লাল, সাদা, দেশি, ফার্ম বা হাঁস—কোন ডিম সবচেয়ে পুষ্টিকর
ট্রেনে বা বাসে কোথাও গেলে রাস্তায় হকারের ডাক শোনা যায়। ‘চাই ডিম! গরম ডিম।’ বিক্রেতাদের হাঁকে মনে পড়ে, আরে, পেট তো খালি, একটা ডিম খাওয়াই যায়। তখন আমরা ডিম বিক্রেতাকে প্রশ্ন করে বসি, এটা কিসের ডিম?
ডিম যে পুষ্টিকর, এ তো আমরা সবাই জানি। কিন্তু কোন ডিমটা খাব? লাল না সাদা? দেশি না ফার্মের মুরগির ডিম? মুরগি নাকি হাঁসের ডিম খেলে বেশি পুষ্টি পাব?
আমরা এরই মধ্যে জেনে গেছি, ডিম খুব পুষ্টিকর এক খাবার। সবার প্রিয়। আমরা নিজেরা ডিম খাই, শিশুদের ডিম খাওয়াই। অনেকের বিশ্বাস, ডিম সবার শরীরের পুষ্টির জন্য খুব প্রয়োজনীয়। পুষ্টিবিদেরাও সে কথা স্বীকার করেন। তবে কোন ডিম স্বাস্থ্যের জন্য ভালো, তা নিয়ে অনেকের মনে অনেক প্রশ্ন রয়েছে।
কারও মতে, লাল ডিমে পুষ্টি বেশি, সাদা ডিমে কম। আবার কেউ মনে করেন, দেশি ডিম খাওয়া ভালো। আবার কারও মতে, মুরগির ডিম ভালো, হাঁসের ডিম খাওয়া ভালো নয়। চলো আমরা এসব প্রশ্নের উত্তর জানার চেষ্টা করি।
লাল না সাদা, কোন ডিম বেশি খাব
আমাদের দেশে কোন কোন জায়গায় মুরগির লাল ডিমের দাম একটু বেশি। কারণ, অনেকের ধারণা, লাল ডিমে পুষ্টি বেশি। আসলে কি তা–ই? উত্তর হলো, ধারণাটা ভুল! গবেষকদের মতে, দুই ধরনের ডিমের পুষ্টিমান প্রায় এক। এখন প্রশ্ন হলো ডিম লাল বা সাদা হয় কেন? মুরগির ডিমের রং মুরগির রঙের কারণে হয়। যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীরা বেশ কয়েকটি গবেষণায় আবিষ্কার করেছেন, সাদা পাখনা ও সাদা কানের মুরগি সাধারণত সাদা ডিম দেয়। আর বাদামি বা লাল পাখনাওয়ালা ও লাল কানের মুরগি বাদামি বা লাল রঙের ডিম দিয়ে থাকে।
তবে পুরো বিষয় জেনেটিক কারণে ঘটে। আমাদের দেশে ডিমের জন্য যেসব লেয়ার মুরগি পালন করা হয়, সেগুলোর বেশির ভাগ লাল রঙের, সে কারণে এদের ডিমও লাল।
ডিমের স্বাদ কিংবা পুষ্টিমান ডিমের রঙের ওপর নির্ভর করে না। লাল বা সাদা ডিমের পুষ্টিমানে কোনো পার্থক্য নেই। তাই যেকোনো রঙের ডিম খেতে মানা নেই। এর জন্য বেশি দাম দিয়ে বিশেষ রঙের ডিম কেনারও কোনো দরকার নেই।
দেশি না ফার্মের মুরগির ডিম
দেশি মুরগি ও ফার্মের মুরগির ডিমে পুষ্টিমানের ধরন আলাদা। আর এটা আলাদা হওয়ার কারণ হচ্ছে উভয়ের খাবার। ফার্মের ডিমে কোনো সমস্যা নেই, সমস্যা হচ্ছে ফার্মের মুরগির খাবারে।
