অদ্রির অভিযান (প্রথম পর্ব)

অলংকরণ: সব্যসাচী চাকমা

অদ্রি ভীষণভাবে ঘামছে। কেউ দেখলে ভাববে, বিজ্ঞানী আর্কিমিডিসের মতো কোনো পুষ্করিণীতে গা এলিয়ে বসে ছিল সে। তারপর ইউরেকা টাইপের কিছু আবিষ্কার করে জবজবে ভেজা অবস্থায় দিয়েছে দৌড়। আর তাকে তাড়া করেছে বনমানুষ অর্থাৎ ‘ফরেস্ট হোমো স্যাপিয়েন্স’! মানুষের বৈজ্ঞানিক নাম ‘হোমো স্যাপিয়েন্স’ হলে বনমানুষের নাম ‘ফরেস্ট হোমো স্যাপিয়েন্স’ হতে সমস্যা থাকার কথা নয়। এই বনমানুষ অদ্রিকে শুধু বনের মাঝেই অনুসরণ করছে না, ছায়ার মতো সবখানেই তাকে অনুসরণ করে। তাই ছেলেটির এমন নাম দিয়েছে অদ্রি।

বিজ্ঞানের প্রতি অতি আগ্রহী, বিজ্ঞানী-বিজ্ঞানী ভাব ধরা এই ছেলেকে অন্য নামও দেওয়া যেতে পারত। কিন্তু যেহেতু সে স্কুলে অদ্রি ছাড়া আর কারও সঙ্গে তেমন কথা বলে না, অর্থাৎ সামাজিক না, তাই তাকে মানুষ না বলে বনমানুষ বলাই শ্রেয় মনে করেছে অদ্রি। অবশ্য এই নামকরণে খুশিই হয়েছিল ছেলেটি এবং বলেছিল, ‘বনমানুষ না বলে বনমানুষের বৈজ্ঞানিক নামে ডাকলে আনন্দিত হব।’ এরপর থেকেই অদ্রি ছেলেটিকে মাঝেমাঝে ‘ফরেস্ট হোমো স্যাপিয়েন্স’ বলে ডাকে।

বনমানুষের বৈজ্ঞানিক নাম অদ্রির জানা নেই, তা নয়; বরং অতিপ্রাকৃত ক্ষমতার কারণে অদ্রির জানার জগৎ অতি বিশাল! বিস্ময় বালিকা অদ্রির জানাশোনার ক্ষেত্র অনেক বড়। তার জানা আছে যে বনমানুষের আবাস দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়। পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম দ্বীপ বোর্নিওতে যে বনমানুষ বাস করে, তার বৈজ্ঞানিক নাম ‘পঙ্গ পিগমিয়াস’। অন্যদিকে, সুমাত্রা দ্বীপে যে বনমানুষ বাস করে, তার বৈজ্ঞানিক নাম ‘পঙ্গ অ্যাবেলি’।

এতসব বৈজ্ঞানিক নাম জানা থাকলেও অদ্রি ছেলেটিকে ডাকে ‘ফরেস্ট হোমো স্যাপিয়েন্স’ বলে। তবে সব সময় না; কখনোসখনো। মজার ব্যাপার হলো, ছেলেটির আসল নাম ‘অদ্রিক’—দুজনের নামে কী অদ্ভুত মিল! অদ্রিক যেমন অদ্রিকে অনুসরণ করে, তেমনি তাদের বাবা-মায়েরা ছেলেমেয়ের নামকরণের ক্ষেত্রে যেন পরস্পরকে অনুসরণ করেছেন! অবশ্য, অদ্রির বাবা বেঁচে নেই। বাবার কথা মনে পড়লেই অদ্রির কষ্ট হয়। বাবার কারণেই গাছপালা-বনবাদাড় নিয়ে অদ্রির জীবনে একটি অতিপ্রাকৃত বিষয় আছে!

