আমাদের ক্লাসে পড়ত দুই যমজ ভাই। তাদের নাম ছিল বিটু আর টিটু। আমরা তখনো এবিসিডি শিখিনি। কাজেই ইংরেজি অক্ষর বি আর অঙ্কে ইংরেজিতে টু লিখে যে বিটু লেখা যায়, আর টি লেখার পর ইংরেজিতে টু লিখে যে টিটু লেখা যায়, এই ধারণা তখনো আমাদের মাথায় আসেনি। কারণ, আমরা ভর্তি হয়েছিলাম ক্লাস ওয়ানে।
আমরা ছড়া কাটতাম:
ক্লাস ওয়ান,
ফুলের বাগান।
ক্লাস টু
খায়...
ক্লাস থ্রি
খায় বিড়ি
ক্লাস ফোর
হেডমাস্টারের জুতা চোর।
ক্লাস ফাইভ
গুয়ের পাইপ
ক্লাস সিক্স
খায় কিসমিস
ক্লাস সেভেন
বিয়া করবেন।
এসবের মধ্যে ক্লাস সিক্স আর ক্লাস ওয়ান–সম্পর্কিত ছড়া দুটো ভালো, বাকিগুলা বেশ অপমানসূচক।
আমরা পড়তাম মুক্তাগাছা পিটিআই স্কুলে।
আমার আব্বা এই পিটিআইয়ের অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপারিনটেনডেন্ট। আমরা থাকতাম স্কুলের ভেতরে। চারতলা একটা ভবনের দোতলায় ছিল আমাদের কোয়ার্টার।
তার আগে আমরা ছিলাম রংপুর। রংপুর থেকে মুক্তাগাছা যেতে হবে। শুনে আমি ভাবতাম, মুক্তাগাছা য় অনেক মুক্তার গাছ আছে। গাছে গাছে মুক্তা ধরে আছে। আমার বয়স তখন পাঁচ। চোখ বন্ধ করে আমি দেখতাম, সাদা সাদা মুক্তা গাছের ডালপালা থেকে ঝুলে ঝুলে আছে।
মুক্তাগাছা আসার পর দেখা গেল, কল্পনার সঙ্গে কিছুই মিলছে না। মুক্তাগাছা একটা খুব সুন্দর জায়গা। পিটিআইয়ের বিশাল মাঠে চোরকাঁটা ভরা। কাঁটাতারের বেড়ার ধারে ধারে ফণীমনসা। ফণীমনসার চেয়ে ছোট আরও কতগুলো নীলাভ সবুজ পাতার কাঁটাগাছ। সেই গাছে হলুদ পাতলা পাপড়ির ফুল ফুটে থাকে থরে থরে। মুক্তার গাছের ফুল আমি ভাবতাম সাদা রঙের হবে। এ ছাড়া, এই গাছের ফুলগুলো আকাশ থেকে ঝুলছে না। হাঁটুসমান গাছের চূড়ায় রোদ্দুরে ঝলমল করছে। তার ওপরে কত যে প্রজাপতি উড়ছে! কালো প্রজাপতিগুলোর পাখাতে সাদা দাগ। কী যে সুন্দর। হলুদ প্রজাপতি যখন গাছে বসে, মনে হয় গাছের ফুল। আর মাঠে মাঠে ফড়িংয়ের হাট বসে। কত যে ফড়িং!
আর আছে সাপ। শাপলাভরা পুকুরে ঢেঁাড়া সাপ মাথা উঁচিয়ে সাঁতার কাটে। মাঠের পায়ে চলার পথে আমাদের পায়ের ওপর দিয়ে সাপ চলে যায়। একদিন আমরা কাঁটাতারের বেড়ার ফাঁক গলে মাঠ পেরিয়ে মুক্তাগাছা বন্দরের দোকানে যাচ্ছি, আমার সঙ্গে আমার সাত বছরের বোন মিতা; মিতাপু চিৎকার করে উঠল, মিঠুন, মিঠুন, সাপ! আমি বলি, কই সাপ। সে বলল, ওই যে তোর পায়ের নিচ দিয়ে চলে গেল!