দেশি মুরগিকে সাধারণত আলাদা কোনো ফিড বা বাজারের খাবার দেওয়া হয় না। মুরগি নিজে বাড়ির আশপাশে চরে বেড়ায়। অন্যদিকে ফার্মের মুরগিকে যে খাবার দেওয়া হয়, সেগুলোর কোন কোন খাবারে অ্যান্টিবায়োটিক বা হরমোন থাকে। এসব খাবারের কারণে কোনো কোনো ফার্মের মুরগির ডিম স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। তা না হলে দেশি মুরগির ডিম ও ফার্মের মুরগির ডিম—দুটোই পুষ্টিকর। এ ক্ষেত্রে ডিমের আকার যত বড় হবে, সেটার পুষ্টিমানও বেশি হবে।
দেশি মুরগির ডিমে ওমেগা–থ্রি, ফ্যাটি অ্যাসিডের পরিমাণ ফার্মের মুরগির চেয়ে বেশি। তবে আবার দেশি মুরগির ডিম আকারে ছোট আর দামেও বেশি। সেই সঙ্গে দেশি মুরগির ডিম বাজারে সহজে মেলে না।
তাই দেশি মুরগির ডিম পেলে ভালো, না পেলেও ক্ষতি নেই। বিশেষ করে যদি ফার্মের মুরগির ডিম কোনো বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কেনা যায়। কোনো প্রতিষ্ঠান যদি এই নিশ্চয়তা দিতে পারে যে তারা মুরগিকে কোনো ক্ষতিকারক ফিড বা খাবার দেয় না, তাহলে সেটা সবচেয়ে ভালো।
ফার্মের ডিম বিক্রি করে, এমন অনেক প্রতিষ্ঠানের দাবি অনুসারে তাদের ডিমে ওমেগা–থ্রির পরিমাণ বেশি থাকে। সে ক্ষেত্রে বিশ্বস্ততা বড় একটি বিষয়।
হাঁস না মুরগি
দুটোর পুষ্টিমান খুব কাছাকাছি হলেও গবেষকদের হিসেবে হাঁসের ডিম পুষ্টিমানে মুরগির ডিমের চেয়ে সামান্য এগিয়ে। হাঁসের ডিমে ভিটামিন এ, ভিটামিন ডি ও ওমেগা–থ্রি, ফ্যাটি অ্যাসিড মুরগির ডিমের চেয়ে খানিকটা বেশি। সে কারণে হাসের ডিম খাওয়া ভালো। কিন্তু মুরগির ডিমের পুষ্টিও কম নয়। আমাদের দেশে হাঁসের ডিমের দাম বেশি, আবার সহজে মেলে না। আবার হাঁসের ডিমের গন্ধ অনেকের পছন্দ নয়।
অনেকের ধারণা, হাঁসের ডিম প্রেশার বাড়ায়। আধুনিক গবেষণায় এখন পর্যন্ত বিষয়টি প্রমাণিত নয়। তারপরও অতিরিক্ত ডিম খেলে শারীরিক সমস্যা হতে পারে।
তাহলে দিনে কয়টা ডিম খাব
অস্ট্রেলিয়ার গবেষকেরা দেখেছেন, সাধারণত একজন প্রাপ্তবয়স্ক ও সুস্থ মানুষ দিনে তিনটা পর্যন্ত ডিম খেতে পারেন। তবে তাঁরা সতর্ক করে দিয়েছেন, যাঁদের হার্টের সমস্যা কিংবা কোলেস্টেরল বেশি, তাঁরা দিনে একটি করে সপ্তাহে সাতটি ডিম খেতে পারেন।
সাদা অংশ না কুসুম
ডিম সেদ্ধ বা ভাজি যেভাবে খাই না কেন, আমরা আস্ত ডিমটাই খেতে চাই। তবে ওপরের কথা অনুসারে যাঁদের হার্টের সমস্যা আছে, তাঁদের জন্য ডিমের কুসুম খাওয়া ঠিক নয়। কারণ, কুসুমে কোলেস্টেরল থাকে।