খুব লজ্জিত আমি

প্রিয় মনোবন্ধু,

আমার সমস্যা একটু বৃহৎ, তাই আগে থেকে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। আমি নবম শ্রেণিতে পড়ি। ছোটবেলা থেকে চার ভাইবোনের মধ্যে আব্বু আমাকে বেশি ভালোবাসত। অনেক স্বপ্ন দেখত আমাকে নিয়ে। আমি আব্বুর সেই স্বপ্নগুলোর মর্যাদা বুঝতাম। পড়ালেখায় খুব মনোযোগী ছিলাম। ভালোভাবে পড়াশোনা করতাম। যখন আমি জেএসসি পরীক্ষা দিয়ে নবম শ্রেণিতে উঠি, তখন একটা ভুল কাজ করে ফেলেছিলাম। সে ভুল কাজটা সবাই জেনে যায় এবং অনেক অনেক রকম নেগেটিভ কথাও বলে, যা শুনতে আমার খুব সাহস ও ধৈর্য লাগত। আমার আব্বু–আম্মুকেও কত না কথা শুনতে হতো! আব্বু–আম্মুর কাছে নিজেকে অপরাধী মনে হয়। আমাকে এখন আব্বুও বিশ্বাস করে না। শুধু সন্দেহ করে। এখন আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি এবং নিজে নিজে খুব লজ্জিত আমি। নিজেকে অনেকবার বোঝানোর চেষ্টা করি, কিন্তু প্রতিদিন বারবার আম্মু সেই ভুল নিয়ে সব সময় খোঁটা দেয়, অনেক রকম কথা শুনতে হয়। যার জন্য বেঁচে থাকার মনোবল খুব দুর্বল হয়ে পড়েছে। পড়াশোনার ক্ষতি তো হচ্ছেই, সঙ্গে সঙ্গে অমনোযোগীও হয়ে গেছি। নিজের আসন্ন ভবিষ্যৎ নিয়ে সারা দিন ভাবনায় ডুবে থাকি। আম্মুকে অনেকবার বোঝানোর চেষ্টা করি, কথাগুলো না বলতে, কিন্তু আম্মু আব্বুকে বলে, আমি নাকি আরও ওনার মুখে মুখে কথা বলছি। আরও কত কী! তাই চুপই থাকি আমি সব সময়। প্রতিটি মুহূর্ত সন্দেহ করে, বকাবকি করে কারণে–অকারণে। যার ফলে মেজাজটা খিটখিটে হয়ে গেছে। নানা ধরনের মানসিক সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। সে ভুলটাকে অতীত ভেবে ভুলে যেতে চাই অনেকবার। ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যেতে চাই। কিন্তু আম্মুর সেই অত্যাচারের জন্য ভুলতে পারি না। এই সবকিছু থেকে, এই বিষণ্নতার কষ্টময় জীবন থেকে, আম্মুর অত্যাচার থেকে মুক্তি পেতে চাই। প্লিজ, প্লিজ, প্লিজ এর একটা সমাধান বলে দাও।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক

উত্তর: তুমি যখনই বুঝতে পেরেছ যে নবম শ্রেণিতে করা তোমার ‘কাজ’ বা ‘সিদ্ধান্ত’টি ভুল ছিল, তখন সেটা আর তোমার ভুল নয়, সেটা তোমার অভিজ্ঞতা। আর এই অভিজ্ঞতা তোমাকে ভবিষ্যতের যেকোনো ভুল সিদ্ধান্ত বা কাজ থেকে নিশ্চয়ই বিরত রাখবে। এখন তোমার মা–বাবার আচরণগুলো তোমার প্রতি ইতিবাচক হওয়া প্রয়োজন। এই উত্তর তোমার মা–বাবাকে দেখাবে। ওনাদের আমার শ্রদ্ধা আর সম্মান পৌঁছে দেবে। ওনাদের এটা জানাবে যে তুমি ভুল বুঝতে পারার সঙ্গে সঙ্গে তোমার ভুলটি তোমার অভিজ্ঞতায় রূপান্তরিত হয়ে গেছে। এই সময় সেই ভুলের কথা বারবার তোমাকে মনে করিয়ে দিলে তুমি সেই ভুলের বৃত্ত থেকে বের হতে পারবে না। তোমার আত্মমর্যাদাবোধ আর আত্মবিশ্বাস কমে যাবে। এ জন্য ওনাদের পূর্ণ সম্মান দিয়ে জানাবে যে মানুষের এগিয়ে চলা কেবল সামনের দিকে। পুরোনো কথা স্মরণ না করিয়ে তোমার ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বলাই তোমার জন্য উপকার হবে। আর হ্যাঁ, তুমি নিজের লক্ষ্যে অবিচল থেকে এগিয়ে যাও। জীবনের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যৎকে সুন্দর করে তোলো। নেতিবাচক মন্তব্যের প্রতি নজর না দিয়ে সুন্দর সুন্দর চিন্তা করতে থাকো। প্রয়োজনে পরিবারের অন্য কোনো বড় সদস্য বা শিক্ষকের সাহায্য নিয়ে মা-বাবাকে আমার কথাগুলো বুঝিয়ে বলতে পারো।

এই বিভাগে তোমরা তোমাদের মানসিক নানা সমস্যা, যা তোমার শিক্ষক, মা-বাবা বা অন্য কাউকে বলতে পারছ না, তা আমাদের লিখে পাঠাও। পাঠানোর ঠিকানা—মনোবন্ধু, কিশোর আলো, ১৯ কারওয়ান বাজার, ঢাকা। ইমেইল করতে পারো [email protected]-এই ঠিকানায়। ইমেইলে পাঠাতে হলে সাবজেক্টে লিখবে - মনোবন্ধু, তারপর তোমার সমস্যাটি ইউনিকোড ফরম্যাটে লিখে পেস্ট করে দেবে মেইলের বডিতে। নাম, বয়স লিখতে ভুলবে না। তোমার সমস্যা বোঝার ক্ষেত্রে এগুলো গুরুত্বপূর্ণ।