স্কুলে অদ্রিক অদ্রি-কে এতটাই অনুসরণ করে যে ক্লাস সিক্স থেকে যৌথভাবে প্রথম হয়ে তারা ক্লাস সেভেনে উঠেছে! তাদের বিদ্যালয়ের ইতিহাসে আগে এমন ঘটেছে বলে জানা নেই। ‘আজি হতে শতবর্ষ পরে’ যখন ছাত্রছাত্রীরা এই বিদ্যালয়ের ইতিহাস জানার আগ্রহ দেখাবে, তখন দেখা যাবে এক মানুষ আর এক বনমানুষ যৌথভাবে প্রথম হয়েছে—এসব ভেবে অদ্রির কিঞ্চিৎ বিরক্ত লাগে।

বনের ভেতর মনের আনন্দে হেঁটে বেড়াচ্ছিল অদ্রি। হঠাৎ খেয়াল করল, অদ্রিক তাকে অনুসরণ করছে। এতে অদ্রি ভীষণ বিরক্ত হলো। বনের মধ্যে ক্লাসের বনভোজন নেই যে স্কুলের বাইরেও তাকে এভাবে অনুসরণ করতে হবে! তা ছাড়া অদ্রিক অনুসরণ করছে অদ্ভুত উপায়ে—পেছনে থেকে না; পাশাপাশি থেকে।

অদ্রি আতঙ্কে ঘামছে! তবে পাশাপাশি থেকে অনুসরণ করা অদ্রিকের ভয়ে না; তাদের পিছু নেওয়া বিকট–দর্শন এক ব্যক্তির ভয়ে। লোকটি উচ্চতায় অদ্রিদের দ্বিগুণ, মুখ দাড়িগোঁফে একাকার, দেখতে টিনটিন কমিক সিরিজের ক্যাপ্টেন হ্যাডকের মতো; শুধু মাথায় টুপি আর মুখে পাইপ নেই। তার হাতে বিচিত্র প্রকৃতির অস্ত্র। অস্ত্র হাতে লোকটি দৌড়ে অদ্রিকে ধরার চেষ্টা করছে।

অদ্রি হাঁপিয়ে উঠেছে। কমে আসছে তার দৌড়ের গতি। ক্রমশ কাছাকাছি চলে আসছে অস্ত্রধারী। পাশ থেকে তার দিকে মায়াকাড়া অসহায় চোখে তাকাল অদ্রিক। খানিক বাদেই, অদ্রির চুলের ঝুঁটি টেনে ধরল বদলোকটি আর চেঁচিয়ে বলতে থাকল, ‘অহংকার কোরো না অদ্রি। অহংকার পতনের মূল। অহংকার পতনের মূল। অহংকার পতনের মূল।’

কথাগুলো বলতে বলতে সেই আগন্তুক বিচিত্র অস্ত্রের নল অদ্রির মাথায় এঁটে ধরল। প্রাণভয়ে অদ্রি চিৎকার করে উঠল, ‘অদ্রিক, বাঁচাও! অদ্রিক, বাঁচাও!’ ঘুম থেকে লাফিয়ে উঠল অদ্রি—কী ভয়াবহ দুঃস্বপ্ন!

ভয়াবহ দুঃস্বপ্ন কেটে গেলেও এরপর যা ঘটল, তা কম ভয়াবহ না। মেয়ের চিৎকার শুনে অদ্রির মা অর্থাৎ মিলি রান্নাঘর থেকে দৌড়ে এলেন। এসেই শুরু করলেন ভয় নির্বাপণ কর্মকাণ্ড। গায়ে-মাথায় চাপড় মেরে অদ্রিকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করলেন তিনি। অদ্রির কাছে স্বপ্নের বিকট–দর্শন ব্যক্তির আক্রমণের চেয়ে মায়ের এই আক্রমণ বেশি অস্বাভাবিক মনে হলো। ভয় দূর করার থেরাপি শেষে মিলি আবার রান্নাঘরের দিকে ছুটলেন। কিন্তু ততক্ষণে নাশতার জন্য তাওয়ায় বসানো ডিম পুড়ে গন্ধ ছুটিয়ে দিয়েছে।

অদ্রি তার ছোট্ট রুমটির জানালা দিয়ে বাইরে তাকাল। বাগানের সব ফুল ও ফল গাছকে আজ বেশ তরতাজা দেখাচ্ছে। মিলি বাগানের গাছপালার দিকে তাকালেই বুঝতে পারেন, তার মেয়ের মন ভালো আছে কি নেই! অদ্রির মন ভালো-খারাপের সঙ্গে গাছপালার সতেজতার কারণ—তার অতিপ্রাকৃত ক্ষমতা! স্বপ্নে বদমাশ লোকটি অদ্রিকে অহংকারী বললেও নিজের অতিপ্রাকৃত ক্ষমতা নিয়ে অদ্রি মোটেও অহংকার করে না। তবে কখনো কাউকে যদি অদ্রি জানায় যে গাছপালার কথা সে বুঝতে পারে, তাহলে তখন ওই ব্যক্তি তাকে অহংকারী ভেবে বসে।