আমি স্কুলে ভর্তি হলাম ১৯৭১ সালের জানুয়ারি মাসে। আমার মাথায় আম্মা নারকেল তেল মাখিয়ে দিয়েছিলেন। হিমকবরী তেল। আব্বার প্রিয় নারকেল তেল। এর রং ছিল লাল। শীতের সকালে নারকেল তেল বোতলের মধ্যে জমে আছে। সেটাকে দোতলার বারান্দার রোদে রেখেও লাভ হয়নি। আম্মা একটা সিন্টা (পাটখড়ি) বোতলের মধ্যে ঢুকিয়ে তেল বের করে আমার মাথার চুলে মাখিয়ে দিলেন। আমার চিবুক ধরে আম্মা মাথার চুল আঁচড়ে দিলেন। একটা হাফপ্যান্ট, তার ওপরে একটা হাফহাতা শার্ট, তার ওপরে আম্মার হাতে বোনা একটা গোলাপি রঙের সোয়েটার পরিয়ে দেওয়া হলো আমাকে। আমার পায়ে স্পঞ্জের স্যান্ডেল। সকাল দশটার দিকে দোতলার বাসা থেকে নেমে মাঠের ভেতর দিয়ে রোদ্দুর গায়ে মাখাতে মাখাতে চললাম স্কুল বিল্ডিংয়ের দিকে। আজকে আমার ভর্তি পরীক্ষা। মৌখিক পরীক্ষা।
আব্বার হাত ধরে চললাম। মিতাপু আর রিটন ভাই (বয়স ৮) চলল আমার আগে আগে।
মৌখিক পরীক্ষা। আমাকে ডাকা হলো। স্যার বললেন, তোমার নাম কী?
আমি বললাম, মো. মাহমুদুল হক!
তোমার নাম কি তুমি লিখতে পারো?
জি স্যার। পারি।
লেখো।
আমি সামনে রাখা পেনসিল তুলে নিয়ে কাগজে আমার নাম লিখলাম। একটু ভুল হলো। আঙুল থুতু লাগিয়ে পেন্সিলের সেই ভুল দাগ ঘষে ঘষে তুললাম।
এবার শিক্ষক বললেন, ৫ আর ৩ কত হয়?
আমি বললাম, যোগ করব, না বিয়োগ?
শিক্ষক বললেন, যোগ করো।
আমি হাতের আঙুলের দাগ ধরে গুনে গুনে বললাম, আট।
ব্যস, আমি ফার্স্ট হয়ে গেলাম। আমার রোল হলো এক। আব্বার স্কুলে ভর্তি হওয়ার এই ছিল সুবিধা।
স্কুলে আমি ছিলাম শান্তশিষ্ট লক্ষ্মী ধরনের বাচ্চা। সামনের বেঞ্চের এক কোণে বসতাম।
স্যাররা কিছু জিজ্ঞেস করলে হাত তুলতাম।
কিন্তু আমাদের সবচেয়ে বড় কৌতূহল ছিল বিটু আর টিটু। তারা দেখতে হুবহু এক। তারা কাপড়চোপড় পরত এক।
আমার সঙ্গে তাদের খাতির হয়ে গেল। তারা আমার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু।
কিন্তু আমি কোনটা বিটু কোনটা টিটু, তা কখনো আলাদা করতে পারিনি।
বিটু আর টিটুকে নিয়ে আমরা মজা করতাম।
ক্লাস টুয়ের সঙ্গে আমাদের দৌড় প্রতিযোগিতা হচ্ছে। ক্লাস টুয়ের পাঁচটা বাচ্চা দাঁড়িয়েছে একটা দাগের পাশে। ক্লাস ওয়ানের পাঁচজনও দাঁড়াল সেই লাইনে। এবার দৌড়ে মাঠের ওই পাড়ে গিয়ে ওখানে আতাগাছে ঝুলে থাকা আতা পেড়ে নিয়ে আসতে হবে। অনেক বড় মাঠ। মাঠের মাঝখানে জঙ্গল। জঙ্গল পার হয়ে গেলে তারপর আবার মাঠ। মাঠের আরেক কোণে আতাগাছ।
আমরা টিটুকে দাঁড় করালাম শুরুর দাগে। আর বিটু লুকিয়ে থাকল মাঠের মাঝখানের জঙ্গলে। তার হাতে আগে থেকেই আতা দিয়ে রাখা হলো।
রেডি ওয়ান টু থ্রি। দৌড় শুরু হলো। দশটা বাচ্চা দৌড়াচ্ছে। এগারো নম্বরটা জঙ্গলে লুকিয়ে আছে। সবাই দৌড়ে গেল আতাগাছে। ওই আতাগাছে যে কেউ চড়তে পারে। আমিও পারতাম।
জঙ্গলের কাছে টিটু যাওয়া মাত্র বিটু বেরিয়ে দৌড় শুরু করল। এবার টিটু লুকিয়ে রইল জঙ্গলে। বিটু সবার আগে আতাগাছে পৌঁছাল। আতা পাড়ল। তারপর ফিরে আসতে লাগল। জঙ্গলের কাছাকাছি সে যখনই এসেছে, অমনি টিটু বেরিয়ে আগে থেকে রাখা আতা হাতে সবার আগে ফিরে এল। আর বিটু লুকিয়ে রইল জঙ্গলের ভেতরেই।
ক্লাস ওয়ান ফার্স্ট হয়েছে।
ক্লাস ওয়ান,
ফুলের বাগান।
ক্লাস টু
খায়...
