ওষুধ খাওয়ার পরেও এখন ডিপ্রেসড থাকি

প্রিয় মনোবন্ধু,

আমি ১৮ বছর বয়সী একজন ছেলে। একাদশ শ্রেণিতে পড়ি। কুড়িগ্রামে আমার বাসা। আমি আমার মা-বাবা এবং দুই ভাইয়ের সঙ্গে থাকি। আমি পরিবারের বড় ছেলে। প্রায় দেড় বছর ধরে বাইপোলার ডিজঅর্ডারে আক্রান্ত। শুরুতে চিকিৎসা করানোয় অবহেলা এবং নানান সমস্যার কারণে ঠিকভাবে চিকিৎসা চালাতে পারিনি। তাই দেড় বছর ধরে পুরোপুরি সুস্থ হতে পারছি না। এখন আবার চিকিৎসা শুরু করলেও করোনা, বিধিনিষেধের কারণে চিকিৎসকের কাছে যেতে পারছি না। ফলে আমার ওষুধও আর কাজ করছে না। ওষুধ খাওয়ার পরেও এখন ডিপ্রেসড থাকি। তবে ওষুধ না খেলে সমস্যা আরও প্রকট হয়। এক মাস ধরে আবারও ওষুধ খাওয়া শুরু করেছি। এক মাস আগে আমার অবস্থা খুবই ভয়াবহ ছিল। এত ডিপ্রেসড হয়ে যেতাম যা বলে বোঝাতে পারব না। পুরোনো ওষুধ আবার খাওয়ার পর আগের চেয়ে কিছুটা সুস্থ আছি।

আমি নির্দিষ্ট কোনো কারণ, যেমন পরীক্ষা বা প্রেমে ব্যর্থতার কারণে ডিপ্রেশনে ভুগছি না। কোনো কারণ ছাড়াই হঠাৎ ডিপ্রেশন আমার জীবনে আসে এবং আমাকে একদম বদলে ফেলে। অনেক নেতিবাচক ও ইতিবাচক পরিবর্তন আমার মধ্যে আসে। তবে তোমাদের জানানোর কারণ, আমার অসুস্থতা নয়, আমার এক বন্ধুর জন্য সাহায্য চাচ্ছি।

ওর সঙ্গে পরিচয় অনলাইনে। দশম শ্রেণিতে পড়ে। তার সঙ্গে এক বছরের বেশি সময় ধরে বন্ধুত্ব। ওর আর আমার অবস্থা পুরোপুরি এক রকম। পার্থক্য হলো, আমি চিকিৎসা করাতে সক্ষম হলেও সে এটা পারেনি। তার সমস্যাটি কেউ গুরুত্ব সহকারে নেয় না। ফলে সে এত মারাত্মক সমস্যায় থাকা সত্ত্বেও কোনো চিকিৎসা বা সাহায্য ছাড়াই জীবন পার করছে। আমার যেহেতু এ রোগের অভিজ্ঞতা এবং কিছুটা জানা আছে, তাই ওর লক্ষণগুলো শুনে নিশ্চিত যে সে-ও বাইপোলার ডিজঅর্ডারে আক্রান্ত। সে নিজেও এ সম্পর্কে জানে এবং মানে, সে বাইপোলারে আক্রান্ত। সে নিজেকে নিয়ে খুব সিরিয়াস। তার কিছুটা শারীরিক সমস্যা রয়েছে। ডান কানে ওর মেজর অপারেশন হয়েছিল। একজন খুবই কাছের বন্ধু ওর সঙ্গে অনেক খারাপ আচরণ করে, যেটা ওর গুরুতর খারাপ স্মৃতিতে রূপান্তরিত হয়। হয়তো এসব কারণ তার বাইপোলারের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারে। আমার বন্ধু বর্তমানে চিকিৎসা করাতে অক্ষম। কিন্তু সুস্থ হতে চায়। প্লিজ, আমাকে কিছু উপায় বলুন, যাতে সে এ সমস্যা থেকে মুক্তি পায়!

উত্তর: প্রথমত, তোমার বন্ধুর বাইপোলার ডিজঅর্ডার আছে কিনা, তা কেবল তোমার লক্ষণ শুনে মিলিয়ে নিয়ে নির্ণয় করা যাবে না। একই লক্ষণ একাধিক রোগের ক্ষেত্রে হতে পারে। তাই তোমার বন্ধুকে অবশ্যই মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের কাছে যেতে হবে। অনলাইনের চেয়ে সরাসরি জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট বা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগবিদ্যা বিভাগ বা কাছের মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মনোরোগবিদ্যা বিভাগে যোগাযোগ করতে হবে। মনে রাখবে, মুখে মুখে শুনে, ধারণা করে বাইপোলার ডিজঅর্ডারের মতো রোগ নির্ণয় করা যাবে না। আর বাইপোলার ডিসঅর্ডারের মূল চিকিৎসা ওষুধ ও নিয়মিত ফলোআপ। তাই তুমি ও তোমার বন্ধু নিয়মিত ফলোআপে থাকবে। ঘরোয়াভাবে ডিপ্রেশন থেকে মুক্ত থাকার জন্য মনের যত্ন নিতে হবে। রাত জাগা বাদ দিতে হবে। কোনো অজুহাতে যেমন পড়ালেখা বা গেম খেলার জন্য রাত জাগা চলবে না। দিনের বেলা সক্রিয় থাকতে হবে। প্রতিদিন ব্যায়াম করতে হবে। শারীরিক খেলাধুলা করতে হবে। সময় করে বন্ধু ও স্বজনদের সঙ্গে কথা বলতে হবে, আড্ডা দিতে হবে। নিয়মিত বই পড়তে হবে। গান শোনা বা গাওয়া মন ভালো রাখতে সাহায্য করে। বাইপোলার ডিজঅর্ডারে যাদের ডিপ্রেশন হয়, তাদের কখনো মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞর মতামত ছাড়া ওষুধ খাওয়া যাবে না। নিয়মিত মনোরোগ বিশেষজ্ঞের ফলোআপে থাকা জরুরি।

এই বিভাগে তোমরা তোমাদের মানসিক নানা সমস্যা, যা তোমার শিক্ষক, মা-বাবা বা অন্য কাউকে বলতে পারছ না, তা আমাদের লিখে পাঠাও। পাঠানোর ঠিকানা—মনোবন্ধু, কিশোর আলো, ১৯ কারওয়ান বাজার, ঢাকা। ইমেইল করতে পারো [email protected]-এই ঠিকানায়। ইমেইলে পাঠাতে হলে সাবজেক্টে লিখবে - মনোবন্ধু, তারপর তোমার সমস্যাটি ইউনিকোড ফরম্যাটে লিখে পেস্ট করে দেবে মেইলের বডিতে। নাম, বয়স লিখতে ভুলবে না। তোমার সমস্যা বোঝার ক্ষেত্রে এগুলো গুরুত্বপূর্ণ।