সুপারন্যাচারাল ক্ষমতার কারণেই অদ্রি জানতে পেরেছে, পৃথিবী মহাবিপদে পড়তে চলেছে! এই ভয়ংকর তথ্যটি জানার পর থেকেই বিস্ময়বালিকা নানা রকম দুঃস্বপ্ন দেখছে। অদ্রি ঠিক বুঝতে পারছে না, কী উপায়ে মহাবিপদের কথা পৃথিবীর মানুষকে বিশ্বাস করানো যায়। একে তো মেয়েটির সঙ্গে বেশি মানুষের পরিচয় নেই, তার ওপর গাছপালার কাছ থেকে এই বিপদের কথা জেনেছে, শুনলে মানুষ পাত্তা দেবে না; বরং তাকে অহংকারী ভেবে বসবে।

অদ্রিদের বাসায় একটি সোফারুম এবং দুটো বেডরুম। এক রুমে থাকেন অদ্রির মা। অসম্ভব ভালো মনের মানুষ মিলি। অদ্রি ছাড়া এই পৃথিবীতে তার আপনজন নেই। মিলির সঙ্গে যার বিয়ে হয়েছিল, তিনি অদ্রির জন্মের কয়েক দিন পরই তাদের ছেড়ে চলে গেছেন। অবশ্য লোকটি অদ্রির বাবা ছিলেন না; অদ্রির বাবা ছিলেন অন্য একজন—তুখোড় এক বিজ্ঞানী। মিলি তার নাম দিয়েছিলেন ‘তরু-নৃ’। তরু অর্থ গাছ এবং নৃ অর্থ মানুষ। গাছপালা নিয়ে গবেষণা ছিল অদ্রির বাবার প্রাণের খোরাক। এ বিষয়ে মিলি তার মেয়েকে কখনো কিছু না বললেও অদ্রি সবই জেনেছে গাছপালার মাধ্যমে!

গাছপালা নিয়ে গবেষণার একপর্যায়ে অদ্রির বাবা তরু-নৃর মস্তিষ্কের নিউরাল নেটওয়ার্ক গাছদের ট্রি-নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়! এর ফলে তরু-নৃ দেশ-বিদেশের বিভিন্ন গাছের কথামালা; এমনকি পৃথিবীর বাইরে থাকা ভিনগ্রহী গাছদের আলাপচারিতা শোনা শুরু করেন! জানতে থাকেন প্রকৃতির অনেক গূঢ় রহস্য, অতীত-বর্তমান ও ভবিষ্যতের নানা গোপন তথ্য। নিজের আবিষ্কৃত একটি দ্রবণ পরীক্ষার জন্য পান করার পর তরু-নৃর জীবনে ঘটতে থাকে এসব ঘটনা। উদ্ভিদের জিনোম সিকোয়েন্স প্রোথিত হতে শুরু করে তাঁর কোষে, ফলে শরীরের কোষগুলো উদ্ভিদ কোষে পরিণত হওয়ার প্রক্রিয়া সচল হয়, সম্পূর্ণ দেহ রূপান্তরিত হতে থাকে উদ্ভিদে!

জিনোম সিকোয়েন্স তারতম্যের কারণেই প্রতিটি জীব আলাদা। শব্দের উৎসের কম্পাঙ্ক ২০ হাজার হার্জের বেশি হলে মানুষ শুনতে পায় না; অথচ কোনো কোনো প্রাণী এমন উঁচু কম্পাঙ্কের শব্দ শুনতে পায়। অন্যদিকে কোনো জীবের রয়েছে প্রখর ঘ্রাণক্ষমতা; আবার কোনো জীবের আছে প্রখর দৃষ্টিশক্তি। তেমনি, গাছের রয়েছে অভাবনীয় এক ক্ষমতা—সব সময় ট্রি-নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত থাকার ক্ষমতা! শরীরের কোষগুলো উদ্ভিদকোষে রূপান্তরের প্রক্রিয়াকালীন তরু-নৃর মস্তিষ্ক যুক্ত হয়ে যায় ট্রি-নেটওয়ার্কের সঙ্গে। তারপর আর অল্প কদিন তিনি বেঁচে ছিলেন।