ক্লাস টুয়ের ছেলেরা আমাদের মার দিতে চলে এল।
আমরা ক্লাস টু খায়... বলতে বলতে পালিয়ে এলাম।
ক্লাস টুয়ের ছেলেরা ঠিক করল আমাদেরকে মার দেবে। এ জন্য তারা চাকু বানাবে। চাকু বানানোর জন্য তারা ছোট ছোট লোহার টুকরা নিয়ে চলে গেল রেললাইনের ধারে।
মুক্তাগাছায় আমার সবচেয়ে বিস্ময়কর লাগত রেলগাড়ি। কু ঝিকঝিক করতে করতে রেলগাড়ি চলে যেত। কয়লার ইঞ্জিনের রেলগাড়ি। আকাশে ধোঁয়া উড়ত। আর জোরে জোরে বাঁশি বাজাত। হর্ন।
সেই রেললাইনের ওপরে ছোট ছোট লোহার টুকরা রাখল ক্লাস টুয়ের ছেলেরা। রেলগাড়ি চলে গেলে দেখা গেল, লোহার টুকরাগুলো চ্যাপ্টা হয়ে চাকুর আকার নিয়েছে। ক্লাস টু চাকু বানিয়েছে। আমাদের চাকু মারবে।
বিটু আর টিটু ভয় পেয়ে গেল।
বিটু বলল, মিঠুন, এবার কী হবে রে?
আমি বললাম, বুদ্ধি খাটাতে হবে। চল, মিটিং করি।
কিসের মিটিং? কলেজ থেকে বড় বড় ছেলেরা এল। আমাদের ক্লাস থেকে বের করে স্কুল ভবনের সামনের রাস্তায় দাঁড় করাল। আমরা দুই লাইনে দাঁড়ালাম।
এবার স্লোগান উঠল, ভুট্টোর পেটে লাথি মারো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো।
বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো।
বাঁশের লাঠি তৈরি করো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো।
আমরা মিছিল করতে করতে স্কুল ছেড়ে বাইরে চলে এলাম। ডানপাশে ছোট্ট মুক্তাগাছা রেলস্টেশন। লাল রঙের দোতলা বাড়ি। সিগনালের পোস্ট। টেলিগ্রাফের তার।
আমরা পুরো বন্দর চক্কর খেলাম ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো’ বলতে বলতে।
রিটন ভাই বলল, মিঠুন, আমাদেরও লাঠি তৈরি করতে হবে। বাঁশের লাঠি। চল, বাঁশঝাড়ে যেতে হবে।
বাঁশঝাড়টা হাইস্কুলের পেছনে, বিলের ধারে। পথে পথে ফণীমনসা আর নাম না জানা নানা ধরনের গাছগাছালি। একটা গাছ আছে, ছোট ছোট সাদা ফুলের, তারা এটাকে বলে মধুর গাছ। ফুল তুলে পেছনটা মুখে ধরে শুষে নিলে মুখ ভরে যায় মিষ্টি মধুতে। চোরকাঁটার আড়ালে আড়ালে বেজি দৌড়াচ্ছে, মানুষ দেখে হঠাৎ হঠাৎ মাথা উঁচু করে দুপায়ে দাঁড়াচ্ছে। বাঁশঝাড়ের নিচে আনারসের ঝাড়। আনারস পেকে লাল হয়ে আছে। ওই ওপাশে জঙ্গলের মধ্যে কলাগাছে লালমোচা উঁকি দিচ্ছে। রিটন ভাইয়ের হাতে দা। আমি পেছনে পেছনে যাচ্ছি। ভয় ভয় লাগছে। সাপের ভারি উৎপাত। তবে বেজি দেখে কিছুটা আশা জাগছে। যেখানে বেজি আছে, সেখানে সাপের থাকার কথা নয়।
ক্যা বারে, কুটি যাও? হঠাৎ কে যেন কথা কয়ে ওঠে! গা ছমছম করা গাছগাছালি ঢাকা অন্ধকার জঙ্গলের মধ্যে পায়ে চলা সরু পথ। গরুছাগল এই পথে চলে, তার প্রমাণ গোবর ইত্যাদি পথে পড়ে আছে। এখানে কে কথা কয়?
