গত পর্বে যা ছিল: জারা, সারা, লরা। তিন কিশোরী। তিন বান্ধবী। তিন কন্যা। জারা শখের গোয়েন্দা। সারা আর লরা তার সহকারী। ওদের স্কুলের বান্ধবী ক্যারি অ্যানসনের মায়ের কাছ থেকে পাওয়া ফ্রি পাস নিয়ে আমেরিকার রিচমন্ডভিলের বিশাল অ্যামিউজমেন্ট পার্ক ফ্যান্টমল্যান্ডে বেড়াতে এল। পাসগুলো নিজের দায়িত্বে পকেটে রাখল জারা। নানা রকম মজার মজার রাইডসহ, ম্যাজিক, জ্যোতিষ, শিম্পাঞ্জি-ভাঁড় কোকোমাংকের সঙ্গে চমৎকার সময় কাটতে লাগল ওদের। তবে আনন্দটা বেশিক্ষণ থাকল না, যখন পকেট থেকে একটা কুিসত টারান্টুলা মাকড়সা টেনে বের করল জারা, তারপর দেখল আরও বড় অঘটন ঘটে বসে আছে। হতভম্ব হয়ে পড়ল জারা। কী করবে এখন?
তিন.
‘কী হলো, জারা?’ লরা জিজ্ঞেস করল।
‘ট্যাফির ব্যাগটা নেই!’ কাঁপা গলায় জারা বলল। ‘ফ্রি পাসগুলোও নেই!’
মন খারাপ হয়ে গেল জারার। সে কথা দিয়েছিল ফ্রি পাসগুলো সাবধানে রাখবে। কিন্তু এখন হারিয়ে ফেলেছে।
‘তোমার অন্য পকেটে দেখো,’ ক্যারি বলল।
বাঁ পকেটে হাত দিল জারা। ‘না, এখানেও নেই।’
‘সর্বনাশ হয়েছে!’ গুঙিয়ে উঠল লরা।
ওয়েইস্ট-প্যাকের চেন খুলে দেখল ক্যারি। ‘এই যে, আমারটা আছে।’
ভারি দম নিল জারা। ‘হাঁটার সময় পাসগুলো আমার পকেট থেকে পড়ে গিয়ে থাকতে পারে। যেখানে যেখানে গিয়েছি, সবখানে খুঁজে দেখতে হবে।’
নাগরদোলার চারপাশে খুঁজল মেয়েরা। লোকজনকে জিজ্ঞেস করল, মাটিতে কোনো পাস পড়ে থাকতে দেখেছে কি না। ম্যাজিশিয়ান মেইজ দ্য গ্রেটের মঞ্চের কাছেও তন্নতন্ন করে খুঁজল। তারপর এল রনির ট্যাফি স্ট্যান্ডে।
‘সরি, গার্লস,’ রনি বলল। ‘আমি কোনো পাস পড়ে থাকতে দেখিনি।’
দোকান থেকে বেরিয়ে চিন্তিত ভঙ্গিতে হাঁটছে মেয়েরা, এ সময় একটা পরিচিত কণ্ঠ কানে এল। ওদের ডাকছে।
ঘুরে তাকাল জারা। একটা লাল তাঁবুর কাছে এক মহিলাকে বসে থাকতে দেখল। মহিলার চুলের রং রুপার মতো রুপালি। হাত নেড়ে মেয়েদের ডাকলেন। একটা সাইনবোর্ড দেখালেন। তাতে লেখা:
এখনো ভাবছ কী?
তোমার ভাগ্য জেনে নাও!
— মাদাম কোরানজি, জ্যোতিষী।
‘পাসগুলো কোথায় আছে গণক হয়তো বলতে পারবেন,’ লরা বলল।
‘আমি গোনাটোনায় বিশ্বাস করি না,’ ক্যারি বলল।
‘আমিও যে করি, তা নয়,’ জারা বলল। ‘তবু চেষ্টা করে দেখা যাক না।’
জ্যোতিষীর পেছন পেছন পুঁতি দিয়ে বানানো পর্দার অন্য পাশে এল ওরা।
তাঁবুর ভেতরে ছোট একটা টেবিল আর দুটো চেয়ার রাখা। একটা চেয়ারে বসলেন জ্যোতিষী। মেয়েদের জিজ্ঞেস করলেন, ‘প্রথমে কার ভাগ্য গণনা করব?’