মিলি নিজের মুখে অদ্রিকে কখনো তরু-নৃর কথা বলেননি কিন্তু অদ্রি সবই জেনে গেছে। এমনকি অদ্রি এও জানে যে তার বাবার কবর সন্দ্বীপের শিবেরহাট নামের একটি এলাকায়। জন্মগতভাবে অলৌকিক এক ক্ষমতার অধিকারী অদ্রি। মেয়ের অতিপ্রাকৃত ক্ষমতা সম্পর্কে খুব ভালো করেই জানেন মিলি। অদ্রি যতবারই এই অলৌকিক ক্ষমতার ব্যাপারে মায়ের সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছে, তিনি আগ্রহ দেখাননি। মিলি এটিও বোঝেন যে গাছপালার মাধ্যমে অদ্রি তার বাবার জীবনবৃত্তান্ত জেনে ফেলেছে; তারপরও নিজ থেকে কখনো কিছু বলেন না। হয়তো মিলি ভয় পান—এই অলৌকিক ক্ষমতার কারণে একসময় প্রিয় সঙ্গীকে হারিয়েছেন, সেই ক্ষমতার জন্য যদি প্রাণপ্রিয় মেয়েটিকেও হারিয়ে ফেলেন!

অদ্রির মাথার ভেতরে একধরনের তরঙ্গ খেলা করে। জীবনের সূচনালগ্ন থেকে এই গুঞ্জনের সঙ্গে পরিচিত বলে অদ্রির কাছে বিষয়টি স্বাভাবিক মনে হয়। বোধশক্তি হওয়ার পর গাছদের মাধ্যমেই অদ্রি জানতে পেরেছে, ট্রি-নেটওয়ার্কের সঙ্গে তার মস্তিষ্ক যুক্ত। উদ্ভিদকুল চলাচল করতে না পারলেও টেলিপ্যাথিক উপায়ে ট্রি-নেটওয়ার্কে তথ্য আদান–প্রদানের মাধ্যমে নিজেদের প্রতিনিয়ত আপডেটেড রাখছে। এ কারণে পৃথিবীর কোথায় কী ঘটছে, এমনকি পৃথিবীর বাইরে কী ঘটছে, তা জানতে পারে এই বিস্ময়বালিকা।

একবার অদ্রির খুব জ্বর হলো কিন্তু পরীক্ষায় ঠিকই সে প্রথম স্থান অর্জন করল। ফলাফল প্রকাশের পর যাকেই জানাল যে গাছের সহযোগিতায় প্রথম হয়েছে, সে-ই হাসাহাসি করল। ব্যাপারটি কেউই বিশ্বাস করল না; শুধু অদ্রির মা ছাড়া।

অদ্রির জন্মের সময় থেকে তার দিকে খেয়াল রেখেছে গাছপালা। উদাহরণস্বরূপ, একটি ঘটনা বলা যেতে পারে। এই বাসায় অদ্রির রুমের সামনের বাগানটি ছিল মনমরা। যেদিন থেকে এই রুমে অদ্রি থাকতে শুরু করেছে, সেদিন থেকেই বাগানের পাতাগুলো সতেজ হয়ে উঠেছে, ফল হচ্ছে, ফুল ফুটছে। এমনকি ঘরটির জানালা দিয়ে যেন সূর্যের আলো ঠিকমতো ঢোকে, সে জন্য জানালার সামনের আমগাছটির মাঝবরাবর একটি শূন্যস্থান তৈরি হয়েছে!

বছরখানেক আগে পাশের বাসার ভদ্রমহিলা এলেন অদ্রিদের বাসায়। মিলিকে জানালেন যে বিল্ডিংয়ের সবাই চাঁদা তুলে আমগাছটি কেটে ফেলা দরকার। মাঝবরাবর ফাঁকা হয়ে গাছের ডালগুলো দুপাশে যেভাবে ঝুলে পড়েছে, তা দেখে তার মনে হয়েছে যেকোনো সময় গাছ দুই ভাগ হয়ে দুই দিকে ধড়াশ করে পড়বে। প্রতিবেশীকে ক্ষান্ত করার জন্য মিলি শেষমেশ জানাতে বাধ্য হলেন, এই শূন্যস্থান সৃষ্টির প্রকৃত কারণ। শুনে ভদ্রমহিলা বললেন, ‘কী বলেন, ভাবি! গাছ আপনার মেয়ের খেয়াল রাখবে কেন? আমার মাথা ঝিমঝিম করছে। এক গ্লাস পানি হবে?’