তাকিয়ে দেখলাম আবদুল আলী। সুপারিনটেনডেন্ট সাহেবের গরুর রাখাল। তাকে দেখে ধড়ে জান ফিরে এল। আলীর বয়স ১৪–১৫ হতে পারে।
রিটন ভাই বলল, বাঁশের লাঠি তৈরি করো...
আবদুল বলল, বাংলাদেশ স্বাধীন করো।
রিটন ভাই বলল, তাইলে চলো, বাঁশের লাঠি তৈরি করতে হবে।
আবদুল বলল, চলো।
আবদুল দেখা যাচ্ছে বাঁশ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ। সে বলল, এই বাঁশটাত ভালো লাঠি হবি না। এক ডাঙে লাঠি ভাঙ্গা যাবি। এই বাঁশটাত হবি।
পড়ে থাকা একটা লালচে বাঁশ দেখিয়ে সে বলল।
রিটন ভাই বলল, হ্যাঁ। এইটাতে লাঠি ভালো হবে।
আবদুল বাঁশ কাটতে লাগল। বাঁশ কেটে ঘাড়ে তুলে নিয়ে আমরা মাঠে ফিরে এলাম। আবদুল তিনটা লাঠি বানাল। প্রতিটা লাঠির দৈর্ঘ্য হতে হবে আড়াই হাত।
ডাকবাংলোর মাঠে মিটিং। জনসভা। সবার হাতে হাতে বাঁশের লাঠি। আব্বার হাত ধরে আমরা দুই ভাই আর এক বোন চলে এসেছি ডাকবাংলোর মাঠে। কত যে মানুষ এসেছে! মাইক্রোফোনে বক্তৃতা হচ্ছে। কে যে কী বলছে, আমি ঠিক বুঝতে পারলাম না। কিন্তু যখন স্লোগান উঠল, ‘বাঁশের লাঠি তৈরি করো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো’, আমি বললাম, আমরা বাঁশের লাঠি তৈরি করেছি, তাই না ভাইয়া? রিটন ভাই বলল, হ্যাঁ। আমরা মেপে আড়াই হাত লাঠি তৈরি করেছি, সবাই তো বড় বড় লাঠি এনেছে।
বিটুর হাতে বাংলাদেশের পতাকা। সবুজের মধ্যে লাল। লালের মধ্যে হলুদ।
আমি বলি, ভাইয়া, লালের মধ্যে হলুদ এটা কী?
রিটন ভাই সব জানেন। তিনি বললেন, এটা বাংলার ম্যাপ। আমি ম্যাপ আঁকা শিখব।
বাসায় গিয়ে আম্মাকে বললাম, আম্মা, পতাকা বানিয়ে দেন।
রিটন ভাই বলল, আমি পতাকা এঁকে দিচ্ছি।
রিটন ভাই কাগজে পতাকা আঁকতে বসল। আমিও তাঁকে দেখে পতাকা আঁকতে বসলাম। সবুজ চারকোনা। মধ্যে লাল গোল। তার ভেতরে ম্যাপ আঁকাটা কঠিন।
আম্মা বললেন, হলুদ কাপড় কই পাব? আমাদের বাসায় তো হলুদ কাপড়ের ছাঁট নাই।
আমরা চললাম খলিফা চাচার দোকানে। মুক্তাগাছা বন্দরে খলিফা চাচার দোকান। তিনি পায়ে চাপ দিলে তার সেলাইমেশিনের চাকা ঘোরে। তিনি কাপড় সেলাই করেন। আব্বার লুঙ্গি সেলাই করতে আমরা তার কাছে আসি। আমাদের জামাকাপড় আম্মাই সেলাই করেন।
গিয়ে দেখি, খলিফা চাচা বাংলাদেশের পতাকা সেলাই করছেন। সবাই তার কাছ থেকে পতাকা কিনে নিয়ে যাচ্ছে।
আমাদের টাকা নাই। আমরা পতাকা কিনতে পারব না। আমরা হলুদ কাপড়ের ছাঁট নেব।
চাচা, আপনি কি আমাদের এক টুকরা হলুদ কাপড় দিবেন?