সামনে এগিয়ে গেল জারা। ‘আমার। মানে...ঠিক ভাগ্য নয়, আমার কিছু জিনিস হারিয়েছে। কোথায় আছে ওগুলো আপনি হয়তো বলতে পারবেন।’
জ্যোতিষীর মুখোমুখি রাখা অন্য পাশের চেয়ারটায় জারাকে বসতে বললেন তিনি। জারার মুখের সামনে হাত নাড়লেন।
‘আমি দেখতে পাচ্ছি, তোমার নামের প্রথম অক্ষর ‘কে’...তার মানে কি কারা?’
ক্যারির হাসি শুনতে পেল জারা। শুধরে দিয়ে বলল, ‘আমার নাম জারা।’
‘জারা, কারা—ওই কাছাকাছিই হলো, ছন্দের মিল আছে,’ কাঁধ ঝাঁকিয়ে বললেন মাদাম কোরানজি। জারার ডান হাতটা নিজের হাতে তুলে নিলেন। কড়ে আঙুলের মাথা বোলালেন হাতের রেখায়।
‘হি হি! সুড়সুড়ি লাগছে তো!’ হেসে ফেলল জারা।
‘আমি দেখতে পাচ্ছি এমন জিনিস হারিয়েছ তোমরা, যা খুব মূল্যবান,’ মাদাম কোরানজি বললেন।
‘ওগুলো কোথায় আছে, সেটা দেখতে পাচ্ছেন?’ জারা জিজ্ঞেস করল।
মাদাম কোরানজির চোখে মিটিমিটি হাসি। চেয়ারে ঝুঁকে বসলেন। ‘আমি শুধু বলতে পারি, সূত্র খোঁজার ব্যাপারে সতর্ক হবে। মাথা ঠান্ডা আর চোখ খোলা রেখে জায়গামতো খুঁজতে পারলে সূত্র পেয়ে যাবে।’
চোখ কোঁচকাল জারা। ‘এটা কি গণনা, না ধাঁধা?’
‘ধাঁধাও বলতে পারো,’ মাদাম বললেন। ‘সমাধান করতে পারলে তোমার জিনিস তুমি পেয়ে যাবে।’
‘সেটা তো আমিও জানি!’ মনে মনে বলল জারা। হতাশ মনে হলো তাকে। মুখে বলল, ‘থ্যাংকস!’
তাঁবু থেকে বেরোনোর পথে ফিসফিস করে বলল সারা। ‘গণক না কচু। চলো, কুকি খাই। মন ভালো হয়ে যাবে।’
র্যাম্বলিং রোজির কাছে নিঃশব্দে হেঁটে এল মেয়েরা। একটা বেঞ্চের কাছে দাঁড়াল।
‘আমাদের পাসগুলো আর খুঁজে পাব না,’ সবাই বেঞ্চে বসলে বলল লরা।
নিজের হাতের মুঠো খুলে হাতের তালুর দিকে তাকিয়ে রইল জারা। ‘মাদাম কোরানজি বলেছেন, ‘জায়গামতো খুঁজতে পারলে সূত্র পেয়ে যাবে’। এই জায়গামতো জায়গাটা কোথায়?’
‘কারও পকেটে,’ লরা জবাব দিল। ‘সমাধান করার জন্য আরেকটা রহস্য পেয়ে গেলে, জারা—নাম দিতে পারো, ‘হারানো পাসের রহস্য?’
‘কিন্তু কম করেও হাজারখানেক লোক রয়েছে এই মেলায়,’ সারা বলল। ‘জারা খুব ভালো গোয়েন্দা, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু এত লোকের মাঝে কার পকেটে খুঁজবে?’
‘এ রহস্যের সমাধান তুমি করতে পারবে না, জারা। এ হলো খড়ের মধ্যে সুচ খোঁজা,’ ক্যারি বলল।
বেঞ্চ থেকে লাফিয়ে উঠে দাঁড়াল লরা। কোমরে দুই হাত রেখে দাঁড়াল। ‘আর যদি পারে?’
