ামের পর পেশিতে যে ব্যথা হয়, তাকে সাধারণত বিলম্বিত পেশিব্যথা বা ডিওএমএস (ডিলেড অনসেট মাসেল সোরনেস) বলা হয়। এই ব্যথা সাধারণত ব্যায়াম করার সঙ্গে সঙ্গে হয় না; বরং পরের দিন বা তারও পরে অনুভূত হয়। অভ্যাস না থাকলে হঠাৎ ভারী ব্যায়াম শুরু করলে পেশির এই ব্যথা হয়।
পেশিব্যথা সাধারণত তখনই হয়, যখন এমন কোনো ব্যায়াম করা হয়, যার সঙ্গে শরীর অভ্যস্ত নয়। অনেকের ধারণা, ব্যায়ামের সময় পেশিতে যে ‘জ্বালা’ বা অল্প ব্যথা হয়, তা ল্যাকটিক অ্যাসিড জমার জন্য হয়। কিন্তু ব্যায়ামের পরের দিন যে ব্যথা অনুভূত হয়, তা এর চেয়ে ভিন্ন। এই বিলম্বিত ব্যথার মূল কারণ হিসেবে ধরা হয় ব্যায়ামের সময় পেশির মধ্যে যে খুব ছোট ছোট ক্ষতি হয়, একে। এর ফলে পেশিতে যে প্রদাহ বা ফোলা ভাব সৃষ্টি হয়, সেটি এই ব্যথার মূল কারণ।
এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা জানান, ৩০ মিনিট বা এরও বেশি সময় শারীরিক পরিশ্রমের মাধ্যমে আমাদের পেশিগুলো সক্রিয় হয়। আর ব্যায়ামের পরের ব্যথা আসলে আমাদের পেশিগুলোর নিজেকে মেরামত করার কারণেই হয়। ব্যথা হওয়া একটি ভালো লক্ষণ যে যথেষ্ট পরিশ্রম হয়েছে। তবে মনে রাখতে হবে, ব্যথার মাত্রা এত বেশি হওয়া উচিত নয় যে তা সহ্য করা বেশ কঠিন। সে জন্য ব্যায়ামের ব্যথা থেকে দ্রুত সেরে ওঠার জন্য পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া খুব জরুরি।
‘জার্নাল অব ফিজিওলজিক্যাল সায়েন্সেস’–এ প্রকাশিত ২০১৫ সালের একটি গবেষণায় জানানো হয়, পেশিব্যথা সাধারণত ১২ থেকে ২৪ ঘণ্টা পর শুরু হয়। এই ব্যথার তীব্রতা ২৪ থেকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায় এবং ব্যায়ামের সাত দিনের মধ্যেই পুরোপুরি চলে যায়।
পেশিব্যথা কমানোর অন্যতম সেরা উপায় হলো পর্যাপ্ত পানি পান করা; সঙ্গে শরীরকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম দেওয়া ও ঘুমানো। সেই সময় শরীর নিজেকে মেরামতের কাজ করে। শরীর ঠিক হওয়ার সময় হালকা কিছু ব্যায়াম করা যেতে পারে, যাতে শরীর এর সঙ্গে দ্রুত মানিয়ে নিতে পারে। যদি এই সময়ের পরও ব্যথা থাকে, তাহলে বুঝতে হবে, হয়তো পেশিতে আঘাত লেগেছে। তখন অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
সূত্র: লাইভ সায়েন্স