না বাবা। হলুদ কাপড় দিয়া পতাকার মাঝখানের ম্যাপটা বানান লাগে।
দেন না চাচা? রিটন ভাই বললেন।
চাচার মেশিনের চাকা ঘোরে। পটপট শব্দ হয়। তিনি বললেন, হলদা কাপড় দিয়া কী করবা?
বাংলাদেশের পতাকা বানাব।
পতাকা বানাবা? চার আনা পয়সা দ্যাও।
পয়সা তো নাই চাচা।
আচ্ছা, যাও, নিয়া যাও ওই টুকরাটা।
আমরা খুশিতে স্লোগান ধরি: জয় বাংলা। তারপর তাইরে নাইরে না বলে দৌড়াতে দৌড়াতে বাসায় আসি। প্রথমে কাঁটাতারের ফাঁক। তারপর মাঠের মধ্য দিয়ে পায়ে চলা পথ।
রিটন ভাই স্লোগান ধরল:
ভুট্টোর পেটে লাথি মারো
আমি বলি: বাংলাদেশ স্বাধীন করো...
আম্মা পতাকা বানাতে বসলেন। সবুজ শাড়ি কেটে সবুজ জমিন হলো। লাল ব্লাউজ কেটে লাল সূর্য হলো। আর খলিফা চাচার কাছ থেকে আনা হলুদ কাপড়ের মধ্যে ম্যাপ আঁকল রিটন ভাই। পেনসিল দিয়ে। সেটা কাটলেন আম্মা। তারপর তিনি সেলাই করে বানিয়ে ফেললেন একটা বাংলাদেশের পতাকা।
পতাকা নিয়ে আমরা ছুটলাম মাঠে।
এর মধ্যে বিটু এসেছে মাঠে। টিটু এসেছে।
আমরা এখন মিছিল মিছিল খেলব।
তোমার আমার ঠিকানা
পদ্মা মেঘনা যমুনা
বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো
বাংলাদেশ স্বাধীন করো...
বাঁশের লাঠি তৈরি করো
বাংলাদেশ স্বাধীন করো।
আমরা স্কুলের মাঠ ছেড়ে ইট বিছানো বন্দরের রাস্তায় উঠলাম। এই সময় আমাদের সামনে এলেন তমিজ মিয়া। তিনি মুসলিম লীগের নেতা। তার সঙ্গে আরও দুইজন লোক।
তমিজ মিয়া বিটুকে ডাকলেন। এই চ্যাংড়া, ইদিক আসো। পড়াশুনা নাই। বাপ-মা আক্কেল দেয় নাই। তিনি বিটুকে চড় মারলেন।
বিটু ধপাস করে পড়ে গেল।
অমনি তার সামনে এল টিটু।
তমিজ মিয়া চড় তুলেই হাঁ হয়ে গেলেন। যে ছেলেটা পড়ে গেল, সেই ছেলেটা তার সামনে এল কী করে?
তিনি তোতলাতে লাগলেন। এই তোক না হামি মারিনু?
টিটু জানে এই ধরনের পরিস্থিতিতে কী করতে হয়। সে বলল, হামি অর ভূত...
তমিজ মিয়া দৌড় ধরলেন।
তার আগে আগে দৌড়াতে লাগল তার সঙ্গের দুই লোক।
রিটন ভাই দৌড়ে তমিজ মিয়ার লুঙ্গি টেনে ধরল।
তমিজ মিয়ার লুঙ্গি খুলে গেল। তবু তিনি দৌড়াতে লাগলেন।
আমরা চিৎকার করে উঠলাম, জয় বাংলা…