‘পারলে তো ভালো কথা, পাসগুলো পেয়ে গেল। যদি না পারে তাহলে কী হবে?’ ভুরু নাচাল ক্যারি।
‘যেকোনো জটিল রহস্যের সমাধান করতে পারে জারা। এটাও পারবে,’ লরা জবাব দিল।
‘তা তো আমিও জানি,’ ক্যারি বলল। ‘আমি বলছি, যদি না পারে?’
‘না পারলে? বেশ তুমিই বলো কী করতে হবে?’
আঙুল তুলে র্যাম্বলিং রোজিকে দেখাল ক্যারি, ‘না পারলে ওই রাইডে চড়তে হবে ওকে। একবারে হবে না, তিনবার ঘুরবে।’
জারা কিছু বলার আগেই তার হয়ে বলে দিল লরা, ‘যাও, ঘুরবে, কথা দিলাম!’
চার.
‘লরা!’ চেঁচিয়ে উঠল জারা। ‘এটা কী করলে? তুমি জানো, র্যাম্বলিং রোজিকে আমি দুচোখে দেখতে পারি না। আমাকে জিজ্ঞেস না করেই কথা দিয়ে ফেললে?’
‘দিলাম,’ নির্বিকার কণ্ঠে বলল লরা। ‘কারণ আমি জানি, ওই রাইডে চড়তে হবে না তোমাকে। রহস্যটার সমাধান তুমি করেই ফেলবে।’
‘না পারলে র্যাম্বলিং রোজিতে চড়বে, কথা দিচ্ছ তো?’ ক্যারি বলল। ‘সবাই মিলে চড়ব, অসুবিধেটা কোথায়? মজাই তো হবে।’
ভুরু কুঁচকে ক্যারির দিকে তাকাল সারা। ‘পাসগুলো তুমিই সরাওনি তো, ক্যারি?’
ক্যারিও ভুরু কুঁচকে তাকাল। ‘কেন, আমি সরাব কেন?’
‘জারাকে র্যাম্বলিং রোজিতে চড়তে বাধ্য করার জন্য?’ সারা জবাব দিল।
হাসল ক্যারি। ‘সরাতেও পারি। জারা তো বড় গোয়েন্দা, পারলে বের করুক।’
‘বেশ,’ জোরে নিশ্বাস ফেলে বলল জারা। ‘চড়ব, যদি পাসগুলো খুঁজে বের করতে না পারি।’
‘তুমি পারবে, জারা,’ লরা বলল। ‘তোমার নীল নোটবুকটা সঙ্গে আছে?’
মাথা নাড়ল জারা। ‘নাহ্! আমার ঘরে। বাড়ি না গেলে আর পাব না।’
‘আমাদের সাহায্য লাগবে? তোমার সঙ্গে তোমাদের বাড়ি যাব?’ ক্যারি জিজ্ঞেস করল। ‘অবশ্য যদি তুমি যেতে বলো, তবেই যাব।’
‘নিশ্চয়ই,’ জারা বলল। ‘সবাই মিলে সহযোগিতা করলে পাসগুলো খুঁজে বের করতে সুবিধে হবে আমার।’
‘দুশ্চিন্তা কোরো না জারা, পাসগুলো তুমি খুঁজে পাবেই,’ লরা বলল। ‘তবে তার আগে চলো, আরও কিছু রাইডে চড়ি। বলা যায় না, হয়তো এখানে এটাই আমাদের শেষ দিন।’
‘পাসগুলো যদি খুঁজেই পায়, এতই বিশ্বাস তোমার, তাহলে আর শেষ দিন বলছ কেন?’ প্রশ্ন ছুড়ে দিল ক্যারি।
‘ভুলে মুখ দিয়ে বেরিয়ে গেছে,’ বিব্রত ভঙ্গিতে জবাব দিল লরা।
মুচকি হাসল ক্যারি। হাসিটা কেমন রহস্যময় লাগল লরার কাছে।
আর একটামাত্র রাইডে চড়ল মেয়েরা। তারপর রিং ছোড়াছুড়ি খেলল। রিং-খেলায় জিতে একটা পুতুল বিড়াল পুরস্কার পেল সারা।