এরপর যতবারই প্রতিবেশী আন্টির সঙ্গে অদ্রির দেখা হয়েছে, তিনি এমনভাবে ভীতচোখে তাকিয়েছেন এবং অদ্রিকে পাশ কাটিয়ে গেছেন; যেন অদ্রির মাথায় ছিট আছে! মিলি ভদ্রমহিলাকে কী বলেছেন এবং সেই আন্টি অদ্রি সম্পর্কে অন্যদের কাছে কী কী কথা বলেছেন, সবই গাছের মাধ্যমে অদ্রি জেনে গেছে! যে বাসাতেই গাছ আছে, সেখানেই আছে ট্রি-নেটওয়ার্কের সক্রিয় সদস্য। তারা তথ্য পাঠিয়ে দেয় গাছদের সেই নেটওয়ার্কে। সেসব তথ্য জানিয়ে আন্টিকে চমকে দিতে পারে অদ্রি; তবে সে তা করবে না। কারণ, অদ্রি মনে করে—মানুষকে চমকানো আর ধমকানো সমান অপরাধ।

ট্রি-নেটওয়ার্কে সব সময়ই তথ্য আদান–প্রদান হচ্ছে। নদীতে যেমন জলতরঙ্গ অবিরত বয়ে চলে, তেমনি অদ্রির মস্তিষ্কের ভেতর শব্দতরঙ্গ প্রতিনিয়ত খেলা করছে। নদীর পানি যেমন কলকল ধ্বনিতে প্রবাহিত হতে থাকে; তেমনি অদ্রির মাথার ভেতর এক শব্দনদী প্রবহমান। এ অবস্থার সঙ্গে অদ্রি এতটাই অভ্যস্ত যে হঠাৎ মাথার ভেতর থেকে শব্দজগৎ উধাও হলে হয়তো সে অস্থির হয়ে উঠবে! তবে শব্দভুবনে মনোযোগ দেওয়ার বিষয়টি অদ্রির ইচ্ছাধীন। অদ্রি চাইলে শব্দতরঙ্গে মনোযোগ দিতে পারে, আবার না চাইলে নিজের কাজে মন দিতে পারে।

ট্রি-নেটওয়ার্কে মনোযোগ দিলে অদ্রির কাছে শব্দমালা ধীরে ধীরে স্পষ্ট হতে শুরু করে। যে শব্দমালায় অদ্রি মনোযোগ দিতে চায়, একসময়ে শুধু সেটিই শুনতে পায়। মানসিক প্রক্রিয়াটি অনেকটা কম্পিউটার বা ক্যামেরার ‘জুম’ ফিচারের মতো। মনোযোগ জুমিংয়ের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় তরঙ্গ শুনতে পায় অদ্রি। আবার বিশেষ কিছু জানার প্রয়োজন হলে টেলিপ্যাথির মাধ্যমে গাছের সঙ্গে যোগাযোগ করে। অন্যদিকে গাছদের কিছু জানানোর থাকলে তারা অদ্রির সঙ্গে যোগাযোগ করে। অদ্রির ঘরের সামনের আমগাছই প্রথম তাকে পৃথিবীর মহাবিপদের দুঃসংবাদটি জানিয়েছে।

পৃথিবীবাসীকে মহাবিপদের খবরটি জানানো প্রয়োজন। কিন্তু অদ্রির জানা নেই, কীভাবে তা জানাবে। অদ্রির নানা রায়হান চৌধুরী বেঁচে থাকলে ব্যাপারটি সহজ হতো। তিনি দেশের খ্যাতিমান লেখক ছিলেন। মারা গেছেন দুই বছর আগে। রায়হান চৌধুরী যখন জীবিত ছিলেন, অদ্রিদের ছোট বাসাতেই বড় বড় মানুষ দেখা করতে আসতেন। তাদের মাধ্যমে মহাবিপদের সংবাদটি খুব দ্রুত সবার কাছে পৌঁছানো যেত। দুঃসংবাদটি সময়মতো জানাতে না পারলে মানুষ প্রজাতি শেষ হয়ে যাবে! এমনকি প্রাণ হারাবে পৃথিবীর অন্যান্য প্রাণী ও উদ্ভিদ। পৃথিবীকে মহাবিপদ থেকে উদ্ধার করতে এখনই অভিযান শুরু করা দরকার।

চলবে...

আরও পড়ুন