রকি বিচে কোথাও কেউ নেই

আঁকা: আরাফাত করিম

কিশোরের হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেল। বালিশের পাশ থেকে মোবাইলটা টেনে দেখে ৪টার এদিক-ওদিক। অন্যদের কথা বাদ, স্বয়ং মেরিচাচীও এখনো ঘুমাচ্ছেন।

জেগে ওঠার কারণ খুঁজতে জানালা দিয়ে বাইরে তাকাল তিন গোয়েন্দা প্রধান পাশা স্যালভেজ ইয়ার্ড অন্ধকারে ডুবে আছে। রাস্তার লাইটের আবছা আলোয় ওয়ার্কশপের আদল বোঝা গেলেও হেডকোয়ার্টারের দিশা পাওয়া যায় না।

না, রাস্তার দিক থেকে কোনো শব্দ আসছে না। ইয়ার্ডেও সন্দেহজনক কিছুর আলামত নেই যাতে ঘুম ভাঙবে। একটু হতাশই হলো কিশোর।

এবারের বন্ধটা পুরো মাঠে মারা গেছে। হ্যাঁ, ছুটির প্রথম কদিন গোবেল বিচে কাটিয়ে এসেছে মুসা-রবিনের সঙ্গে। জিনা ও রাফির সঙ্গে গোবেল দ্বীপেও দুর্দান্ত পিকনিক করেছে। কেরি আন্টির দুর্দান্ত রান্না আর পারকার আঙ্কেলের বেখেয়ালি আচরণে দারুণ সময় কেটেছে, কিন্তু কোনো রহস্য এসে ধরা দেয়নি।

আরও পড়ুন

রকি বিচে ফেরার পরও ভাগ্য ফিরল না। রবিন তার মিউজিক কোম্পানি, মুসা তার গাড়ি মেরামতি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। এই সময়ে বরিস আর রোভারকে দিয়ে হেডকোয়ার্টারের কিছু মেরামতি সাড়িয়ে নিয়েছে কিশোর, কিন্তু সেখানে বসার কোনো সুযোগ আসেনি।

উপায় না দেখে ডেভিড ক্রিস্টোফারের অফিসেও একটা ফোন দিয়েছিল কিশোর। কিন্তু তিনি নেই, একটা মুভির কাজে স্পেনে, ফ্রান্সেও নাকি কাজ আছে। তাই বহুদিন ধরেই রহস্যের গন্ধ নাকে লাগছে না তিন গোয়েন্দার।

আর ঘুম আসবে না বুঝে পুলওভারটা টেনে নিল। ঠান্ডাটা ইদানীং জেঁকে বসেছে। মোবাইলটা নেবে কি নেবে না, এ নিয়ে ভাবল কিছুক্ষণ। পাজামার পকেটে নিয়েই নিল, আর কিছু না হোক টর্চটা কাজে লাগবে।

বাসা থেকে বের হতেই দরজা খোলার শব্দ কানে এল। বরিসের ঘুম জড়ানো কণ্ঠ ভেসে এল, 'কে ওখানে?'

আরও পড়ুন
সেবা প্রকাশনী থেকে ১৯৮৫ সালের আগস্ট মাসে যাত্রা শুরু হয় তিন গোয়েন্দা সিরিজের

'বরিস ভাই, আমি কিশোর।'

'ও তুমি, সব কিছু হোকে?'

'হ্যাঁ ভাই, সব হোকে।'

বরিস চারপাশটা দেখে নিয়ে নিশ্চিত হলো, আসলেই সবকিছু 'হোকে', তারপর আবার রুমে ঢুকে পড়ল।

হাঁটতে হাঁটতে হেডকোয়ার্টারের সামনে চলে আসে কিশোর। দুই সুরঙ্গের মুখটা দেখতে পাচ্ছে। অন্য কেউ দেখে মনে করবে জঞ্জালের অংশ। কিন্তু কিশোরদের বহুবার বাঁচিয়ে দিয়েছে এই পথ। শতচেষ্টাতেও শুটকি টেরি এর হদিস পায়নি।

সেদিকে তাকিয়ে কিশোরের খেয়াল হলো, ওরা তিনজন নিজেদের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে বহুদিন ধরেই, দিন শেষে এখন আর নিয়ম করে ওয়ার্কশপ বা হেডকোয়ার্টারে বসা হয় না।

তবু এমন খরা এর আগে কখনো যায়নি। শুধু এই ছুটি কেন, বহুদিন ধরেই নতুন কোনো রহস্য পাচ্ছে না ওরা। দুনিয়ার সব রহস্য যেন উবে গেছে হঠাৎ। কী হলো সবার? তিন গোয়েন্দার যাত্রা কি তবে শেষ হয়ে যাবে!

ঘরমুখো হবে, এমন সময় টুং করে উঠল মোবাইল। এ সময় আবার কে মেসেজ দিল, ভাবতে ভাবতে ফোন বের করে কিশোর। অবাক হয়ে দেখল, বাংলাদেশ থেকে মেসেজ এসেছে। বড় মামা; তাই ছোট্ট করে লেখা মেসেজ।

'কিশোর, রকিব হাসান আর নেই।'

আরও পড়ুন