খেলা শেষে দল বেঁধে মিসেস অ্যানসনের সঙ্গে দেখা করতে চলল মেয়েরা। যাওয়ার পথে কোকোমাংককে একটা বাচ্চা ছেলের সঙ্গে খেলতে দেখল।
গাড়িতে করে মেয়েদের বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার সময় মিসেস অ্যানসনকে পাস হারানোর কথা জানাল ক্যারি। জারা কিছু বলল না। চুপ করে আছে। তার মন জুড়ে রয়েছে পাসগুলোর কথা। ভাবছে, কী করে হারাল? বাড়ি ফিরে তার নোটবুক খুলে বসার জন্য তর সইছে না। ওটা হাতে পেলে তদন্তের কাজ শুরু করবে।
জারাদের বাড়ি পৌঁছে সারা আর লরা আগে যার যার বাড়িতে ফোন করল। মাকে জানাল, ফিরতে আরও কিছুক্ষণ দেরি হবে। থাকার অনুমতি মিলল। সিঁড়ি বেয়ে দৌড়ে উঠে এল ওপরতলায়, জারার ঘরে।
জারার বিছানার পাশে মেঝেতে পাতা মোটা গালিচায় বসল সবাই।
‘দারুণ না?’ বিড়ালটা দেখিয়ে জিজ্ঞেস করল সারা। পুতুলটার লম্বা লম্বা গোলাপি লোমে আদর করে হাত বোলাল। বলল, ‘আমি ওকে সুইট টিটি বলে ডাকব।’
‘আসলে পুতুল না নিয়ে বলটা নেওয়া উচিত ছিল তোমার,’ লরা বলল। ‘ওটা অনেক সুন্দর। সবাই মিলে খেলতে পারতাম। পুতুল খেলার বয়স নেই আর এখন আমাদের।’
‘আমার ঘরে কেবিনেটের ওপর সাজিয়ে রাখব,’ জবাব দিল লরা।
দুজনের দিকে তাকিয়ে রইল ক্যারি। ‘মাঝে মাঝে আমার মনে হয়, তোমরা বোন না। দুজনের এত অমিল।’
‘আপন বোনে বোনে অমিল হয়,’ সারা বলল। ‘আর আমরা তো খালাতো বোন।’
চুপ হয়ে গেল ক্যারি।
টেবিলের ড্রয়ার থেকে একটা নোটবুক বের করল জারা। কভারটা নীল রঙের। খুব সুন্দর। জন্মদিনে ওকে উপহার দিয়েছিলেন বাবা।
নোটবুক খুলল জারা। একটা সাদা পাতা বেছে নিল। তাতে গোটা গোটা অক্ষরে লিখল পাস হারানোর রহস্য। এর নিচে লিখল সন্দেহভাজনদের নাম।
‘কার নাম আগে?’ ক্যারি জিজ্ঞেস করল। জারার কাঁধের ওপর দিয়ে তাকিয়ে আছে।
‘মনিকা জোয়ান,’ জারা জবাব দিল।
খাতায় মনিকার নাম লিখল সে। বলল, ‘আমার ধারণা, ওকে বাদ দিয়ে আমাদের ফ্রি পাস দেওয়ায় ক্যারির ওপর মেজাজ খারাপ হয়ে গিয়েছিল তার।’
‘তোমার পকেটে আছে পাসগুলো, সেটাও জেনে গিয়েছিল সে,’ সারা বলল।
‘তারপর দৌড়ে চলে গিয়েছিল, নাগরদোলাটা চালু হওয়ার সময়,’ জারা বলল। সব কথা নোটবুকে লিখে নিল সে।
‘সেই কিন্ডারগার্টেন থেকে মনিকাকে চিনি আমি,’ ক্যারি বলল। ‘যদিও ঝগড়া একটা হয়েছে, তবু সে এখনো আমার বন্ধু। তা ছাড়া কখনো কারও জিনিস চুরি করেনি সে।’
‘আমার বাবা বলে, মাঝে মাঝে ঘনিষ্ঠ বন্ধুরাও ভুল করে ফেলে,’ ক্যারিকে বলল জারা।
সবাই জানে, জারার বাবা মি. আজিজ একজন আইনজীবী। রহস্য সমাধানে বুদ্ধি বাতলে দিয়ে প্রায়ই জারাকে সহায়তা করেন।
এক মুহূর্ত ভাবল জারা। ‘এরপর আমার সন্দেহ, টনি হোয়াংয়ের ওপর।’
‘টনি যেন কেমন করে তাকায়, অদ্ভুত দৃষ্টি তার,’ মন্তব্য করল ক্যারি।
‘ম্যাজিক দিয়ে পকেট থেকে যদি টারান্টুলা মাকড়সা বের করতে পারে,’ জারা বলল, ‘পাসগুলোও গায়েব করে দেওয়া তার পক্ষে অসম্ভব নয়।’
‘কিংবা তোমার পকেট থেকে নিয়ে নিজের পকেটে ঢুকিয়ে ফেলা,’ লরা বলল।
সন্দেহের তালিকায় টনি হোয়াংয়ের নাম লিখল জারা।
‘মেলার দোকান থেকে আমার কিছু ট্যাফি কেনা উচিত ছিল,’ লরা বলল। ‘কিন্তু তোমারগুলো যে গায়েব হয়ে যাবে কে জানত!’
‘আমার পকেটে পুরো এক ব্যাগ ট্যাফি ছিল,’ বিষণ্ন কণ্ঠে জারা বলল। ‘সবাই মিলে খেতে পারতাম।’
‘ফ্রি পাসগুলো যে চুরি করেছে,’ ক্যারি বলল, ‘ব্যাগটাও সে-ই চুরি করেছে। হয়তো ট্যাফি তার পছন্দ।’
মাথা সোজা করল জারা। ‘কোকোমাংক!’
‘আমারও চকলেট পছন্দ,’ ক্যারি বলল।
‘তোমাকে সন্দেহ করছি না আমি, ক্যারি,’ জারা বলল। ‘আমি বলছি, কোকোমাংকের কাজ হতে পারে। তার ট্রেইনার বলেছেন শিম্পাঞ্জিটা ট্যাফি পছন্দ করে। হয়তো ব্যাগের সঙ্গে পাসগুলোও নিয়ে গেছে।’
‘মেলার পাস দিয়ে শিম্পাঞ্জি কী করবে?’ সারার প্রশ্ন।
‘ট্যাফির জন্য আমার পকেটে হাত দিয়েছিল কোকোমাংক,’ জারা বলল। ‘ব্যাগটা বের করার সময় টান লেগে পাসগুলোও বেরিয়ে এসেছিল হয়তো।’
‘তারপর পাসগুলো কোথায় রাখল?’ ক্যারি জিজ্ঞেস করল।
দুই আঙুলে চুটকি বাজাল জারা। ‘মস্ত পকেটওয়ালা ওভারঅল পরানো হয়েছিল কোকোমাংককে।’
নাক কুঁচকাল লরা। ‘গায়ে যেমন দুর্গন্ধ, স্বভাবেও তেমনি বদ। শিম্পাঞ্জিটা আসলেই একটা শয়তান, আগেই বুঝেছিলাম।’
‘একটা কথা ভুল বললে, ওর গায়ে দুর্গন্ধ নেই,’ জারা বলল। ‘তবে তাকে সন্দেহভাজনদের তালিকায় ফেলা যেতে পারে। টনি আর মনিকার মতো।’
‘লোমে ভর্তি সন্দেহভাজন,’ হাসল সারা।
বিছানার কিনারে পিঠ লাগিয়ে ঠেস দিয়ে বসল জারা। বলল, ‘ভাবছি, কাল আবার মেলায় যাব। কিছু তদন্ত করতে হবে।’
‘পাস ছাড়া মেলায় ঢুকব কীভাবে?’ সারা জিজ্ঞেস করল।
‘আমার জন্মদিনের পুরস্কার হিসেবে আমাকে টিকিটের টাকা দিতে চেয়েছিলেন কোরি আন্টি,’ জবাব দিল জারা। ‘আমি তখন নিইনি। এখন আমার দরকার। এখন নেব।’
কোরি আন্টি, অর্থাৎ মিসেস কোরিন ডুয়েল জারাদের হাউসকিপার। জারাকে খুব ভালোবাসেন।
‘আর আমরা দুজন?’ লরার প্রশ্ন।
‘আমি বললে তোমাদের টিকিটের টাকাও দেবে,’ জারা বলল।
‘আর আমার পাসটা তো আছেই,’ ক্যারি বলল। ‘কাজেই আমার ঢুকতে কোনো বাধা নেই।’
উল্লাসে চেঁচিয়ে উঠল সবাই। হাতে হাত মেলাল।
ঘড়ি দেখল সারা। ‘বাড়ি যাওয়া দরকার,’ বলল সে। ‘ডিনারের সময় প্রায় হয়ে গেছে, আর দেরি করলে মা বকবে।’
গেটের কাছ পর্যন্ত বন্ধুদের এগিয়ে দিয়ে এল জারা।
হঠাৎ দুটো ছেলের চিৎকার শুনতে পেল।
‘সরো! সরো!’ একজন বলল।
টিঁট টিঁট করে উঠল আরেকজন। গাড়ির হর্নের মতো।
স্থির হয়ে গেল জারা।
রোলার স্কেট পরা ছেলে দুটো দ্রুত ছুটে আসছে ফুটপাত ধরে।
লাফ দিয়ে একটা গাছের আড়ালে সরে গেল লরা আর সারা।
রাস্তার সামনের একটা বাঁকের দিকে দৌড় দিল জারা ও ক্যারি।
‘দেখে চলতে পারো না!’ ধমকে উঠল সারা।
ততক্ষণে কড়া ব্রেক কষে চাকার তীক্ষ শব্দ তুলে থেমে গেছে ছেলে দুটো।
ছেলে দুটো টনি হোয়াংয়ের ভাই, কর্নি আর বার্নি হোয়াং। যমজ। বয়স ছয়।
জারার বুকে লাগানো পিনটার দিকে আঙুল তুলল বার্নি। ‘কোকোমাংক পাল হয়েছিলে তুমি?’
মাথা ঝাঁকাল জারা। ছেলেদের জিজ্ঞেস করল, ‘শিম্পাঞ্জিটার মুখোমুখি হয়েছ কখনো?’
‘না,’ কর্নি বলল। ‘তবে কাল কোকোমাংকের সঙ্গে আমাদেরও দেখা হবে।’
‘টনি আমাদের মেলায় নিয়ে যাবে,’ বলল বার্নি।
‘তার মানে কালও যাচ্ছে সে?’ তীক্ষ দৃষ্টিতে তাকাল জারা।
‘হ্যাঁ, যাচ্ছে,’ কুটিল হাসি হাসল কর্নি। ‘কেন, ওকে ভয় পাও নাকি? মস্ত জাদুকর হয়ে যাওয়াতে?’
হাত ঘুরিয়ে ম্যাজিশিয়ানের ভঙ্গি করল বার্নি। জারার দিকে হাতটা তুলে তালুতে ‘ছুহ’ করে ফুঁ দিয়ে যেন উড়িয়ে দিল ওকে।
হাসতে লাগল দুই ভাই।
‘টনি এত টাকা পেলে কোথায়?’ জিজ্ঞেস করল লরা। ‘তিনজনকে নিয়ে যাওয়ার?’
‘ঢুকতে টাকা লাগবে না আমাদের,’ জবাব দিল বার্নি। ‘তিনটে ফ্রি পাস পেয়েছে সে।’
‘কোথায় পেয়েছে, বলেছে তোমাদের?’ জানতে চাইল সারা।
‘ম্যাজিক!’ জবাব দিল কর্নি।
চলে গেল দুই যমজ।
অন্যমনস্ক ভঙ্গিতে বিড়বিড় করল জারা, ‘তিনটে ফ্রি পাস!’
‘তোমার পকেট থেকে চুরি করেছে, বলেছিলাম না?’ লরা বলল।
জবাব দিল না জারা।