ফুটবলার মেয়েরাও বলে, সূর্য হয়ে ওঠো...

কিশোর আলো হাতে জাতীয় নারী ফুটবল দলের সদস্য সানজিদা আক্তার। গত বছরের ১ অক্টোবর কিশোর আলোর জন্মদিনে ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার কলসিন্দুর গ্রামেপ্রথম আলো

কিশোর আলোর জন্মদিনের এই লেখা আমি লিখছি চীনের হাংজু শহর থেকে। ১৯তম এশিয়ান গেমসে আমরা নারী ফুটবল দল অংশ নিয়েছি। জয়লাভ করতে পারিনি, কিন্তু তাতে আমরা দমছি না। জাপানের কাছে ৮ গোলে হেরেছি, কিন্তু মনে রাখতে হবে, জাপান বিশ্বকাপজয়ী দেশ, ওদের কাছে আর্জেন্টিনার মেয়েরাও ৮ গোলেই হেরেছে। নেপালের সঙ্গেই শুধু আমরা ড্র করতে পেরেছি।

ভিয়েতনামের সঙ্গে ফলটা অন্য রকম হতে পারত। আমরা ভালো খেলেছি, কিন্তু হেরেছি অভিজ্ঞতার অভাবে। সার্ক দেশগুলোর বাইরের মান অর্জন করতে আমাদের আরও পরিশ্রম করতে হবে, আরও পরিকল্পনা নিতে হবে, ভালো প্রশিক্ষণ লাগবে, আমরা বুঝতে পারলাম।

আজ ১ অক্টোবর ২০২৩, কিশোর আলোর দশম জন্মবার্ষিকীর সকালটায় আমাদের দেশে থাকবার কথা।

কিশোর আলোর জন্মদিনে সবাইকে শুভেচ্ছা জানাই। শিশু–কিশোর ছোট ভাইবোনদের বলি, কিশোর আলোর সঙ্গে কিন্তু আমাদের আছে বিশেষ সম্পর্ক। গত বছর এই দিনে আমরা ছিলাম ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার কলসিন্দুর গ্রামে। আর কিশোর আলো তাদের জন্মদিন উদ্‌যাপন করেছিল আমাদের সঙ্গে।

আরও পড়ুন

আমরা গত বছর সাফ ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হয়ে ফিরে এসেছিলাম। ১ অক্টোবরই প্রথম আমরা গ্রামে ফিরতে পেরেছিলাম। কিশোর আলো আমাদের গ্রামে এসেছিল। এসেছিলেন কিশোর আলো সম্পাদক আনিসুল হক। আমরা আমাদের স্কুলের শিশু–কিশোরদের সঙ্গে মিলে কেক কেটেছি। ছোট ছোট শিশু ফুটবলারদের কিশোর আলো উপহারের প্যাকেট দিয়েছিল। শুধু তা–ই নয়, কিশোর আলো কলসিন্দুর গ্রামের নতুন শিশু-কিশোর মেয়ে ফুটবলার এবং প্রশিক্ষকের জন্য বৃত্তি চালু করেছে।

প্রথম আলোর সঙ্গে কলসিন্দুর গ্রামের ফুটবলার মেয়েদের সম্পর্ক অনেক পুরোনো। আমাদের জাতীয় দলের কিশোরী খেলোয়াড়দের প্রথম আলো বৃত্তি দিত। এখন তো আমরা জাতীয় দলেই খেলি। ঢাকায় বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনে থাকি। কিন্তু আমাদের গ্রামের নতুন মেয়েরা এখনো আর্থিক সংকটের বিরুদ্ধে লড়াই করে। ভালো খাবার, প্রশিক্ষণ, খেলার সরঞ্জাম জোগাড় করা আমাদের গ্রামের মেয়েদের জন্য কঠিন। গত বছর কিশোর আলোর জন্মদিনে আমাদের গ্রামে গিয়ে কিশোর আলো কর্তৃপক্ষ ফুটবলার মেয়েদের জন্য বৃত্তির প্রতিশ্রুতি দেয়। আনন্দের কথা, গত এক বছর ৩৩ জন শিক্ষার্থী ও এদের একজন প্রশিক্ষক নিয়মিত বৃত্তি পেয়ে এসেছে। এ জন্য কিশোর আলোকে ধন্যবাদ দিই।

আর কিশোরদের উদ্দেশে বলি, তোমরা কিশোর আলো নিয়মিতভাবে পড়তে পারো। আমরা তো গ্রামের মেয়ে। ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার গ্রামের মেয়ে। সেখান থেকে কঠোর পরিশ্রম আর প্রশিক্ষণের মধ্য দিয়েই আমরা জাতীয় নারী ফুটবল দলে খেলছি। সাফ ফুটবল জিতেছি। আমাদের কথা এখন পাঠ্যপুস্তকে এসেছে। আমাদের গ্রামে বিদ্যুৎ গেছে। আমরা নতুন স্কুল ভবন পেয়েছি। স্কুল সরকারি হচ্ছে।

কিন্তু আমাদের সঙ্গের অনেক মেয়ে তো দুবেলা ঠিকভাবে খেতে পারত না। সেই গ্রামের মেয়ে যদি আজ দেশে-বিদেশে বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে প্রতিনিধিত্ব করতে পারে, তাহলে মানুষের অজেয় কিছু নেই।

প্রথম আলোকে ধন্যবাদ দিই আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য। কিশোর আলোকে ধন্যবাদ দিই কলসিন্দুর গ্রামের ফুটবলারদের জন্য বৃত্তির ব্যবস্থা করার জন্য।

আরেকটা কথা। আমাদের গ্রামের পাশে নেতাই নদ। এই নদে আমরা সেতু চাই। আমাদের মারিয়া মান্দাসহ অনেক খেলোয়াড় এই নদের ওপারে থাকে। বর্ষাকালে এই নদ পার হওয়া কঠিন। খেয়ানৌকা দিয়ে প্রসূতি, বৃদ্ধ, শিশু, রোগীরা চলাচল করতে পারেন না।

কিশোর আলোর জন্মদিনে আবারও সবাইকে শুভেচ্ছা জানাই। কিশোর আলো বলে, আমার পৃথিবী অনেক বড়। ফুটবল খেলতে দেশে–বিদেশে যাই বলে এখন কিছুটা বুঝতে পারি, পৃথিবী আসলে অনেক বড়। শিশু–কিশোরেরা যদি নিয়মিত কিশোর আলো পড়ে, তাহলে তাদের দিগন্তও বড় হবে। আমাদের শিশুরা বড় হয়ে পুরো পৃথিবীকেই জয় করবে। একটা জয় পরের জয়ের আকাঙ্ক্ষা বাড়িয়ে দেয়। কিশোর আলো বলছে—সূর্য হয়ে ওঠো, ইচ্ছেমতো ছোটো।

আমরা, ফুটবলার মেয়েরা কিন্তু এ কথাই বলি। এই রকমই ভাবি। আপনারা সবাই আমাদের জন্য দোয়া করবেন।