ইসরায়েলি অবরোধ ভাঙতে গাজায় যাত্রা করেছেন গ্রেটা থুনবার্গ

জলবায়ু আন্দোলনকর্মী হিসেবে বিশ্বজুড়ে পরিচিত গ্রেটা থুনবার্গ। জলবায়ু সুক্ষার জন্য আন্দোলন করে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে খবরের শিরোনামে এসেছেন তিনি। এবার তিনি যাত্রা শুরু করেছেন গাজা অবরোধ ভাঙার উদ্দেশ্যে। তাঁর সঙ্গে আছেন 'গেম অব থ্রোনস' অভিনেতা লিয়াম কানিংহাম। মোট ১২ জনের একটি দল গাজার উদ্দেশ্যে একটি জাহাজে যাত্রা শুরু করেছে। আয়োজকদের সূত্রে জানা গেছে, এই যাত্রার লক্ষ্য ‘গাজায় ইসরায়েলের অবরোধ ভাঙা’।

‘ম্যাডলিন’ নামের পালতোলা জাহাজটি দক্ষিণ ইতালির সিসিলির কাটানিয়া বন্দরে থেকে গতকাল রোববার যাত্রা শুরু করেছে। এটি পরিচালনা করছে ‘ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন’ নামে একটি অ্যাকটিভিস্ট গ্রুপ। জাহাজটি গাজার উপকূলে পৌঁছানোর চেষ্টা করবে। গাজায় কিছু মানবিক সাহায্য পৌঁছে দিতে চান আয়োজকেরা। চলমান মানবিক সংকট নিয়ে ‘আন্তর্জাতিক সচেতনতা’ বাড়াতে তাঁদের এই যাত্রা। রোববার জাহাজ ছাড়ার আগে সংবাদ সম্মেলনে এগুলো জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।

সুইডেনে ব্যাপক প্রতিবাদ আয়োজন করে আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত হয়ে ওঠেন তিনি। তাঁর জলবায়ু আন্দোলন ‘ফ্রাইডেস ফর ফিউচার’ ব্যাপক প্রচারণা পায়। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন গ্রেটা থুনবার্গ। তিনি বলেন, ‘আমরা এটা করছি কারণ, যত প্রতিকূলতাই আসুক না কেন, আমাদের চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। কারণ, যেই মুহূর্তে আমরা চেষ্টা করা বন্ধ করব, সেই মুহূর্তে আমরা আমাদের মানবতা হারিয়ে ফেলব। এই মিশনটা যত বিপজ্জনকই হোক না কেন, এটি সরাসরি সম্প্রচারিত গণহত্যা দেখেও পুরো বিশ্বের নীরব থাকার মতো ভয়ংকর না।’

ইসরায়েল অবশ্য জোরালোভাবে গণহত্যার অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

মে মাসের মাঝামাঝি ইসরায়েল গাজায় অবরোধ সামান্য শিথিল করেছে। কিছু পরিমাণ মানবিক সহায়তা প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, যদি আরও সাহায্য না পৌঁছায়, তবে গাজায় দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে।

জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা ও বড় বড় সাহায্য সংগঠনগুলো বলেছে, ইসরায়েলি নিষেধাজ্ঞা, আইন-শৃঙ্খলার ভেঙে পড়া এবং ব্যাপক লুটপাটের কারণে গাজার প্রায় ২০ লাখ ফিলিস্তিনির কাছে সহায়তা পৌঁছে দেওয়া অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছে।

‘ম্যাডলিন’ জাহাজের যাত্রীদের মধ্যে আছেন ‘গেম অব থ্রোনস’ খ্যাত অভিনেতা লিয়াম কানিংহাম। আছেন ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত ফ্রান্সের একজন ইউরোপীয় সংসদ সদস্য রিমা হাসান। গাজায় ইসরায়েলি হামলার বিরুদ্ধে সক্রিয় অবস্থানের কারণে তাঁকে ইসরায়েলে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ইসরায়েল।

জাহাজে অবস্থান করা আন্দোলনকারীরা আশা করছেন, যদি তাঁদের থামিয়ে না দেওয়া হয়, তবে তাঁরা সাত দিনের মধ্যে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবেন।

জাহাজে চেপে এর আগেও একটি ফ্রিডম ফ্লোটিলা জাহাজ গাজার উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। গত মাসে সেই জাহাজেও গ্রেটার যাওয়ার কথা ছিল। তবে মে মাসের শুরুতে সমুদ্রপথে গাজায় পৌঁছানোর সেই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। এই আন্দোলনকারীদের আরেকটি জাহাজ ‘কনসায়েন্স’ আন্তর্জাতিক জলসীমায় মাল্টার উপকূলের কাছে ছিল, তখন দুইটি ড্রোন দিয়ে আক্রান্ত হয় জাহাজটি।

এই হামলার জন্য দলটি ইসরায়েলকে দায়ী করেছে। হামলায় জাহাজটির সামনের অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এটি ছিল গাজায় সাহায্য পাঠানোর সাম্প্রতিক প্রচেষ্টাগুলোর মধ্যে অন্যতম। এমন এক পরিস্থিতিতে দলটি গাজায় সাহায্য পাঠানোর চেষ্টা করছে, যেখানে গত প্রায় ১৯ মাস ধরে চলা যুদ্ধে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড গাজা ধ্বংস হয়ে গেছে।

এই দলে আছেন অ্যাকটিভিস্ট থিয়াগো আভিলা। তিনি জানিয়েছেন, ‘আমরা সমুদ্রপথে গাজার অবরোধ ভাঙছি। কিন্তু এটি একটি বৃহত্তর কৌশলের অংশ। এর মধ্যে স্থলপথেও অবরোধ ভাঙার উদ্যোগ থাকবে’।

আভিলা বলেছেন ‘গ্লোবাল মার্চ টু গাজার’ কথা। এটি একটি আন্তর্জাতিক উদ্যোগ। যেখানে ডাক্তার, আইনজীবী ও সংবাদকর্মীরাও অংশ নিতে পারবেন। এই দলটি মিশর থেকে রওনা দিয়ে জুনের মাঝামাঝি সময়ে রাফা সীমান্তে পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে। আয়োজকেরা সেখানে একটি বিক্ষোভ আয়োজনের পরিকল্পনা করছেন। এখানে গাজায় হামলা বন্ধ করা এবং সীমান্ত পুনরায় খুলে দিতে ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানানো হবে।

সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান