আমি অলীক কল্পনা করি

ছোটবেলা থেকেই আমি এমন এক সামাজিক অবস্থার মুখোমুখি হয়েছি, যেখানে কেউ আমার সঙ্গে মিশত না। এ থেকে আমি হয়ে পড়েছি কল্পনাবিলাসী। এখন আমি অলীক কল্পনা করি। ভালো পরিস্থিতির সম্মুখীন হলে এর থেকে ভালো কিছু কল্পনা করি, খারাপের সম্মুখীন হলে অনেক খারাপ কিছু প্রত্যাশা করি। মাঝে কিছু বন্ধুবান্ধব হয়েছিল, অজানা কারণে তারাও সম্পর্ক ছিন্ন করে। এর জন্য মাঝেমধ্যে বন্ধুদের স্বার্থপর মনে হয়, কখনো পরিবার বিশেষত মাকে অপরাধী মনে হয়। শেয়ার করার মতো কেউই নেই। মা-বাবা কিংবা ভাইদের সঙ্গে শেয়ার করলে তারা আমার দোষের প্রতি ইঙ্গিত করে, বিনোদন নেওয়াটাকেও তারা স্রেফ ন্যাকামো মনে করে। এখন আমার কাছে কেউই ভালো নয়, না বন্ধু, না পরিবার। এমনকি সবাই যখন আমায় দোষী সাব্যস্ত করে, তখন মনে হয় আমার জীবন তো এমনই। এর থেকে ভালো পরিস্থিতি কখনো ছিল না। তাই কল্পনা করি, এর থেকে খারাপ পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে, জীবনকে অর্থহীন মনে হয়। মনে হয় আত্মহত্যাই শ্রেয়। কেননা কেউই তো আমার নয়। এমন পরিস্থিতি সামাল দেব কী করে?

কল্পনা বিশ্বাস

উত্তর: প্রথমত মনে রাখতে হবে তোমার মনের এই খারাপ অবস্থাটা কিন্তু একদমই সাময়িক এবং এটা তুমি কাটিয়ে উঠতে পারবে। তোমার কথা অনুসারে বোঝা যাচ্ছে, তোমার চারপাশের অনেকেই তোমার সঙ্গে মিশতে চাচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে শুরুতেই তুমি চেষ্টা করতে পারো এটা খুঁজে বের করার যে তোমার নিজের ভেতরে তুমি কী কী ত্রুটি দেখতে পাচ্ছ। তুমি ধারাবাহিকভাবে এটার একটা তালিকা বানিয়ে ফেলতে পারো। এটা তোমার আচরণ থেকে শুরু করে কথা, কাজ কিংবা যেকোনো প্রকার প্রকাশভঙ্গিও। যেটার প্রভাবে আশপাশের মানুষেরা তোমার প্রতি বিরূপ মনোভাব পোষণ করতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে তুমি সবার প্রতি অতিরিক্ত আবেগ কিংবা নিজের সিদ্ধান্তের জোর খাটানোর চেষ্টা করলেও এমন ফলাফল হতে পারে। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো হয় তোমার বিশ্বাসভাজন কোনো বন্ধু বা কাছের কোনো অভিভাবকের কাছ থেকে এ বিষয়ে পরামর্শ নিতে পারো যে কী কী কারণে সবাই তোমার প্রতি এমন আচরণ করছে। এরপর তোমাকে এই তালিকা অনুসারে ক্রমান্বয়ে ভুলত্রুটিগুলো শুধরে নিতে হবে। এতে তুমি সহজেই এই বিষয়গুলো কাটিয়ে উঠতে পারবে। এর সঙ্গে তোমার ভালো দিকগুলো নির্ণয় করে সেগুলোও চর্চা করা প্রয়োজন।

অন্যদিকে তুমি অভিমান করে তোমার চারপাশের মানুষগুলোর সঙ্গে মেলামেশা যদি বন্ধ করে দাও, তাহলে তা মোটেও কোনো সঠিক সিদ্ধান্ত হবে না। অনেকে তোমার সঙ্গে মিশতে না চাইলেও সে সংখ্যাটা কিন্তু এক শ ভাগ অবশ্যই নয়। হয়তো অনেকে আছে, যাদের সঙ্গে তুমি কোনো কারণে যোগাযোগ রাখোনি।

বরং স্বাভাবিকভাবেই তুমি যদি তোমার চারপাশের মানুষের সঙ্গে কথা বলা বন্ধ করে দাও, সেটা তোমার আত্মবিশ্বাস কমিয়ে দেবে। তোমার উচিত হবে এই মানুষগুলোর সঙ্গে মেশা। কারণ, তাদের সঙ্গে চলতে চলতেই তুমি বুঝতে পারবে তোমার কোনো সমস্যার কারণে তারা তোমাকে এমন উপহাস করত। এ ক্ষেত্রে তুমি সহজেই তোমার ভুলগুলো ঠিক করে নেওয়ার সুযোগ পেয়ে যাবে। এটা তোমাকে তোমার প্রকৃত বন্ধু খুঁজে পেতে সাহায্য করবে।

এ ছাড়া তোমার এই ভুলগুলোর পাশাপাশি কিন্তু তোমার নিজের ভালো দিকগুলোরও একটি তালিকা বানিয়ে ফেলতে পারো। সেটা খুব সামান্য হলেও তোমার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এটা হতে পারে যে তুমি পরোপকারী, এটা হতে পারে তুমি বন্ধুসুলভ কিংবা খুবই সাহায্যপরায়ণ। আমার পরামর্শ হবে তোমার এসব গুণকে আরও বেশি করে পরিচর্যা করা। কেননা এই গুণাবলি আজ পর্যন্ত কারও দৃষ্টিগোচর হয়নি মানে কিন্তু এটা নয় যে ভবিষ্যতেও কেউ লক্ষ করবে না। তাই এই গুণাবলিও তোমাকে তোমার বন্ধু খুঁজে পেতে সাহায্য করতে পারে।

অন্যদিকে তোমার উচিত পরিবারের সঙ্গেও সুসম্পর্ক গড়ে তোলা। পরিবারের সব সদস্যের সঙ্গেও তোমাকে তালে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। আর নিজের মাঝে নেতিবাচক বিষয়গুলো থাকা মানে কিন্তু তুমি খারাপ নও। মানুষ ভালো-মন্দ মিলিয়েই বাস করে। আমাদের প্রয়োজন এই ভালো গুণাবলিকে মন্দগুলোর তুলনায় নিজ চরিত্রে বেশি বলিষ্ঠভাবে ফুটিয়ে তোলা। তাই নিজের ভালো বিষয়গুলোর প্রতি তুমি নজর দাও। মানুষ সেটাকে প্রাধান্য দিয়েই তোমার সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে উত্সাহ বোধ করবে।

আত্মহত্যার চিন্তা ক্রমাগত মাথায় এলে অবশ্যই একজন মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ বা মনোবিদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।

এই বিভাগে তোমরা তোমাদের মানসিক নানা সমস্যা, যা তোমার শিক্ষক, মা-বাবা বা অন্য কাউকে বলতে পারছ না, তা আমাদের লিখে পাঠাও। পাঠানোর ঠিকানা—মনোবন্ধু, কিশোর আলো, ১৯ কারওয়ান বাজার, ঢাকা। ইমেইল করতে পারো [email protected]-এই ঠিকানায়। ইমেইলে পাঠাতে হলে সাবজেক্টে লিখবে - মনোবন্ধু, তারপর তোমার সমস্যাটি ইউনিকোড ফরম্যাটে লিখে পেস্ট করে দেবে মেইলের বডিতে। নাম, বয়স লিখতে ভুলবে না। তোমার সমস্যা বোঝার ক্ষেত্রে এগুলো গুরুত্বপূর্ণ।