মোমো, ডাম্পলিং, ডিম সাম—দেখতে প্রায় এক হলেও নাম ভিন্ন কেন
চার বন্ধু মিলে রেস্তোরাঁয় খেতে বসেছে। তিন বন্ধু অর্ডার দিয়েছে মোমো, ডাম্পলিং আর ডিম সাম। চতুর্থ বন্ধুটি কিছু অর্ডার দেয়নি। কারণ, তিন বন্ধুর প্লেট থেকেই খাবার খাওয়ার চিন্তা তার। খাবার টেবিলে আসার পর চারজনই অবাক। একে অপরের দিকে তাকিয়ে বলছে, ‘তিনটা খাবার না অর্ডার দেওয়া হলো! তিনটা প্লেটের খাবার তো দেখতে প্রায় একই রকম, শুধু আকৃতি ভিন্ন। আলাদা আলাদা নাম হলেও এদের মধ্যে তো কোনো পার্থক্য খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।’ এই সমস্যায় অনেকেই পড়েছে। মোমো, ডাম্পলিং, ডিম সাম খেতে গিয়ে দেখা গেছে এগুলো প্রায় একই রকম। তবু নাম ভিন্ন কেন?
এগুলো দেখতে একই রকম মনে হলেও এদের উৎপত্তি, ইতিহাস আর পরিবেশনের ধরনে আছে ভিন্নতা। এরা সবাই একই পরিবারের সদস্য, কিন্তু ভিন্ন ভিন্ন নামে পরিচিত।
ডাম্পলিং আসলে কোনো নির্দিষ্ট খাবারের নাম নয়। এটা একটি বড় ক্যাটাগরি। ডাম্পলিং হলো ময়দা বা অন্য কোনো আটার তৈরি নরম খাবার, যার ভেতরে পুর ভরা থাকে। এই পুর হতে পারে মাংস, তোফু, পনির, সবজি, মাছ। ডাম্পলিং সেদ্ধ করা, ভাপানো, ভেজে খাওয়া যায়। ডাম্পলিংয়ের প্রাচীনতম উল্লেখ পাওয়া যায় চীনা পণ্ডিত শু শির লেখায়। যিনি প্রায় ১ হাজার ৭০০ বছর আগে একটি কবিতায় এগুলোর কথা লিখেছিলেন। এ ছাড়া চীনের জিনজিয়াং প্রদেশের তুরফানে প্রত্নতাত্ত্বিক খননে হাজার বছরেরও বেশি পুরোনো সংরক্ষিত ডাম্পলিং পাওয়া গেছে।
বিশ্বের প্রায় সব দেশেই এ ধরনের খাবার পাওয়া যায়; কিন্তু নাম ভিন্ন। যেমন ইতালিতে একে বলা হয় রাভিওলি (Ravioli), পোল্যান্ডে পিয়েরোগি (Pierogi), চীনে জিয়াওজি (Jiaozi), পশ্চিম আফ্রিকায় ব্যাঙ্কু ও কেনকি, আফগানিস্তানে মানতু, রাশিয়ায় পেলমেনি নামে পরিচিত।
আর মোমো হলো ডাম্পলিংয়েরই একটি আঞ্চলিক সংস্করণ। এর উৎপত্তি তিব্বত ও নেপালে। মোমো শব্দটি এসেছে তিব্বতি শব্দ ‘মগ মগ’ থেকে। ধীরে ধীরে এটি দার্জিলিং, সিকিম ও ভুটানের মতো হিমালয়ের কোলঘেঁষা অঞ্চলে খুবই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। মোমোর ডো বা বাইরের অংশটি তুলনামূলকভাবে মোটা হয়। এর ভেতরে থাকে মাংসের কিমা বা সবজির পুর, যা মসলা দিয়ে তৈরি করা হয়। মোমো সাধারণত ভাপানো বা ভেজে পরিবেশন করা হয়। এর সঙ্গে থাকে ঝাল চাটনি বা সস। মোমো ওই সব অঞ্চলের মানুষের কাছে আড্ডা দেওয়ার সময়ের স্ন্যাকস।
ডিম সামও একধরনের ডাম্পলিং। তবে এটি একটি বিশেষ খাবার থেকে তৈরি হয়। চীনা ভাষায় ডিম সাম শব্দের অর্থ ‘হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া’। এর শুরুটা হয়েছিল ক্যান্টনিজ সংস্কৃতিতে। এটি সাধারণত সকালের নাশতা বা দুপুরের খাবারে চায়ের সঙ্গে পরিবেশন করা হয়। চায়ের সঙ্গে এই খাবার খাওয়ার পদ্ধতিকে বলা হয় ‘ইয়াম চা’ বা ‘চা পান’। ডিম সামের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের খাবার থাকে। চিংড়ির ডাম্পলিং ‘হা গাউ’, মাংসের ডাম্পলিং ‘সিউ মাই’। ডিম সাম শব্দটি চায়ের সঙ্গে থাকা সেই ছোট ছোট খাবারের আইটেমগুলোকে বোঝাতে ব্যবহৃত হয়।
আমাদের দেশসহ আশপাশের অঞ্চলে মোমো সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় হয়েছে। এর প্রধান কারণ মোমো মূলত একটি স্ট্রিট ফুড হওয়ায় ছোট ছোট দোকানে বা স্টলে এটি সহজেই পাওয়া যায়। আর এর দামও তুলনামূলক কম। পাশাপাশি, আমাদের অঞ্চলের মানুষ ঝাল ও মসলাদার খাবার পছন্দ করে। বিশেষ করে এর সঙ্গে পরিবেশন করা ঝাল চাটনি বা সস আমাদের স্বাদের সঙ্গে দারুণ মানিয়ে গেছে। এসব কারণেই মোমো আমাদের দেশের মানুষের কাছে এত প্রিয় ও সহজলভ্য হয়ে উঠেছে।
মোমো, ডাম্পলিং ও ডিম সাম—এই খাবারগুলোর আসল স্বাদ এবং এদের পেছনের ইতিহাস বুঝতে হলে যেতে হবে সেসব দেশে, যেখানে এদের উৎপত্তি। তবেই এদের প্রকৃত স্বাদ পাওয়া যাবে। বোঝা যাবে কেন এই খাবারগুলো দেখতে প্রায় এক হলেও এদের নাম ভিন্ন।